রবিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

খলনায়ক সংকটে ঢাকাই চলচ্চিত্র

আলাউদ্দীন মাজিদ

খলনায়ক সংকটে ঢাকাই চলচ্চিত্র

ঢাকার ছবিতে এখন শক্তিমান খলনায়ক নেই। একটি চলচ্চিত্রের অপরিহার্য চরিত্র হচ্ছে খলনায়ক।

প্রথম ঢাকাই ছবি ‘মুখ ও মুখোশ’-এর প্রধান চরিত্র ছিল খলনায়কের। ডাকাতরূপী এই চরিত্রে অভিনয় করেন ইনাম আহমেদ। খলনায়ক সংকট কাটাতে নির্মাতারা এখন টালিগঞ্জ ও বলিউডের খলনায়কদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। বলিউডের আশীষ বিদ্যার্থী, টালিগঞ্জের রজতাভ দত্তসহ অনেকে এখন ঢাকার ছবিতে অভিনয় করছেন।

ঢাকার প্রথম বাংলা ছবি ‘মুখ ও মুখোশ’-এর খলনায়ক ইনাম আহমেদের পর আসেন ফতেহ লোহানী, কাজী খালেক, মুস্তাফা, তুলিপ, জাভেদ রহিম, ফিরোজ ইফতেখার, মঞ্জুর রাহি, লিটন আখতার, মেহফুজ, খলিল, আহমেদ শরীফ, জুবের আলম, কায়েস, দারাশিকো, রাজু আহমেদ, রাজ, এটিএম শামসুজ্জামান, বাবর, মতিন, মঞ্জুর হোসেন, জসীম, আরিফুল হক, কেরামত মাওলা, মিজু আহমেদ, সিরাজ হায়দার, সাদেক বাচ্চু, জাম্বু, রাজীব, আদিল, নাসির খান, হুমায়ন ফরীদি, ডিপজল, ডন, ড্যানি সিডাক, মিশা সওদাগরসহ অনেকে। বলতে গেলে ষাট থেকে নব্বই দশক পর্যন্ত উল্লেখ করার মতো অনেক শক্তিমান খলনায়ক পাওয়া গেছে ঢাকাই ছবিতে। খলনায়কদের মধ্যে এটিএম শামসুজ্জামান ও মিশা সওদাগরের অভিন্ন মন্তব্য হলো— ‘ছবিতে নায়কের চেয়ে খলনায়কের গুরুত্ব বেশি। কারণ নায়ক প্রেম করবে আর নেচে-গেয়ে বেড়াবে। কিন্তু খলনায়ক ঘটনার মারপ্যাঁচ দিয়ে গল্পকে জটিল করে তোলেন। ছবির গল্পের গতিসঞ্চারে খলনায়কের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ঢাকার ছবিতে যখন খলনায়ক সংকট চরমে তখন নব্বই দশকে নায়ক হয়ে আসা ওমর সানীও একসময় খলনায়ক চরিত্রে অভিনয় করতে শুরু করেন। শক্তিমান নায়ক আলমগীরও বেশ কিছু ছবিতে খলনায়কের ভূমিকায় কাজ করেন। একই সঙ্গে অমিত হাসানও এই চরিত্রে অভিনয় করছেন। ২০০০ সালের শুরু থেকে ঢালিউডে নায়ক-নায়িকা সংকটের মতো খলনায়ক সংকটও দেখা দেয়। হাতে গোনা যে কজন আসেন তাদের  মধ্যে শিবা সানু কিছুটা স্বতন্ত্র অবস্থান করে নিয়েছেন। তনু পাণ্ডে, শিমুল খান, ডি জে সোহেল, টাইগার রবিসহ অনেকে এখন প্রতিষ্ঠা পেতে লড়াই করে যাচ্ছেন। সম্প্রতি ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবিটির মুক্তির পর খলনায়ক চরিত্রে অভিনয়শিল্পী তাসকিন দর্শক নজর কেড়েছেন। তিনি ছবিতে নিয়মিত হলে হয়তো ঢাকাই ছবি একজন শক্তিমান খলঅভিনেতা পাবে। আশির দশকে নতুন মুখের সন্ধানে কার্যক্রমে নায়ক হয়ে আসেন মিশা সওদাগর। পরে খলনায়কের ভূমিকায় প্রতিষ্ঠা পান ও নিয়মিত অভিনয় করে যাচ্ছেন তিনি। ২০০০ সালের শুরু থেকে বলতে গেলে ঢালিউডের ছবি চলছে একমাত্র খলনায়ক মিশা সওদাগরের ওপর ভর করে। চলচ্চিত্রকাররা বলছেন এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে এফডিসিকে আবার নতুন মুখের সন্ধানে কার্যক্রম চালু করতে হবে। নবীন খলঅভিনেতা শিমুল খানের কথায়, ‘আমরা যারা নবীন তাদের খলঅভিনেতার কাজটি নিয়ে একদমই চর্চা নেই। তারা কেউ নিজেদের অভিনয় নিয়ে গবেষণা করছেন না। হুজুগে ফিল্মে আসছেন কাজ করতে। এর ফলে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। নতুন মুখ যারা আসবে তাদের ভালো কাজ করার চর্চাটা  দিতে হবে। তাদের জন্য ভালো চরিত্রও তৈরি করতে হবে।’ চলচ্চিত্র খলনায়ক সংকট নিয়ে চলচ্চিত্র সাংবাদিক ও গবেষক অনুপম হায়াৎ বলেন, বর্তমানে খলঅভিনেতার যে সংকট, তা দূর করতে তরুণ প্রজন্মকেই এগিয়ে আসতে হবে। তাদের মধ্যে নায়ক নয়, খলঅভিনেতা হওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। তাদের বুঝতে হবে, একটি চলচ্চিত্রে খলঅভিনেতার গুরুত্ব সব থেকে বেশি। খল নায়ক ছাড়া চলচ্চিত্র প্রাণ পায় না।

সর্বশেষ খবর