মঙ্গলবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
স্মৃতিতে অমলিন

খুব জেদি ছিলেন তিনি

খায়রুন্নেসা লক্ষ্মী

খুব জেদি ছিলেন তিনি

নায়করাজ রাজ্জাকের সঙ্গে স্ত্রী খায়রুন্নেসা লক্ষ্মী

ছোটবেলা থেকেই নাকি খুব জেদি ছিলেন তিনি। যেটা ভালো মনে করতেন সেটিই করতেন। ১৯৬৪ সালে কলকাতায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় ঢাকায় চলে এলেন। পরিবারের কারও মত ছিল না এতে। ঢাকায় পরিচিত বলতে কেউ নেই। ঢাকায় এসে ফুলবাড়িয়া স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমেছি বড় ছেলে বাপ্পাকে কোলে নিয়ে। সেখান থেকে যাই মিরপুর। মিরপুরের পরিবেশ পছন্দ হলো না। চলে এলাম কমলাপুর এলাকায়।   সেখানে একটা ছোট্ট বাসা ভাড়া নিলেন তিনি। প্রখ্যাত চিত্রপরিচালক আবদুল জব্বার বললেন, তুমি কামাল সাহেবের অ্যাসিস্টেন্ট হিসেবে কাজ কর। এর মধ্যে মজনু নামে একজন নাট্যকর্মীর সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়েছে। তার সহায়তায় মঞ্চে নাটক আর চলচ্চিত্রে অ্যাসিস্টেন্ট হিসেবে কাজ করা। চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জানালেন তিনি অভিনেতা হতে চান। কেউ তার কথায় আগ্রহ দেখালেন না। তখন প্রয়াত রহমান    বেশ ব্যস্ত অভিনেতা। তিনি রাজ্জাকের ইচ্ছের কথা জানতেন। উনি একদিন রাজ্জাককে  বললেন— অ্যাই, তুমি এভাবে ফিল্মের ‘ক্যান’ নিয়ে ঘুরে বেড়াও কেন? ওটা ফেলে দাও। না হলে তুমি জীবনেও অভিনেতা হতে পারবে না। রাজ্জাক  নিরুপায় ভঙ্গিতে বললেন— আমি আসলে কী করব বুঝতে পারছি না। রহমান সাহেব তার ঘাড়ে হাত দিয়ে বললেন, ফিল্মের অ্যাসিস্টেন্টগিরি ছাড়। অভিনয়ের চেষ্টা কর। বাসায় এসে আমাকে সব খুলে বললেন। আমি বললাম, দেখ তোমার যা ভালো মনে হয় তাই কর। সৌভাগ্যক্রমে ‘আখেরি স্টেশন’ নামে একটি ছবিতে ছোট্ট একটা চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে গেলেন। ছোট্ট পার্ট, স্টেশনের কাউন্টারে টিকিট বিক্রি করা। এরপর আর কোনো কাজ পাচ্ছেন না। কলকাতা থেকে যে টাকা-পয়সা নিয়ে এসেছেন তাও শেষ। সংসার কীভাবে চলবে? ঢাকায় থাকব নাকি আবার কলকাতায় চলে যাব? প্রচণ্ড মানসিক সংকট শুরু হলো। কলকাতায় চিঠি লিখলেই টাকা আসবে। কিন্তু তিনি পরিবারের কাউকেই কষ্টের কথা জানাতে চাননি। ওই যে বললাম তার মধ্যে প্রচণ্ড জেদ ছিল। হারবেন না কখনো। একদিন আমাকে বললেন, কী করা যায় বলত। আমি বললাম, না, কলকাতায় ফিরে যাওয়া যাবে না। তুমি হারবে না। তুমি ভেঙে পড় না। আল্লাহ নিশ্চয়ই মুখ তুলে চাইবেন। চেষ্টা করতে থাক। আমি তোমার সঙ্গে আছি। ইতিমধ্যে জহির রায়হানের সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছে। তারপরের কথাতো সবার জানা, জহির রায়হানের ‘বেহুলা’ ছবিটি রাজ্জাকের অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করে দেয়। তার পায়ের নিচে শক্ত মাটি এনে দেয়। চলচ্চিত্র আর সংসারকে ঘিরে ছিল তার সব সুখ। জীবনের শেষ ৫ বছর অসুখের সঙ্গে প্রচণ্ড লড়াই করেছেন। বারে বারে ঘুরে দাঁড়াতে চেয়েছেন। সত্যি বলতে অসুখ-বিসুখকেও হারিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। সুস্থ অবস্থায় পরিবারের সবার হাতে প্রশান্তির ঘুম ঘুমিয়ে পড়লেন। তার জন্য সবাই দোয়া করবেন।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর