মঙ্গলবার, ২৬ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

ঢাকায় কলকাতার চার ছবি...

আলাউদ্দীন মাজিদ

ঢাকায় কলকাতার চার ছবি...

ঢাক ঢোল পিটিয়ে বেশ উৎসাহ নিয়ে কলকাতার ছবি আমদানি করতে আমদানিকারকরা মুখিয়ে থাকলেও বাংলাদেশের ছবি কলকাতায় প্রদর্শন করা হয় না

সাফটা চুক্তি ও রপ্তানির বিনিময়ে আমদানি নীতির অধীনে এবার বাংলাদেশে আসছে কলকাতার চারটি ছবি। ছবিগুলো হলো— ভাইজান এলো রে, সুলতান, পিয়া রে ও ফিদা। এসব ছবির বিপরীতে বাংলাদেশের যে চারটি ছবি কলকাতায় যাচ্ছে সেগুলো হলো— পোড়ামন টু, দুলাভাই জিন্দাবাদ, রানা পাগলা ও একটি সিনেমার গল্প। গত বৃহস্পতিবার আমদানি ও রপ্তানিযোগ্য ছবির বাছাই কমিটির এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় এফডিসিতে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবু আল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে এসব ছবিকে আমদানি ও রপ্তানির জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়। বাংলাদেশের শাকিব খান ও কলকাতার শ্রাবন্তী এবং পায়েল অভিনীত ‘ভাইজান এলো রে’ রোমান্টিক-অ্যাকশন কমেডি ধাঁচের ব্যবসা সফল ছবিটি পরিচালনা করেন জয়দ্বীপ মুখার্জি। রাজা চন্দ পরিচালিত ও বাংলাদেশের নায়িকা মিম ও কলকাতার জিৎ অভিনীত ‘সুলতান’ ছবিটিও গত ঈদে কলকাতায় মুক্তি পায়। এটি রোমান্টিক অ্যাকশনধর্মী গল্পে নির্মিত হয়েছে। সোহম- শ্রাবন্তী অভিনীত রোমান্টিক ছবি ‘পিয়া রে’ নির্মাণ করেছেন অভিমন্যু মুখার্জি। রোমান্টিক -অ্যাকশন গল্পের ‘ফিদা’ ছবিতে অভিনয় করেছেন যশ দাশগুপ্ত ও সাঞ্জানা ব্যানার্জি। ছবিটি পরিচালনা করেছেন পথিকৃৎ বসু। এই দুটি ছবিও চলতি বছর কলকাতায় মুক্তি পেয়ে কাঙ্ক্ষিত ব্যবসা করে। এদিকে ঈদে বাংলাদেশে মুক্তি পাওয়া জাজ মাল্টিমিডিয়ার রোমান্টিক-ট্র্যাজেডি গল্পের ছবি ‘পোড়ামন টু’ ছবিটিতে অভিনয় করেছেন সিয়াম ও পূজা। নির্মাণ করেছেন রায়হান রাফি। এটি ব্যবসা সফল হয়েছে। মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত ‘দুলাভাই জিন্দাবাদ’ ছবিতে অভিনয় করেছেন ডিপজল, মৌসুমী, বাপ্পী, মিম প্রমুখ। শামীম আহমেদ রনি পরিচালিত ‘রানা পাগলা’ দ্য মেন্টাল ছবিতে অভিনয় করেছেন শাকিব খান ও তিশা। অভিনেতা আলমগীর নির্মাণ করেছেন ‘একটি সিনেমার গল্প’ ছবিটি। এতে অভিনয় করেছেন আরিফিন শুভ ও কলকাতার ঋতুপর্ণা। ছবিগুলোর আমদানি ও রপ্তানিকারকদের মধ্যে অন্যতম হলো এন ইউ ট্রেডার্স এবং আরাধনা ফিল্মস। বাছাই কমিটির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাশ, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি গুলজার, চিত্র পরিচালক শাহ আলম কিরণ, সাংবাদিক গবেষক অনুপম হায়াৎ, চলচ্চিত্র নির্মাতা অনন্য মামুন, সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান প্রমুখ। এদিকে আমদানি ও রপ্তানিকৃত ছবি নিয়ে স্থানীয় চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে চরম ক্ষোভ রয়েছে। আর এই ক্ষোভের কারণ হচ্ছে এ দেশে বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে উৎসাহ নিয়ে কলকাতার ছবি আমদানি করতে আমদানিকারকরা মুখিয়ে থাকলেও বাংলাদেশের ছবি কলকাতায় প্রদর্শন করা হয় না। এমনকি কলকাতার চলচ্চিত্র ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশি ছবি ক্রয় করতে বা প্রদর্শনে কোনো আগ্রহ দেখান না। অথচ চড়া মূল্যে এখানে কলকাতার ছবি এনে সিংহ ভাগ ক্ষেত্রেই তা ব্যবসায়িকভাবে মার খায়। এতে স্থানীয় ছবির অভাব পূরণ করে সিনেমা হল বাঁচানোর চেষ্টা ভেস্তে যাচ্ছে। কারণ এ দেশের দর্শক কলকাতার ছবি বড় পর্দায় দেখতে চায় না। যার প্রমাণ ইতিমধ্যে বার বার পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের ছবি কলকাতায় রপ্তানি করা হয় শুধু রপ্তানির বিপরীতে আমদানির নিয়ম-নীতি রক্ষা করতে। আর বাংলাদেশি যেসব ছবি কলকাতায় রপ্তানি করা হয় তার শতকরা ৯০ ভাগই মানহীন। সেগুলো এ দেশেই ফ্লপ হয়। বাংলাদেশি ছবি কলকাতায় প্রদর্শন হয় না জেনেই নাকি এমন নিম্নমানের ছবি সেখানে পাঠানো হয়। রপ্তানির বিনিময়ে আমদানির ক্ষেত্রে নিয়ম আছে আগে এ দেশের ছবি কলকাতায় গিয়ে সেন্সর ছাড়পত্র পেয়ে সেখানে

প্রদর্শিত হতে হবে এবং সেন্সর বোর্ড ও সিনেমা হলে প্রদর্শন সংক্রান্ত কাগজপত্র বাংলাদেশে এলেই কলকাতার ছবিটি আমদানি করা যাবে। বাস্তবে এই আইন মানার কোনো বালাই নেই। বাংলাদেশের ছবি সেখানে প্রদর্শন দূরে থাক, সেন্সর বোর্ডে না যাওয়া সত্ত্বেও কলকাতার ছবিটি এখানে এনে প্রদর্শন করা হয়। মানে সংশ্লিষ্ট আইনের প্রতি বরাবরই বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে কলকাতার ছবি এখানে প্রদর্শন করা হচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর