শনিবার, ১০ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

গল্পটা এমন না হলেও পারত

আলী আফতাব

গল্পটা এমন না হলেও পারত

আরেফিন রুমি

ঢাকার মোহাম্মদপুরে জন্ম নেওয়া একটি ছেলের নাম আরেফিন রুমি। কলেজে পড়াকালীন একাধিক ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে খেলা এই ছেলেটি একটা সময় ক্রিকেট ছেড়ে মনোনিবেশ করেন সংগীতে। ধ্যান-জ্ঞান সবকিছু দিয়ে শুরু করেন গানের চর্চা। খুব অল্প সময়ে গানের পাশাপাশি সংগীতায়োজনে নিজের জায়গা করে নেন এই শিল্পী। সময়টা খুব বেশিদিনের নয়। ২০১১ সালের কথা। সংগীতশিল্পী হিসেবে আরেফিন রুমির গাওয়া ‘তোমার চোখে আকাশ আমার, চাঁদ উজাড় পূর্ণিমা’ গানটি শ্রোতাদের কানে লেগেছিল। তারপর শ্রোতাদের দিতে থাকেন একের পর এক হিট নাম্বার। ঠিক তখনই তার জীবনে আসে অনন্যা। ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন তাকে। ভালোবাসার ঘর প্রস্ফুটিত করে তাদের সঙ্গে যোগ হলো নতুন অতিথি। নাম তার আরিয়ান। অনন্যা, আরিয়ান এবং নতুন জনপ্রিয়তা— সবকিছু নিয়ে বেশ ভালোই কেটে যাচ্ছিল সুখের দিনগুলো। দিন দিন জনপ্রিয়তা তার বাড়ছিল। অসংখ্য ভক্তের মাঝে নিজেকে হারিয়ে রুমি যেন এক অন্য রুমিতে পরিণত হন। দেশ ছাড়িয়ে সুদূর আমেরিকায়ও যে তার ভক্তকুল তৈরি হয়েছে সেটা অজানাই ছিল। যদি না আমেরিকায় না যেতেন, তাহলে হয়তো সেটা বুঝতে পারতেন না। নিজের ক্যারিয়ারের প্রসার ঘটাতে ছুটে গেলেন আমেরিকায়। তার পরপরই সুখ পাখিটা তাকে ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। একেবারেই তার মনের অজান্তে। ঘুণাক্ষরেও টের পাননি রুমি। দেশের মাটিতে ভালোবাসার ঘরে অনন্যা ও আরিয়ান যে তার প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছে! আমেরিকায় সুখের কোলে মাথা গুঁজে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছিলেন রুমি। আর সেই সুখের নাম কামরুন্নেসা। রুমি যখন কামরুন্নেসার বুকে মাথা গুঁজে ভালোবাসার পরশ বুলাচ্ছেন ঠিক তখন বাংলাদেশের একটি ছোট্ট কুঠুরিতে খেলনা নিয়ে আরিয়ান আধো আধো বুলিতে বাবাকে খুঁজছিল। মা অনন্যা বাবার কানে ফোনের রিনিঝিনি শব্দ তোলার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু সেই শব্দ রুমির কান থেকে হৃদয়ের গহিনে পৌঁছয়নি। ভালোবাসার টানে দেশে ফিরে আসেন কামরুন্নেসা। রুমিও তাকে সাদরে গ্রহণ করেন। একেবারে আপন করে। ঠিক যেখান থেকে ভাগ্যবিধাতা নিয়ন্ত্রণ করেন বিশ্বব্রহ্মাণ্ড। দুই বধূকে নিয়ে রুমি আয়েশে ছবি তোলেন। এক বুক কষ্ট নিয়ে রুমির পাশে হাসিমুখে দাঁড়ালেও অনন্যার হৃদয়টা তখন ছিঁড়ে যাচ্ছিল। তাই অনন্যার ওপর নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ। সহ্য করতে না পেরে অনন্যাও প্রতিবাদী হয়ে উঠেন। মামলা ঠুকে দেন। গ্রেফতার হন রুমি। জেলও খাটেন দুইবার। অবশেষে ডিভোর্স দেন রুমি। মায়ের সঙ্গে দুই ফোঁটা চোখের জল নিয়ে বাবার গৃহ ত্যাগ করে আরিয়ান। বছর গড়িয়ে কামরুন্নেসার কোলজুড়েও আসে নতুন এক অতিথি। নাম তার আয়ান। রুমি-কামরুন্নেসার সুখের সংসারে আয়ানের আগমন অনেকটা বিষাদের বাতাস বয়ে এনেছিল বোধহয়। নয়তো অনন্যার দীর্ঘশ্বাস কিংবা ছোট্ট আরিয়ানের অভিশাপ রুমিকে স্বস্তিতে থাকতে দেয়নি। আমেরিকায় আয়ানকে নিয়ে বেড়াতে গেলে রুমিও একাকী নিজেকে নিয়ে ভাবার সুযোগ পান। তারপর শুরু হয় রুমি-কামরুন্নেসার মধ্যে কিছু ঝামেলা। আমেরিকা থেকে দেশে ফেরেন কামরুন্নেসা। দেশে ফিরে রুমির বাড়িতে আর ঠাঁই হয়নি। ঠাঁই না পেয়ে মুখ খোলেন তিনি। রুমির মায়ের অত্যাচার আর অন্য এক মেয়ের প্রতি রুমির নেশার কথা অকপটে বলেন মিডিয়ায়। কথাটি যখন রুমির কানে পৌঁছে ঠিক তখনই তার সিদ্ধান্ত বদলে যায়। জেলের ঘানি টানার কথা ভুলে যাননি তিনি। আবারও কামরুন্নেসাকে ঘরে তোলেন তিনি। তবে কোনো প্রক্রিয়ায় সেটা এবার আর প্রকাশ করেননি। গল্পটা এখানেই শেষ হয়ে যেতে পারত, কিন্তু না। হঠাৎ করেই ধর্ম পালনে মনোযোগী হয়ে উঠেছেন সংগীতশিল্পী আরেফিন রুমি। নিজেকে অনেকটা পরিবর্তন করেছেন তিনি। চার দেয়ালে একটি ঘরের মধ্যে নিজেকে বন্দী রাখতে শুরু করেন। প্রয়োজন ব্যতীত কারও সঙ্গে কথা বলতেন না তিনি। মাঝে মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন রূপে দেখা মিলত তার।

