বুধবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা
ইন্টারভিউ

প্রতিষ্ঠানটি আমি ভালোভাবে দাঁড় করাতে চাই

লোকগানের জনপ্রিয় শিল্পী কুদ্দুস বয়াতি। লোকজ গান, বিজ্ঞাপন আর মিউজিক ভিডিও এর গায়ক হয়ে শ্রোতাদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। লোকজ গানকে সংরক্ষণের জন্য নিজ উদ্যোগে কাজ করে যাচ্ছেন এই নিবেদিত প্রাণ বয়াতি। এই লোকশিল্পীর বিভিন্ন উদ্যোগ ও সমসাময়িক ব্যস্ততা নিয়ে আজকের আলাপন—

পান্থ আফজাল

প্রতিষ্ঠানটি আমি ভালোভাবে দাঁড় করাতে চাই

আপনার প্রতিষ্ঠিত ‘কুদ্দু্স বয়াতি ফাউন্ডেশন’, ‘লোকজ ইনস্টিউট’ আর ‘লোকজ স্মৃতি জাদুঘর’ সম্পর্কে জানতে চাই?

  লোকজ গান তো আমাদের ঐতিহ্য-সংস্কৃতির একটা অংশ। এসব গান যেন হারিয়ে না যায়— সেজন্য আমি ‘কুদ্দুস বয়াতি ফাউন্ডেশন’ করেছি। পালাগানসহ বিভিন্ন লোকজ গানের চর্চা এবং ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করার চেষ্টা করছি। ‘কুদ্দুস বয়াতি ফাউন্ডেশন’ এর পক্ষ থেকে লোকজ ইনস্টিউট প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। সঙ্গে আরও থাকবে ‘লোকজ স্মৃতি জাদুঘর’। প্রতিষ্ঠানটি আমি ভালোভাবে দাঁড় করাতে চাই। সরকারি বা ব্যক্তিগতভাবে যে কেউ সাহায্য বা পরামর্শ দিলে কাজটি করতে সুবিধা হবে।

 

এসব উদ্যোগের নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য কী?

আমার সোনার বাংলাদেশের ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য লোকজ সংস্কৃতি। এগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন দেশে স্টেজ শো করতে গেলে দেখি তারা ২০০-৫০০ বছরের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতিকে এখনো বাঁচিয়ে রেখেছে। আমাদেরও লোকজ সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখা খুবই দরকার। তাই আমার ইচ্ছে প্রজন্মকে লোকজ গানে শিক্ষিত করা। বাংলার বিভিন্ন প্রখ্যাত গুণীজনের স্মৃতি সংরক্ষণ করব। সেই জন্য ২০১১ সালে ফাউন্ডেশনের রেজিস্ট্রেশন করেছি। ভবনটির ৪তলা ফাউন্ডেশন দিয়েছি। এক তলার কাজ প্রায় সম্পন্নের দিকে। সারা বছরের সম্বল ৭০ লাখ টাকা দিয়ে এই কাজ শুরু করেছি। তাই সবার সহযোগিতা চাই। কেউ অনুদান দিলে তার নামও কষ্টি পাথরে লেখা থাকবে আশ্বাস দিচ্ছি।

 

‘এক টাকার কুদ্দুস বয়াতি’— কথাটির রহস্য কি?

আমি এক টাকার কুদ্দুস বয়াতি। আমি জীবনে প্রথম পালাগান গেয়ে ১ টাকা পাই। সেটা ৫০ বছর আগেকার কথা। আমাদের গ্রামের আবদুল বারিক আমাকে খুব পছন্দ করতেন। তিনি আমার গানে মুগ্ধ হয়ে সেই সময় ১ টাকা দিয়েছিলেন। আমি যেন কোনো চিন্তা ছাড়া গান চালিয়ে যেতে পারি সেজন্য তিনি আমাকে ৩০ শতাংশ জায়গা দিয়েছিলেন খুবই কম টাকায়।

 

হুমায়ূন আহমেদ আপনাকে খুব ভালোবাসতেন...

অনেক মনে পড়ে স্যারকে। তার জন্যই আমারে সবাই আজ চিনেছে। সে গ্রাম থেকে আমারে তুলে আনছে। হুমায়ূন স্যারের কল্যাণে প্রথমবারের মতো একটা বিজ্ঞাপনে গান গাই ‘এই দিন, দিন না আরও দিন আছে’ শিরোনামে। তারপর থেকেই আমার কষ্ট শেষ হইছে। দেশ-বিদেশে গান করি, কত নাম-সুনাম। সবই স্যারের উছিলায়।

 

মাঝখানে অনেকটাই অন্তরালে চলে গিয়েছিলেন। কারণটা কি?

কষ্ট থেকে। এদেশের একজন শিল্পী হাজার হাজার মানুষকে আনন্দ দেয়। কিন্তু একজন শিল্পী কীভাবে আছেন, কীভাবে তার সংসার চলে—এগুলো দেখার কোনো লোক নেই। দেশের মানুষ শুধু বিনোদন নিতে চায় কিন্তু শিল্পীদের খোঁজ নিতে রাজি নয়।

 

বাইরে এই পর্যন্ত কতগুলো স্টেজ শোতে অংশগ্রহণ করেছেন?

বিশ্বের ৪৯টি দেশে স্টেজ শোতে গান পরিবেশন করেছি।

 

ফকির আলমগীরের সঙ্গে একটা বিতর্কে জড়িয়ে গিয়েছিলেন...

গানটি ছিল ‘আমি এখন ট্যাক্সি চালাই ঢাকা শহরে।’ সুর তো সবাই নিতে পারে। আমার সুর কত লোকেই গাইতেছে। আর আমি তো গানটা ডিজিটালি উপস্থাপন করছি। তার গানের সঙ্গে আমার গানের কোনো বিতর্ক নেই।

 

‘আসো মামা হে’ গানটি সবার মুখে। হঠাৎ এই পরিবর্তন?

খালিদ হাসান মিলুর ছেলে প্রীতম আমারে বলল, একটি নতুন গানের মাধ্যমে তোমাকে বর্তমান প্রজন্মের কাছে পরিচিত করাতে চাই। প্রথমবার শুনেই গানটা করতে রাজি হই। 

 

শুনেছি অনেকেই আপনার নাম বিক্রি করে প্রতারণা করছে?

অনেকেই আমার কাছে আসে, আমাকে বাবা বাবা বলে ডাকে। ৪-৫ দিন আমার সঙ্গে থাকার পর তারা চলে যায়। আমার নাম বলে ধান্দাবাজি, প্রতারণা করে। আমি বলি, যারা আমার নাম বিক্রি করে চলে তারা আমার সন্তান নয়, শিষ্য নয়। আমার সন্তান পঁচিজনই—ইলিয়াস, আলমগীর, আসমুল, জামিউল আর তাসরীফ। আর আমার নাম বলে এমন প্রতারণা করলে সেজন্য আমি দায়ী নই।

 

জীবনে অপ্রাপ্তি কী আছে?

আমি পালাকার— অনেক বছর ধরে মানুষের কথা শুনিয়েছি। গান শুনে দেশের লাখ লাখ ছেলেমেয়ে স্কুলে গিয়েছে। বাবা-মা সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়েছে, বয়স্করা শেষ বয়সে ‘বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্রে’ গিয়েছে। সব জায়গায় সবকিছু হচ্ছে, কিন্তু আমাদের মতো পালাগান শিল্পীদের জন্য কিছু হচ্ছে না।

 

সর্বশেষ খবর