বৃহস্পতিবার, ২৬ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

বড় পর্দায় নীরব যে নায়িকারা

বড় পর্দায় নীরব যে নায়িকারা

এক সময় রুপালি পর্দা দাপিয়ে বেড়িয়েছেন তারা। দর্শকমনে কাঁপন ধরিয়ে অভিনয় করেছেন। নানা খেতাবেও ভূষিত হয়েছেন। লাভ করেছেন রাষ্ট্রীয় সম্মাননা। আজ তারা চলচ্চিত্রে নেই। অনেকেই চলে গেছেন স্বেচ্ছা নির্বাসনে। কেন গেছেন, কোথায় আছেন তারকারা।

এমন কয়েকজন উল্লেখযোগ্য নায়িকাকে নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি  করেছেন— আলাউদ্দীন মাজিদ

 

সুচন্দা

ষাটের দশক থেকে আশির দশক পর্যন্ত জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা অভিনেত্রী কোহিনূর আক্তার সুচন্দা আশির দশকে এসে হঠাৎ করেই বড় পর্দা থেকে বিদায় নেন। যদিও ২০০৫ সালে নির্মাণ করেন জহির রায়হানের উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র ‘হাজার বছর ধরে’। তিনি ছিলেন একাধারে অভিনেত্রী, প্রযোজক, পরিচালক। চলচ্চিত্রের সার্বিক অবস্থা মন্দ হওয়াতে স্বেচ্ছায় এই জগৎ থেকে দূরে রয়েছেন বলে জানান তিনি।

 

শবনম

ষাটের দশকে এহতেশাম চলচ্চিত্রে নিয়ে আসেন ঝর্ণা বসাককে। তাকে শবনম নামে নায়িকা করে নির্মাণ করেন ‘চান্দা’ ছবিটি। প্রচুর দর্শকপ্রিয় ছবি উপহার দেন তিনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পশ্চিম পাকিস্তান চলে যান। সেখানকার চলচ্চিত্রে নিয়মিত হন। নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশে ফেরেন। সর্বশেষ ওই দশকেই কাজী হায়াৎ-এর ‘আম্মাজান’ ছবিতে অভিনয় করেন। এরপর তার কথায় মানসম্মত গল্প আর চরিত্রের অভাবে অভিনয় থেকে দূরে সরেন তিনি।

 

ববিতা

ষাটের দশকে জহির রায়হানের হাত ধরে চলচ্চিত্রে আসেন ববিতা।  সর্বশেষ ২০১৪ সালে নার্গিস আক্তারের ‘পুত্র এখন পয়সাওয়ালা’ ছবিতে শেষ অভিনয় করেন। এরপর অনেক প্রস্তাব সত্ত্বেও গল্পের মানহীনতার অভিযোগ এনে চলচ্চিত্র থেকে নির্বাসনে চলে যান তিনি। এখন সমাজকল্যাণমূলক কাজ নিয়েই দেশ-বিদেশে ব্যস্ত রয়েছেন ববিতা।

 

শাবানা

ষাটের দশকে প্রখ্যাত চিত্র নির্মাতা আজিজুর রহমানের হাত ধরে চলচ্চিত্রে আসেন রত্না।  ১৯৬৭ সালে এহতেশামের ‘চকোরী’ ছবিতে শাবানা নামে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পান। পাঁচ শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয়, ২৫টি চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও ১১ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন। ১৯৯৬ সালে আজিজুর রহমানের ‘ঘরে ঘরে যুদ্ধ’ ছবিটিতে ছিল তার শেষ অভিনয়। এরপর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে চলচ্চিত্র থেকে দূরে সরে যান এবং আমেরিকা প্রবাসী হন।

 

অলিভিয়া

অলিভিয়া প্রথম বড় পর্দায় নায়িকা হয়ে আসেন এস এম শফী পরিচালিত ‘ছন্দ হারিয়ে গেলো’ ছবির মাধ্যমে। ১৯৭২ সালে ছবিটি মুক্তি পায়। এরপর জনপ্রিয়তা নিয়ে ‘দি রেইন’, মাসুদ রানা, যাদুর বাঁশি, বাহাদুর, পাগলা রাজাসহ শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেন। ১৯৮৬ সালে ‘হিম্মতওয়ালী’ ছবির পর ব্যক্তিগত নানা জটিলতায় বড় পর্দা ছেড়ে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান তিনি।

