রবিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ছোট পর্দার নির্মাতারা বড় পর্দায় সফল

আলাউদ্দীন মাজিদ

ছোট পর্দার নির্মাতারা বড় পর্দায় সফল

চলচ্চিত্রবোদ্ধাদের মতে, চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে যেমন মূল বা বিকল্প ধারা বলে কিছু নেই তেমনি চলচ্চিত্র এবং নাটকের মধ্যে আপেক্ষিক কোনো বিভাজন করা যাবে না। দৈর্ঘ্য আর আয়োজন হলো এক্ষেত্রে একমাত্র পার্থক্য। এ ছাড়া বড় কোনো অমিল নেই। আর এই মিলের কারণেই ছোট পর্দার নির্মাতারা টিভি নাটকে হস্তসিদ্ধ হয়ে  চলচ্চিত্র নির্মাণে আসছেন এবং সফল হচ্ছেন। বলতে গেলে ২০০০ সালের প্রথম দিক থেকে ছোট পর্দার নির্মাতাদের বড় পর্দায় কাজ করার প্রবণতা বেশ জোরেশোরেই শুরু হয়েছে। আর এক্ষেত্রে সফলতা পাওয়ায় এই ধারাবাহিকতা এখনো বেশ ভালোভাবেই বজায় আছে।

ছোট পর্দার নির্মাতা দীপংকর দীপন এই সফলতার প্রমাণ আবারও দিলেন। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে এই নির্মাতার ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবিটি। এটি দর্শক মহলে সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছে। ছোট পর্দার নির্মাতারা বেশি পরিমাণে এই সফলতার তালিকায় আগেই যুক্ত হয়েছেন— মোস্তফা সরয়ার ফারুকী [‘ব্যাচেলর’, ‘মেড ইন বাংলাদেশ’, থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’ ‘টেলিভিশন’, ‘পিঁপড়াবিদ্যা’] , সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড [ নাচোলের রানী, গঙ্গাযাত্রা, অন্তর্ধান], মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ [ ‘প্রজাপতি’, ‘তারকাঁটা’, ‘সম্রাট’], অনিমেষ আইচ [জিরো ডিগ্রি, ভয়ংকর সুন্দর], তৌকীর আহমেদ [‘অজ্ঞাতনামা’,  ‘দারুচিনি দ্বীপ’, ‘রূপকথার গল্প’, ‘জয়যাত্রা’], গাজী রাকায়েত [‘মৃত্তিকা মায়া’],  রিয়াজুল রিজু [বাপজানের বায়োস্কোপ], অমিতাভ রেজা [আয়নাবাজি], সালাউদ্দিন লাভলু (মোল্লাবাড়ির বউ), গিয়াসউদ্দিন সেলিম (মনপুরা), শিহাব শাহীন (ছুঁয়ে দিলে মন), নূরুল আলম আতিক (ডুবসাঁতার), মেহের আফরোজ শাওন (কৃষ্ণপক্ষ), আবু শাহেদ ইমন (জালালের গল্প), রেদওয়ান রনি (চোরাবালি, আইসক্রিম), তানিয়া আহমেদ (ভালোবাসা এমনই তো হয়), নোমান রবিন (কমনজেন্ডার), প্রসূন রহমান (সুতপার ঠিকানা), খিজির হায়াত খান (জাগো), সোহেল আরমান (এইতো প্রেম), সামিয়া জামান (রানী কুঠির বাকি ইতিহাস, আকাশ কত দূরে), আকরাম খান (ঘাসফুল), তন্ময় তানসেন (রানআউট), শাহরিয়ার নাজিম জয় (প্রার্থনা), সাইফ চন্দন (ছেলেটি আবোল-তাবোল মেয়েটি পাগল পাগল), রওশন আরা নীপা (মহুয়া সুন্দরী), সানিয়াত (অল্প অল্প প্রেমের গল্প), মুরাদ পারভেজ (চন্দ্র গ্রহণ, বৃহন্নলা), আশিকুর রহমান (মুসাফির, গ্যাংস্টার রিটার্নস), নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুল (এক কাপ চা), শাহীন কবির টুটুল (এইতো ভালোবাসা), শাহনেওয়াজ কাকলী (উত্তরের সুর), আলভী আহমেদ (ইউটার্ন), হিমেল আশরাফ (সুলতানা বিবিয়ানা), শফিকুল ইসলাম খান (অচেনা হৃদয়), হাসিবুর রেজা কল্লোল (সত্তা), মিজানুর রহমান লাবু (তুখোড়, নূরু মিয়া ও তার বিউটি ড্রইভার), ইফতেখার আহমেদ ফাহমি (টু বি কন্টিনিউড), শামীম আহমেদ রনি [‘মেন্টাল’, ‘ধ্যাততেরিকি’, ‘বসগিরি’] কলমের জাদুকর খ্যাত প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদও প্রথমে ছোট পর্দায় সফলতার আলো জ্বেলে পরে বড় পর্দা আলোকিত করেছেন। তার আগুনের পরশমণি, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারি, চন্দ্রকথা, আমার আছে জল, ঘেঁটুপুত্র কমলার মতো ছবিগুলোর অনবদ্যতা কখনো ভোলার নয়। স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবির বেশকিছু নির্মাতাও চলচ্চিত্র নির্মাণে মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন— এনামুল করিম নির্ঝর (আহা), সৈকত নাসির (দেশা-দ্য লিডার), জাহিদুর রহিম অঞ্জন (মেঘমল্লার), ফাখরুল আরেফিন খান (ভুবন মাঝি), বুলবুল বিশ্বাস (রাজনীতি)। ছোট পর্দার নির্মাতাদের বেশির ভাগ নির্মাণই জাতীয়, আন্তর্জাতিকসহ নানা পুরস্কারে ভূষিত ও প্রশংসিত হয়েছে।

বর্তমানে আরও যেসব ছোট পর্দার নাটক নির্মাতা বড় পর্দায় আলো জ্বালানোর কাজ নিয়ে এগিয়ে আসছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন ও তাদের কাজ হলো— তানিম রহমান অংশু (আদি, স্বপ্নবাড়ি), রায়হান রাফি (পোড়ামন টু), সাইফুল ইসলাম মান্নু (পুত্র), মাহমুদ দিদার (বিউটি সার্কাস), রাশেদ রাহা (নোলক), মিজানুর রহমান আরিয়ান, আশুতোষ সুজন, মাবরুর রশীদ বান্না প্রমুখ।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্র গবেষক ও সাংবাদিক অনুপম হায়াৎ বলেন, আমাদের দেশে চলচ্চিত্র নির্মাণ শিক্ষার আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা খুব একটা ছিল না, বা এখনো তেমনভাবে গড়ে ওঠেনি। এক্ষেত্রে ছোট পর্দার নির্মাণের মাধ্যমে নির্মাতারা এ বিষয়ে বলতে গেলে সাধারণ ও কারিগরি জ্ঞান লাভ করে নিজেদের বড় পর্দার নির্মাণের জন্য প্রস্তুত এবং উপযুক্তভাবে গড়ে তুলতে পারছেন। বড় পর্দার সফল নির্মাণের ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে এটি একটি ইতিবাচক দিক। আমি চাই চলচ্চিত্রের পূর্ণতার জন্য এই ধারা অব্যাহত থাকুক।

সর্বশেষ খবর