রবিবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার

হতাশ হয়ে মরে যাওয়ার মতো মেয়ে আমি নই

পান্থ আফজাল

হতাশ হয়ে মরে যাওয়ার মতো মেয়ে আমি নই

মাফিয়া গার্ল জান্নাতুল নাঈম এভ্রিল । ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতার ফলাফল ঘোষণার পর থেকেই তাকে নিয়ে শুরু হয়েছিল নানা বিতর্ক। বিয়ের তথ্য গোপন করার অভিযোগে সুন্দরী প্রতিযোগিতা ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’-এর শিরোপা হারান এই সুন্দরী। এর পর তাকে বাদ দিয়ে নতুন করে ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ ঘোষণা করা হয়।  এই সুন্দরী হাইস্পিড লেডি বাইকারের সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে থাকছে আজকের আলাপন—

 

মাফিয়া গার্ল আর হাইস্পিড লেডি বাইকার নাম কীভাবে হলো?

আমি আসলে অনেক সাহসী ও প্রতিবাদী। এসব কারণে বন্ধুরা আমাকে ‘মাফিয়া গার্ল’ বলে ডাকে। এটা আমার সাহসী ও প্রতিবাদী চরিত্রের স্বীকৃতি। আমি কিন্তু বাংলাদেশের প্রথম হাইস্পিড লেডি বাইক রাইডার। মাত্র ১৪ বছর বয়সেই বাইক চালানো শিখেছি। এর পর আস্তে আস্তে মোটরবাইক চালানো আমার শখে পরিণত হয়। আমি ভারতের প্রথম নারী বাইকার ভিনু পালিওয়ালের রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে চাই। বিশ্বের অন্যতম সেরা নারী বাইক স্টান্টার ক্রিস্টিনা লি বিলিংসের মতো হতে চাই।

 

পড়ালেখার কী অবস্থা?

আমি এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছিলাম। এখন সব ঝামেলা শেষ। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছি।

 

এই যে বিয়ে বিতর্কে মুকুট ও পদবি খোয়ালেন এটা কতটুকু মেনে নিতে পারছেন?

আসলে আমি যে বিবাহিত, এটা কখনই মাথায় আসেনি, অনুভবও করিনি। সবাই বিয়ের জন্য আমাকে দোষী বলেছে। তাই আমি নিজেকে দোষী মেনে আমার মুকুট ও টাইটেলটা জেসিয়াকে হ্যান্ডওভার করে দিয়েছি। বিয়ে হয়েছিল ১৬ বছর বয়সে। বাংলাদেশের আইনে এটিকে বাল্যবিবাহ বলে। যেখানে আমি কারও সঙ্গে সংসারই করিনি, বিয়ের সময়ই সেখান থেকে চলে এসেছি। তাই সেটিকে আমার কাছে বিয়ে বলে মনে হয়নি। আমার স্বপ্ন ছিল নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে নিজের পায়ে দাঁড়ানো।

 

আপনি কি মনে করেন আপনার পরাজয় হয়েছে?

আমি আগেও বলেছিলাম, আমি হেরে যাইনি, বরং এ ঘটনায় পরাজয় হয়েছে বাংলাদেশের আইনের। এখনো তাই বলব। ১৬ বছর বয়সী কোনো মেয়েকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হলে তাকে বিয়ে বলে গণ্য করা যায়? আপনিই বলেন।

 

আপনার বয়স নিয়েও একটি গুজব উঠেছে। এটা কতখানি সত্য?

এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার এক মাসের মধ্যে যে মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়, তার বয়স কীভাবে ২৩ বছর হয়? বয়স প্রমাণের জন্য কাগজপত্র আমি কিন্তু দেখাতেও পারব।

 

আপনাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবাই সরব ছিল। নেগেটিভ-পজিটিভ আলোচনাও হয়েছে কিন্তু

আমাকে নিয়ে অনেকে নেগেটিভ বলছে আবার অনেকে পজিটিভ বলছে। তবে আমাকে অনেকেই সাপোর্ট দিচ্ছে। অনেকেই ইনবক্স করে বা পোস্ট করে বলেছে, ‘তুমি আমাদের কাছে মিস বাংলাদেশ।’ আমার কথা হচ্ছে, চার বছর আগে যখন ফ্যামিলি ছাড়া আমি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতাম, নিজে ইনকাম করে নিজেকে চালাতাম তখন কিন্তু আমার পাশে কেউ ছিল না। তখন কেউ না থাকা সত্ত্বেও আমি এতদূর এসেছি। আজ যদি আমার পাশে কেউ না থাকে তাহলেও আমার কিছু আসবে যাবে না।