 

অঞ্জু ঘোষ

‘বেদের মেয়ে জোছনাখ্যাত প্রতিভাবান অভিনেত্রী অঞ্জু ঘোষ। চলচ্চিত্র নির্মাতা এফ কবির চৌধুরীর হাত ধরে ১৯৮২ সালে চলচ্চিত্রে আসেন অঞ্জু। ‘সওদাগর’ দিয়ে তার অভিষেক।

এরপর অভিনয় করেন ‘নরম গরম’, ‘আবেহায়াত’, ‘পদ্মাবতী’ ‘বড় ভালো লোক ছিল’, ‘আশীর্বাদ’, ‘রাই বিনোদিনী’, ‘আয়না বিবির পালা’, ‘আশা নিরাশা’, ‘পদ্মগোখরা’র মতো সফল চলচ্চিত্রে। আশির দশকের শেষভাগে কলকাতা পাড়ি জমান তিনি। এরপর টালিগঞ্জের চলচ্চিত্রে নিয়মিত হন। একই সঙ্গে যাত্রাপালাও করেন। আর দেশে ফেরেননি তিনি।

 

রোজিনা

১৯৭৬ সালে কালিদাসের ‘জানোয়ার’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বড় পর্দায় আসেন রোজিনা। টানা ১৯৯২ সাল পর্যন্ত প্রায় দুই শতাধিক চলচ্চিত্রে কাজ করেন তিনি। অর্জন করেছেন দুইবার জাতীয় পুরস্কার। দুই হাজার সালের শুরুতে মতিন রহমানের ‘রাক্ষুসী’ ছিল তার অভিনীত সর্বশেষ ছবি। পারিবারিক কারণে দাপুটে এ অভিনেত্রী মিডিয়ার অন্তরালে চলে যান। বর্তমানে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নেতৃত্বে থাকলেও তার কথায় মানসম্মত গল্পের অভাবে অভিনয়ে ফিরতে পারছেন না তিনি।

 

জয়শ্রী কবির

১৯৭৫ সালে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা আলমগীর কবিরের হাত ধরে বড় পর্দায় আসেন জয়শ্রী কবির। তার প্রথম ছবি ‘সূর্যকন্যা’। এরপর সীমানা পেরিয়ে, রূপালী সৈকতে, পুরস্কারসহ হাতে গোনা কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেন এবং জনপ্রিয়তা পান। আশির দশকের শেষ দিকে ব্যক্তি জীবনের নানা টানাপড়েনের কারণে চলচ্চিত্র ছাড়েন এবং এক সময় লন্ডন প্রবাসী হন। সেখানে শিক্ষকতা পেশা শুরু করেন।

 

শাবনাজ

প্রখ্যাত চিত্র পরিচালক এহতেশাম ১৯৯১ সালে ‘চাঁদনী’ ছবির মাধ্যমে শাবনাজকে বড় পর্দায় আনেন। প্রথম থেকে প্রায় সব ছবিতেই তার নায়ক ছিলেন নাঈম। এক সময় তারা ভালোবেসে বিয়ে করেন এবং নব্বই দশকের শেষ ভাগে চলচ্চিত্র থেকে স্বেচ্ছায় বিদায় নিয়ে সংসার জীবন শুরু করেন শাবনাজ। ‘জিদ’, ‘লাভ’, চোখে চোখে, ‘আঞ্জুমান’র মতো অনেক সফল চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন শাবনাজ।

 

শাবনূর

১৯৯৩ সালে প্রখ্যাত চিত্র পরিচালক এহতেশাম নূপুর নামের এক কিশোরীকে বড় পর্দায় নিয়ে আসেন। তাকে নিয়ে নির্মাণ করেন ‘চাঁদনী রাতে’ ছবিটি। প্রথম ছবি ফ্লপ হলেও পরে ঢালিউডে শাবনূর মানেই একটি ইতিহাস। দেড় শতাধিক ছবিতে অভিনয় এবং জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন তিনি।

২০১২ সালে গোপনে সহশিল্পী অনিককে বিয়ে করেন এবং ২০১৩ সালে মা হন। তার অভিনীত সর্বশেষ ছবি ‘পাগল মানুষ’ মুক্তি পায় চলতি বছর। ২০১৩ সাল থেকেই সংসার সন্তানের টানে শাবনূর চলচ্চিত্র থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে যান।

সর্বশেষ খবর