সবার মুখে একটাই কথা, ‘রুমি কি শেষ পর্যন্ত গানটা ছেড়েই দেবে’। সন্দেহ আরও প্রকট হতে শুরু করে। গত রমজান মাস থেকে আরেফিন রুমি ধর্মীয় রীতি পালনে বেশ মনোযোগী হয়ে ওঠেন। ঢাকা থেকে একটু দূরে নবাবগঞ্জের একটি মাজারে প্রায়ই যান আরেফিন রুমি। একটি লাইভ ভিডিওতে তিনি এ কথা বলেছিলেন। সেখানে সপ্তাহে ৫ দিন যান। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় আরেফিন রুমি বেশ কয়েকটি ছবি পোস্ট করেছেন। যেগুলোতে তাকে আগের চেয়ে ভিন্ন রূপে দেখা গেছে। মুখে দাড়ি ও মাথায় টুপি। হঠাৎ দেখলে অনেকেই হয়তো চিনতে পারবেন না। কথায় আছে ‘যা রটে তা কিছুটা হলেও ঘটে’। হ্যাঁ, আর কখনো গান গাইবেন না জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও সংগীত পরিচালক আরেফিন রুমি। গত ৫ মার্চ তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক হ্যান্ডেলে এ তথ্য নিজেই জানিয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আরেফিন রুমি বলেছেন, ‘জন্মিলে মরিতে হইবে। আশা করছি আমাকে আর কখনো কোথাও গান গাইতে দেখবেন না। কিন্তু আমার তৈরি করা নতুন কিছু গান আছে। ওইগুলো কি করব এখনো জানি না।’  শিল্পীর সৃষ্টিকে সম্মান করা উচিত। তার ব্যক্তিগত জীবন দর্শক-শ্রোতাদের প্রভাবিত করতে পারে কিন্তু তা মুখ্য হওয়া উচিত নয়। আরেফিন রুমির মতো শিল্পী হারিয়ে যাওয়ার জন্য নয়। নতুন নতুন গানের জন্ম দেওয়ার জন্য নয়। তাই গল্পটা এমন না হলেও পারত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর