মঙ্গলবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ব্যান্ড মিউজিকের হালচাল

আলী আফতাব

ব্যান্ড মিউজিকের হালচাল

বর্তমানে ব্যান্ডগুলোর সময় কাটছে স্টেজ শো আর টেলিভিশন লাইভ নিয়ে। প্রতিটি অনুষ্ঠানে তাদের পুরনো জনপ্রিয় গানগুলোই নিয়মিত গাইছেন। নতুন গান থেকে বঞ্চিত হতে হতে শ্রোতারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন ব্যান্ডের গান থেকে। এভাবে চলতে থাকলে হারিয়ে যাবে ব্যান্ডসংগীতের ঐতিহ্য— ব্যান্ডের গান সম্পর্কে এমন মন্তব্যই শোনা যায় অনেকের কাছ থেকে। এর কারণ কী? অনুসন্ধানে জানা যায়, ব্যান্ডশিল্পীদের একক ক্যারিয়ার এবং অ্যালবামের দিকে বেশি অমনোযোগী হওয়াই এর মূল কারণ। নিজের একক ক্যারিয়ারের দিকে মনোযোগী হতে গিয়ে ব্যান্ডের প্রতি অমনোযোগী হয়ে পড়েছেন ব্যান্ডের শিল্পীরা। অন্যদিকে ব্যান্ডসংগীতের প্রতি শ্রোতাদের অনীহাও অন্যতম আরেকটি কারণ। এ দুইয়ে মিলে অডিওতে ব্যান্ডের দুর্দিন রীতিমতো লক্ষণীয়। কয়েক বছর আগেও ব্যান্ডের অ্যালবামের জন্য শ্রোতারা মুখিয়ে থাকতেন। কখন প্রিয় ব্যান্ডের নতুন গান শুনবেন কোন কনসার্টে অথবা নতুন কোন অ্যালবামে। সংগীতে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল ব্যান্ডসংগীতের। বিভিন্ন ব্যান্ডের কনসার্টে দর্শকদের মাতামাতি, শ্রোতাদের হৈ-হুল্লোড় নিয়মিত দৃশ্য ছিল। এখন তেমনটা আর চোখে পড়ে না। নতুন প্রজন্মের শ্রোতাদের উপযোগী করে গান তৈরি করলে অবশ্যই ব্যান্ড সংগীত তার আগের অবস্থানে ফিরে আসবে।

বাংলাদেশের ব্যান্ডদল এবং ব্যান্ডের গানের রয়েছে সোনালি অতীত। উচ্চারণ ব্যান্ড দিয়ে পপগুরু আজম খান বাংলাদেশে ব্যান্ডের গানের সূচনা করেন। এরপর ১৯৭২ সালে গঠিত হয়ে এখনো সাফল্যের সঙ্গে পথ চলছে সোলস। ১৯৮০ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় তাদের প্রথম অ্যালবাম ‘সুপার সোলস’।  মাইলস গঠিত হয় ১৯৭৯ সালে। অনেক রদবদল শেষে হামিন আহমেদ, শাফিন আহমেদ এখনো ব্যান্ডের মূল কাণ্ডারি। কিন্তু সম্প্রতি শোনা যাচ্ছে এই ব্যান্ডেও নাকি বাজছে ভাঙনের সুর। ১৯৮৪ সালে গঠিত হয় ‘ওয়ারফেইজ’। কমন, ভাবনা, টিপুকে নিয়ে গঠিত হয়েছিল ব্যান্ডটি। আর আইয়ুব বাচ্চু এলআরবি গঠন করেন ১৯৯২ সালে। এর আগে তিনি ‘সোলস’সহ কয়েকটি ব্যান্ডে ছিলেন। এলআরবি বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘আমাদের’ এবং ‘বিস্ময়’ শিরোনামে প্রথম ডাবল অ্যালবাম প্রকাশ করেন। মাহফুজ আনাম জেমস ১৯৮৮ সালে ‘ফিলিংস’ ব্যান্ডে যোগ দেন। তাদের প্রথম অ্যালবাম ‘স্টেশন রোড’ ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত হয়। ‘জেল থেকে বলছি’ ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত হয়। জেমসের ব্যান্ডের বর্তমান নাম নগরবাউল। ১৯৮৬-এ গঠিত হয় সাইদ হাসান টিপুর ব্যান্ড অবসকিউর। সেলফ টাইটেল বাংলা ব্যান্ডের ইতিহাসে জায়গা করে নেয়। এরপর ১৯৯০ সালে প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় সেলফ টাইটেল। এ ছাড়া রয়েছে ব্যান্ড ‘দলছুট’, বাপ্পা মজুমদার যার মূল কর্ণধার। সঞ্জীব চৌধুরী ছিলেন ব্যান্ডটির সঙ্গে। অনেক শ্রোতাপ্রিয় গান এবং অ্যালবাম উপহার দিয়েছেন শ্রোতাদের। ‘আর্টিসেল’, ‘শূন্য’, ‘চিরকুট’, ‘ব্ল্যাক’, ‘অর্থহীন’, ‘দূরবীন’, ‘আর্ক’, ‘শিরোনামহীন’সহ অনেক ব্যান্ড রয়েছে আমাদের দেশে। এসব ব্যান্ড অনেক শ্রোতাপ্রিয় গান অ্যালবাম উপহার দিয়েছেন। কিন্তু চলতি সময়ে তেমন উল্লেখযোগ্য সংযোজন নেই ব্যান্ডের গানে। এ ছাড়া বাংলা রক মিউজিকের বিপ্লব ঘটতে শুরু করে ৯০-এর শেষের দিকে। তখন নতুন এক ধরনের শ্রোতার আবির্ভাব ঘটে। যারা প্রচলিত ‘আমি, তুমি, তোমাকে’ এ ধরনের শব্দ বিজড়িত গান বাদে অন্য ধরনের গান চাচ্ছিল। তাদের জন্যই আসে ওয়ারফেইজ, অর্থহীন, আর্টিসেল, ক্রিপ্টিক ফেইট, পয়জন গ্রিন, নেমেসিস, ব্ল্যাক। রক মিউজিকের বিপ্লবের বিস্ফোরণ ঘটে ২০০০-এর পর। কিন্তু সেই বিপ্লবের জন্য সিনিয়র ব্যান্ডগুলোর থেকে ৯০-এর পরের ব্যান্ডলোই বেশি ভূমিকা রাখে।

সর্বশেষ খবর