এ দেশের সংগীতাঙ্গনে এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম খুরশীদ আলম। চার শতাধিক চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাক করেছেন তিনি। এখনো নিয়মিত গান গাইছেন বরেণ্য এই সংগীত শিল্পী। সংগীতাঙ্গনে বিশেষ অবদানের জন্য গুণী এই সংগীত ব্যক্তিত্ব আজীবন সম্মাননা পেতে যাচ্ছেন। আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় ‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিতব্য ‘চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস পাওয়ারড আই সেভেন আপ’-এর ১২তম আসরে খুরশীদ আলমের হাতে আজীবন সম্মাননা তুলে দেওয়া হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইজাজ খান স্বপন। তিনিই অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা ও পরিচালনা করছেন। আজীবন সম্মাননা পাওয়া প্রসঙ্গে খুরশীদ আলম বলেন, ‘এমন একটি অনুষ্ঠানে আজীবন সম্মাননা পাওয়া নিঃসন্দেহে খুব আনন্দের বিষয়। আমি চ্যানেল আই পরিবারের প্রতি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। সে সঙ্গে আমাকে আজীবন সম্মাননা দেওয়ার জন্য যারা নির্বাচিত করেছেন তাদের প্রতিও আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, সবাই ভালো থাকবেন।’ ইজাজ খান স্বপন জানান, আগামী ৬ অক্টোবর অ্যাওয়ার্ডস অনুষ্ঠানটি বেলা ২টার সংবাদের পর চ্যানেল আইতে প্রচার হবে। খুরশীদ আলম এমনই একজন কণ্ঠশিল্পী যার গানে এখনো শ্রোতা-দর্শক নিজেদের ভালো লাগা খুঁজে পান। নায়করাজ রাজ্জাকের কণ্ঠে সবচেয়ে জনপ্রিয় পাওয়া গানগুলোর অধিকাংশই খুরশীদ আলমের গাওয়া। এ পর্যন্ত চার শতাধিক চলচ্চিত্রে গান গেয়েছেন বরেণ্য এই সংগীত শিল্পী। দেশের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় কোনো সম্মাননা এখনো না মিললেও তাতে কোনোই দুঃখবোধ নেই খুরশীদ আলমের। কারণ এদেশের কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসা তিনি সংগীত জীবনের শুরু থেকে পেয়েছেন এবং এখনো পাচ্ছেন। আজও যখন চলতি পথে কোথাও কোনো বিপদ হয় তখন সাধারণ মানুষই তার পাশে ছায়ার মতো এসে দাঁড়ায়। হয়তো সংগীত শিল্পী না হলে তিনি সাধারণ মানুষের এই অকৃত্রিম ভালোবাসা পেতেন না। তাই জীবনে কোনো দুঃখবোধ নেই যে পরিবারের ইচ্ছেমতো ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার না হতে পারায়। সংগীত শিল্পী হিসেবে ভীষণ গর্ববোধ করেন খুরশীদ আলম। ১৯৬২-৬৩ সালে ইস্ট পাকিস্তান এডুকেশন উইকে খুরশীদ আলম পরপর দুই বছর রবীন্দ্র সংগীত ও আধুনিক সংগীতে চ্যাম্পিয়ন হন। ১৯৬৭ সালে আজাদ রহমানের সুরে জেবুন্নেসা জামানের লেখা ‘চঞ্চল দু’নয়ন’ ও কবি সিরাজুল ইসলামের ‘তোমার দু’হাত ছুঁয়ে শপথ নিলাম’ দুটি গান বেতারের জন্য রেকর্ড করা হয়। গান দুটি প্রচারের পর পুরো পাকিস্তানে হৈচৈ পড়ে যায়। এর পরপরই সুযোগ মিলল বাবুল চৌধুরীর নির্দেশনায় ‘আগন্তুক’ চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাক করার। আজাদ রহমানের সুরে তারই খুরশীদ আলমের চাচার লেখা ‘বন্দী পাখির মতো মনটা কেঁদে মরে’ গানটি। এই গান নায়করাজ রাজ্জাকের লিপে আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা পায়। এরপর এহতেশামের ‘পীচঢালা পথ’ই আর খানের ‘সাধারণ মেয়ে’ চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাক করেন খুরশীদ আলম। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি খুরশীদ আলমকে। সিনেমায় খুরশীদ আলম সবচেয়ে বেশি গান গেয়েছেন আজাদ রহমানের সুরে। দ্বৈতশিল্পী হিসেবে বেশি পেয়েছেন সাবিনা ইয়াসমিন ও রুনা লায়লাকে।