মঙ্গলবার, ৬ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

দুঃসময়ে অঞ্জনা...

আলাউদ্দীন মাজিদ

দুঃসময়ে অঞ্জনা...

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বঙ্গবন্ধুর আমন্ত্রণে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। গণভবনে এই অতিথির সম্মানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে শিশু শিল্পী হিসেবে নৃত্য পরিবেশন করেন অঞ্জনা। তার নাচ দেখে মুগ্ধ বঙ্গবন্ধু কোলে তুলে নিলেন অঞ্জনাকে। তার মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করে বললেন, তুমি একদিন বড় শিল্পী হবে। দেশ বিদেশে সুনাম কুড়াবে। কিসিঞ্জারও তার নাচের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বঙ্গবন্ধুর কথা সত্যি হলো। অঞ্জনা সত্যিই এক দিন বড়মাপের শিল্পী হলেন। শুধু নৃত্যশিল্পী নয়, চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী হিসেবেও পেলেন জাতীয় পুরস্কার। ১৯৭৯ সালে এশিয়া মহাদেশের শ্রেষ্ঠ নৃত্যশিল্পীর সম্মান লাভ করেন। মানে বঙ্গবন্ধুর দোয়া তার চলার পথের পাথেয় হলো। সেই ছোট্ট বেলা থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত অঞ্জনা। ১৯৭৮ সালে ‘দস্যু বনহুর’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আসা এবং ১৯৮৭ সালে জাতীয় পুরস্কারে ‘পরীণিতা’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর সম্মান পাওয়া তিন শতাধিক ছবির নায়িকা অঞ্জনার এখন চরম দুঃসময়। ১৯৮৭ সালে শিল্পীর কোটায় রাজউক থেকে তার নামে ৫ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। সেই প্লটটি আজও পাননি তিনি। ১৯৮৭ সালের পর সরকারবিরোধী আন্দোলন চলায় প্লট বরাদ্দ থেমে যায়। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে রাজউকের তৎকালীন চেয়ারম্যান খাদেম তাকে ভূমিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে বলেন। ভূমিমন্ত্রী তার কাছে জানতে চান কোন রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করেন তিনি। জবাবে অঞ্জনা বলেন, আমি রাজনীতি করি না, তবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আমার পাথেয়। একথা শুনে ক্ষেপে উঠেন মন্ত্রী। তাকে বিএনপিতে যোগ দিতে বলেন, না হলে প্লট দেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন। অঞ্জনা মন্ত্রীর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে চরম অপমান করে রুম থেকে বের করে দেওয়া হয় এই অভিনেত্রীকে। এরপর থেকে অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত তার নামে বরাদ্দকৃত প্লটটি পাননি অঞ্জনা। দীর্ঘদিন ধরে চলচ্চিত্রের অবস্থা ভালো না হওয়ায় হাতে কাজ নেই। স্বামী-সন্তান বা উপার্জন সক্ষম কেউ নেই তার। এতে ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া দূরে থাক ঘর ভাড়াও দিতে পারছেন না জাতীয় সম্মান পাওয়া এই অভিনেত্রী। বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করা অঞ্জনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তার নামে রাজউকের বরাদ্দ করা প্রাপ্য প্লটটি পাওয়ার জন্য কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে আকুল আবেদন জানিয়ে বলেন, সংস্কৃতি ও শিল্পীবান্ধব মাননীয় প্রধানমন্ত্রীই পারেন আমাকে এই চরম দুরবস্থা থেকে উদ্ধার করতে। অঞ্জনা দীর্ঘদিন ধরে যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর