মঙ্গলবার, ১৭ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

নাটকে সিনিয়র শিল্পীদের মূল্যায়ন

নাটকে সিনিয়র শিল্পীদের মূল্যায়ন

দেশে এখন অনেক চ্যানেল, অনেক নাটক নির্মিত হচ্ছে কিন্তু মানসম্মত কাজ তেমন হচ্ছে কি? নাটকে আবার নির্দিষ্ট কিছু অভিনয়শিল্পীর পারিশ্রমিক বেড়েছে ১০ গুণ। কিন্তু সিনিয়র অভিনয়শিল্পীদের পারিশ্রমিক বেড়েছে কতগুণ? অভিযোগ রয়েছে, কিছু তরুণ অপেশাদার নাট্য নির্মাতা, প্রযোজক, বিজ্ঞাপন এজেন্সি বা চ্যানেল মালিক সিনিয়র শিল্পীদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারছেন না। এ সব বিষয়ে নাট্যব্যক্তিত্বদের সঙ্গে কথা বলেছেন - পান্থ আফজাল

 

আবুল হায়াত : সিনিয়র অভিনয়শিল্পীদের প্রতি চরম অবহেলা করা হচ্ছে। শিল্পের প্রতি যাদের ভালোবাসা, তারা কি নাটক বানাচ্ছেন? বানাচ্ছেন মিডিয়া ব্যবসায়ীরা। তারা কম টাকায় নাটক বানানোর চেষ্টা করেন। এসবই আসলে দর্শকদের জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা মাত্র! এখনকার নাটকে ভাঁড়ামি, ২-৩ জন শিল্পীনির্ভর আর গল্প ছাড়া নাটক হচ্ছে। সিনিয়র শিল্পীদের এসব নাটকে কি প্রয়োজন? নাটকে নেই ভাই-বোন,মা-বাবা, শিশু বা দাদা-দাদি। কাজের বেলায় গালভরা কথা বলে! বলতে গেলে তো অনেক ক্ষোভের কথা বলতে হয়! সেদিনকার ছেলেমেয়ে এসেই ৪-৫ গুণ বেশি টাকা নিয়ে যাচ্ছে। নেবে সমস্যা নেই, তবে একটা ভারসাম্য থাকা উচিত।

 

দিলারা জামান : নাটকে মা চরিত্রের অনেক অভিনয় করেছি। তবে বাজেট স্বল্পতা দেখিয়ে নির্মাতারা দিনে দিনে এই চরিত্র কাটছাঁট করছেন। ৩-৪ জনকে নিয়ে নাটক বানাচ্ছেন। সেকালের বাংলা নাটক মানেই ছিল একটি সম্মিলিত কাজ। নির্মাতারা এখন নাটক ২/৩ দিনের মধ্যে শেষ করছেন, যেখানে সিনিয়রশিল্পী সংখ্যা নেই বললেই চলে। সম্মানি দিতে গেলেও সবাই টালবাহানা করে। মূল্যায়ন কমে গেছে। এখন আমাদের মতো সিনিয়রদের কাজ কমে যাচ্ছে।

 

আমিরুল হক চৌধুরী : নাটক সামাজিক জীবনযাপনের অংশ। কিন্তু আমরা সিনিয়র অভিনয়শিল্পীরা সঠিকভাবে সমাদৃত হচ্ছি না। আমরা এখন যা আশা করি বা যা হওয়া দরকার-তা কি হচ্ছে? আমরা যেটুকু সম্মান পাওয়ার যোগ্য তাও পাচ্ছি না। আপনি দেখবেন, দুই-তিনটা সিরিয়াল করে প্রতিবেশী দেশের শিল্পীরা ফ্ল্যাট কিনে। আর আমরা যে সম্মানি পাই তা নিয়ে ওখানকার সবাই হাসাহাসি করে। আমাদের মূল্যায়ন না নির্মাতা, না চ্যানেল মালিক, না প্রযোজক-কেউ সঠিকভাবে করতে পারছে। এটা আসলে বোধের বিষয়। সিনিয়র শিল্পীকে যোগ্য মূল্যায়ন করতে গেলে আরও সম্মানি বাড়ানো উচিত।

 