 

আপনিও তো সব মেয়ের ভার্জিনিটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন

আমার ভার্জিনিটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তাই আমি বলেছিলাম, আমাকে প্রত্যেকটা মেয়ের ভার্জিনিটি নিশ্চিত করুন। প্রতিযোগিতায় ভার্জিনিটি বলে কিছুই ছিল না। ওখানে উল্লেখ ছিল না ভার্জিনিটি থাকতে হবে। ওখানে বলা ছিল সিঙ্গেল থাকতে হবে। আমি তো সিঙ্গেল ছিলাম তখন। যে জিনিসটাতে আমি কখনই ছিলাম না, তার জন্য কেন আমি সারা জীবন দোষ নেব।

 

গুজব উঠেছিল, আপনি সুইসাইড করেছেন

হা হা হা... এটা গুজবই ছিল। আমি এখনো বেঁচে আছি। সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে চাই। আত্মহত্যা করার মতো কিছু হয়নি। অনেক সংগ্রাম করে, অনেক বাধা পেরিয়ে আমি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছি। সাফল্যের পাশাপাশি ব্যর্থতাতেও আমি অভ্যস্ত। হতাশ হয়ে মরে যাওয়ার মতো মেয়ে আমি নই। মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশে আমার নামটা নাই-ই গেল, কিন্তু আজকে আবারও সবাইকে কথা দিচ্ছি, আমি যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন মেয়েদের অধিকার নিয়ে কাজ করে যাব। জান্নাতুল নাঈম ইজ মোর এনাফ স্ট্রংগার। জান্নাতুল নাঈম এত সহজে হাল ছেড়ে দেওয়ার মতো মেয়ে নয়।

 

শোনলাম বাল্যবিবাহ বন্ধ করার কাজ করবেন?

ঠিকই শুনেছেন। আপাতত ফান্ড খোলার চেষ্টা করছি। এ ফান্ড থেকে বাল্যবিবাহের শিকার মেয়েদের নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য সাহায্য করা হবে। মিডিয়াতে কাজ করে আমি যে পারিশ্রমিক পাব সেটা দিয়ে ফান্ড করব।

 

নতুন মিস ওয়ার্ল্ড জেসিয়া সম্পর্কে কী অভিমত?

বিচারকরা জেসিয়াকে তার যোগ্যতা দেখেই নির্বাচন করেছেন। তাকে অভিনন্দন। আর এ বিষয়ে আমি বেশি কিছু বলতে চাই না।

 

চলচ্চিত্রে কাজ করার অফার আসছে শুনেছি?

এরই মধ্যে আমার সঙ্গে কয়েকজন প্রযোজক যোগাযোগ করেছেন চলচ্চিত্রে কাজ করার জন্য। মজার ব্যাপার হচ্ছে, দেশের শীর্ষ একটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকেও ছবি করার অফার পেয়েছি। তবে আমি এখনো হ্যাঁ কিংবা না কিছুই বলিনি। আর সেই চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে আমাকে শর্ত দেওয়া হয়েছে তাদের সঙ্গে দুই বছরের চুক্তির। আমি তাদের কাছে এক মাস সময় চেয়েছি।

 

চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য আপনি কতটুকু প্রস্তুত?

নাচ, অভিনয় আমি পারি, সেটা এই মাধ্যমে জানা দরকার। আর আমি মনে করি, আমার মধ্যে বাকি সবকিছুই রয়েছে। কিন্তু এ মুহূর্তে আমি মানসিকভাবে প্রস্তুত নই।  তাই আগে মানসিক প্রশান্তি ফিরে পাই, তারপর এসব নিয়ে চিন্তা করব।

 

মিস ওয়ার্ল্ড স্বপ্ন ভেঙে গেল। কিন্তু সামনে অনেক পথচলা বাকি। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে ভাবনা কী?

ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল পথশিশুদের জন্য কিছু একটা করব। তাদের অসহায়ত্ব আমাকে খুব ব্যথিত করে। আমার মতো যেসব মেয়ে আছে যাদের কোনো পরিচয় নেই, যাদের সমাজে কোনো সম্মান দেওয়া হয় না, আমি তাদের জন্য কাজ করব।  যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন আমি এ কাজের মধ্যে থাকতে চাই।

সর্বশেষ খবর