সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বদলে যাচ্ছে সিনেমার গল্প

আলাউদ্দীন মাজিদ

বদলে যাচ্ছে সিনেমার গল্প

বদলে যাচ্ছে ঢাকাই সিনেমার গল্প। সময়ের পথে হেঁটে নতুনত্বের কাঁধে ভর করে এ বদলের হাওয়া লেগেছে। দর্শক দৃষ্টি আকর্ষণ, জাতীয় পুরস্কার অর্জন ও আন্তর্জাতিক উৎসবে প্রশংসা এবং সম্মাননায় এগিয়ে আছে নতুন গল্পের ছবি। নব্বই দশকের শুরু থেকে আরম্ভ হওয়া এই চিত্র এখনো অব্যাহত আছে। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র নির্মাতা সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড বলেন, উদ্ভট ও অবাস্তব গল্পের পরিবর্তে জীবনের গল্প নিয়ে যেসব ছবি  নির্মাণ হচ্ছে সেগুলো নির্দ্বিধায় দর্শক গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। আসলে আমাদের দেশে মৌলিক ও জীবনধর্মী গল্পের অভাব নেই। দর্শক চলচ্চিত্রে নিজের পারিপার্শ্বিকতাকে দেখতে চায়। আয়নায় আপন চেহারা দেখার মতো যখন ছবিতে নিজেদের চির চেনা জীবনচিত্র খুঁজে পায় তখনই তারা সেই ছবি দেখতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। আর তখনই ছবিটি সফল হয়, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মাননায় ভূষিত হয়। এসব ছবিতে থাকে নিজ দেশের কৃষ্টি ও কালচারের জয়গান।  আর এমন গল্পের ছবি বদলে দিচ্ছে দেশীয় চলচ্চিত্রকে আর আজীবন এই বদলের ধারা অব্যাহত থাকবে। ১৯৯২ সালে নতুন ধারার গল্পের ছবি ‘শঙ্খনীল কারাগার’ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। এরপর টানা ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ থেকে সর্বশেষ ঘোষিত ২০১৫ সালের জাতীয় পুরস্কারে সেরা ছবি ও বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভিন্ন ধারার গল্পের ছবিই সেরার মর্যাদা পেয়ে আসছে। ২০১৩ সালে সেরা ছবিসহ ২৫ ক্যাটাগরিতে ১৭টি পুরস্কার জিতে নেয় গাজী রাকায়েতের ‘মৃত্তিকা মায়া’। ২০১৪ সালের জাতীয় পুরস্কারেও ভিন্নধারার  ছবি মাসুদ পথিকের ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’ শ্রেষ্ঠ ছবি নির্বাচিত হয়। সেরা নির্মাতার পুরস্কার জিতে নেন ভিন্নধারার ছবি ‘মেঘমল্লার’ এর জন্য জাহিদুর রহমান অঞ্জন। এ ছাড়া স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি হিসেবেও ভিন্নধারার ছবি ‘গাড়িওয়ালা’ ২০১৪ সালের জাতীয় পুরস্কারে বিজয়ী হয়েছে।  ২০১৫ সালের জাতীয় পুরস্কারে ২৫ ক্যাটাগরির মধ্যে সেরা ছবিসহ ১৭টি পুরস্কারই দখল করেছে ভিন্নধারার গল্পের চলচ্চিত্র। সেরা ছবি হিসেবে সম্মাননা পায় যৌথভাবে দুটি ছবি। এগুলো হলো—‘বাপজানের বায়স্কোপ’ ও ‘অনিল বাগচীর একদিন’। এ দুই ছবির নির্মাতা যথাক্রমে রিয়াজুল মওলা রিজু ও মোরশেদুল ইসলাম যৌথভাবে সেরা নির্মাতার পুরস্কারও জিতে নিয়েছেন।