ডলি জহুর : মূল্যায়ন তো অবশ্যই অনেক কমে গেছে। আমরা সিনিয়র অভিনয়শিল্পীরা একজন জুনিয়রের তুলনায় সম্মানি, মূল্যায়ন কম পাচ্ছি। নাটকে আমাদের চরিত্র বাদ দেওয়া হচ্ছে। আগের তুলনায় কাজও কমে গেছে। কারণ নির্মাতা, প্রযোজক বা চ্যানেল মালিক একটা গত্বাঁধা নিয়মে কাজ করছেন। সম্মানির ক্ষেত্রে সঠিকভাবে মূল্যায়ন পাচ্ছি না। আমরা তো সম্মানি হুট করেই বাড়াতে পারি না। কিন্তু আমাদের কাজের শেষে দিতে গেলেই অনেক টালবাহানা করে। শুধু সিডিউল নিতেই আগের সম্মানিটা দিতে আসে। টোটাল ক্ষেত্রটাই অপরিচ্ছন্ন হয়ে গেছে।

 

মামুনূর রশীদ : (সভাপতি, টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশন) মূল্যায়ন হচ্ছে কই? হচ্ছে না। সিনিয়র অভিনয়শিল্পীরা সবাই বেকার হয়ে পড়েছে। নাটকে বাবা থাকলে মা নেই আবার মা থাকলে বাবা নেই! তাই এসব নাটক দর্শকদের মধ্যে কোনো আবেগ সৃষ্টি করতে পারছে না। চরিত্র কাটছাঁট করা হচ্ছে। সিনিয়র শিল্পীদের সম্মানি, তাদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বাড়ানো এখন অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে।

 

আফরোজা বানু : বাংলাদেশ টেলিভিশনে যখন কাজ করতাম, তখন একটা সিস্টেমের মধ্যে ছিলাম; সেই অনুযায়ী কাজ হতো। এখন তো ওপেন মার্কেট! ব্যক্তিগত যোগাযোগের ওপর কাজ পাওয়া নির্ভর করে। তবে কিছুটা ব্যতিক্রমও আছে। নাটকের পরিধি বাড়া-কমা নির্ভর করে নির্মাতা, প্রযোজক, চ্যানেল মালিক ও বিজ্ঞাপন এজেন্সিদের ইচ্ছের ওপর। মূল্যায়নের আগে বলব-‘পুরো সিস্টেমটাই এখন ভেঙে পড়েছে’। ক্ষেত্রই ঠিক নেই, মূল্যায়নের প্রশ্ন কীভাবে?

 

গাজী রাকায়েত : (সভাপতি, ডিরেক্টরস গিল্ড )

প্রতিষ্ঠিত সিনিয়র অভিনয়শিল্পীদের সম্মানি খুব কম বলা যাবে না; আর সম্মানি দিয়ে মূল্যায়ন হয় না। এখনকার সময়ে যার কাটতি থাকবে তাকে সবাই নেবে। তবে দিনে দিনে সিনিয়র শিল্পীদের চরিত্রগুলো কমে যাচ্ছে। নামমাত্র সিনিয়র চরিত্র রাখা হচ্ছে। একান্নবর্তী চরিত্র কমে যাচ্ছে। সিনিয়র শিল্পীদের প্রতি অবহেলাই করা হচ্ছে। সম্মানেরও ঘাটতি রয়েছে। এখনকার অনেকেই অপেশাদার মনোভাব নিয়ে কাজ করছেন। এসবের সঙ্গে সংগঠনের সম্পৃক্ততাও কম। প্রপার ডিসিপ্লিন এখনো তৈরি হয়নি। সিনিয়র শিল্পীরা কেমন আছে, কি করছে, খোঁজ নেওয়া শিল্পীদের দায়িত্ব।

আহসান হাবিব নাসিম : ( সাধারণ সম্পাদক, অভিনয়শিল্পী সংঘ ) মূল্যায়ন হচ্ছে না, অনেক কমে যাচ্ছে দিনে দিনে। নির্মানের নেপথ্য কারিগরগুলো বার বার পরিবর্তন হচ্ছে। চ্যানেল, প্রযোজক, এজেন্সি এখন নাটকের গল্প,আর্টিষ্ট কি হবে তা নির্দিষ্ট করে দিচ্ছে। সবাই শিল্প চিন্তা না করে হয়ে যাচ্ছে ব্যবসায়ী। নতুন নির্মাতা, প্রযোজকরা নতুনদের নিয়ে কাজ করতে বেশী পছন্দ করে। কারণ নতুনদেরকে তো সহজে নানাভাবে ব্যবহার করা যায়। তাই নাটকের কাজ নাটকের মানুষদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে। বিপনন,এজেন্সির হাতে সবাই জিম্মি।

সর্বশেষ খবর