প্রথম ভিন্নধারায় নির্মিত ছবি ‘আগামী’ নির্মাণ করেন মোরশেদুল ইসলাম। এটি মুক্তি পায় ১৯৮৪ সালে। ছবিটি সব শ্রেণির দর্শক নজর কাড়ে। এরপর এ ধারার চলচ্চিত্রের সুদিন শুরু হয়। জুনায়েদ হালিম, তানভীর মোকাম্মেল, তারেক মাসুদ, আবু সাইয়্যিদ, তারেক শাহরিয়ার, সৈয়দ সালাউদ্দীন জাকি, মানজারে হাসান মুরাদ, নূরুল আলম আতিক, জাহিদুর রহমান অঞ্জন, সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড, সৈয়দা নিগার বানুর মতো নির্মাতারা এগিয়ে আসেন ভিন্ন ধারার গল্প নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণে। তাদের হাতে ভিন্নধারার গল্পের ছবি সমৃদ্ধ হয়। গড়ে ওঠে ‘প্যারালাল সিনে মুভমেন্ট’ শিরোনামের একটি সংগঠন। পুরস্কার ও আন্তর্জাতিক প্রশংসায় ভিন্নধারার ছবি সিক্ত হয়। এ ক্ষেত্রে সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ডের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়। কারণ তার নির্মিত নাচোলের রানী, গঙ্গাযাত্রা, অন্তর্ধান, প্রতিটি ছবিই দেশ বিদেশে উচ্চশ্রেণির দর্শকের মর্যাদা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মাননায় ভূষিত হয়েছে। ঈদে মুক্তি পাওয়া এই নির্মাতার ‘শেষকথা’ ছবিটিও দর্শক প্রশংসা কুড়িয়েছে। তা ছাড়া সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া-ভুবন মাঝি, জালালের গল্প, অজ্ঞাতনামা, ভয়ংকর সুন্দর, আয়নাবাজি ছবিগুলোর সাফল্য প্রমাণ করে বদলে যাচ্ছে ঢাকাই সিনেমার গল্প। এখন দর্শক অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর বদলে যাওয়া গল্পের ছবি ‘ডুব’ দেখতে।

সমপ্রতি কয়েকটি বিদেশি পত্রিকা বাংলাদেশের তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা ও তাদের নির্মিত চলচ্চিত্রের প্রশংসা করে প্রতিবেদন ছেপেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বলিউড বা হলিউড কিংবা অন্য কোনো দেশের চলচ্চিত্রকে অনুকরণ না করে বাংলাদেশের তরুণ নির্মাতারা গল্প বলার ক্ষেত্রে নিজস্ব ভঙ্গি তৈরি করেছেন। পত্রিকাগুলোর মধ্যে ‘দ্য ইন্টারন্যাশনাল ডেইলি স্ক্রিন’ গত বছরের ২২ নভেম্বর বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ওপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এর শিরোনাম ছিল ‘বাংলা চলচ্চিত্রের পালে নতুন হাওয়া লেগেছে।’ প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের তরুণ নির্মাতারা ভিন্ন আঙ্গিকে গল্প বলছে। ছোট পর্দার বেশ কিছু নির্মাতা এবার বড় পর্দায় দিনবদলের আলো জ্বালাতে শুরু করেছেন। অন্য একটি পত্রিকা ‘দ্য হলিউড রিপোর্টার’ তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, ‘দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নির্মাতাদের মধ্যে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী হতে পারেন আগামী দিনের উল্লেখযোগ্য নির্মাতা।

পত্রিকাগুলোর প্রতিবেদনে তরুণ চলচ্চিত্রকারদেরও প্রশংসা করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের দিনবদলের হাতিয়ার এখন তাদেরই হাতে। সত্যিই তাই। বলতে দ্বিধা নেই নতুনদের ওপর ভর করে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সফলতার পথে হেঁটে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে পরিবর্তন আসছে। বেশ কিছু ভালো চলচ্চিত্র নির্মিত হচ্ছে। যে চলচ্চিত্রগুলো বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে নতুন দিন নিয়ে আসছে। দর্শক আবার প্রেক্ষাগৃহে ফিরছে। ফলে বাণিজ্যিক দিক থেকে জেগে উঠবে চলচ্চিত্র মাধ্যম।

সর্বশেষ খবর