শুক্রবার, ৩ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

বড় দলের দখলে মঞ্চ, নেই নতুন নাটক

বড় দলের দখলে মঞ্চ, নেই নতুন নাটক

নতুন শিল্পী তৈরির ক্ষেত্রে নতুন নাটক মঞ্চায়নের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু বড় দলগুলো আটকা পড়ে আছে পুরনো কিছু মঞ্চনাটকের মধ্যেই। বড় দলগুলোর দখলে নাটকের মঞ্চ কিন্তু তেমন করে নেই নতুন কোনো নাটক। ফলে দর্শক তৈরি হচ্ছে না। এক নাটকের একশ, দুইশ বা হাজার প্রদর্শনী হচ্ছে। তবে নাট্যজনেরা মনে করেন, মঞ্চনাটকের একনিষ্ঠ নাট্যকর্মীর ব্যাপক সংকটের কারণে নতুন নাটক সৃষ্টি হচ্ছে না। এসব সংকট ও তা থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে কিছু মঞ্চ নিবেদিত মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন— পান্থ আফজাল

 

ড. ইনামুল হক

সব দলের কথা তো বলতে পারছি না। হয়তো নতুন করে কী করবে সেই নিয়ে একটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছে। তবে একদমই যে নতুন নাটক নামছে না, তা নয়। থিয়েটার নামিয়েছে, নাগরিক নাট্যসম্প্রদায় নতুন নাটক নিয়ে ভাবছে। আমরাও ৩টি নতুন নাটক মঞ্চে নামিয়েছি। লেটোর গান নামাবো। রিহার্সেল শুরু হয়েছে। তবে নতুন নাটক আনলেও সেটা স্ট্যান্ডার্ডে পৌঁছানো খুবই কঠিন। না পৌঁছানো পর্যন্ত মঞ্চে আনাও ঠিক নয়।  রিহার্সেল করার জায়গাও তো আমাদের নেই। আর সবাইকে একত্রিত করাও কঠিন ব্যাপার। সবাই রেপাটরি নাটক নিয়ে ব্যস্ত। আমার দৃষ্টিকোণ থেকে এটা বড় দলের জন্য বিরাট সমস্যা।

 

আতাউর রহমান

আমি ৩০ বছর ধরে মঞ্চে কাজ করছি। ৭টি নাটক করেছি, এখনো করছি। হ্যামলেট, নাট্যমের একটি কাজ,পালাকারের কাজ করেছি। তবে অবশ্য এইগুলো রেপাটরি নাটক। কিছুদিন আগে নাগরিকের সারা যাকের ‘ওপেন কাপল’ করল। একের পর এক তো নাটক নামছেই; তবে তোমার কথাও ঠিক আছে; বড় দলগুলোর নতুন নাটক তেমন করে মঞ্চে আসছে না। সব কিছুর একটা টাইম পিরিয়ড থাকে। আর ইয়াং জেনারেশন পতাকা ঠিকমতো তুলে ধরতে পারছে না। আমরাও আরেকজনের হাতে ঠিকমতো পতাকা তুলে দিতে পারছি না। মামুনুর রশীদের দল, নাগরিকে তেমন করে নতুন মঞ্চকর্মী তৈরি হয়নি। নতুন জেনারেশন তৈরি না হলে সব তো স্থবির হবেই। ভ্যানগগ কি আরেকটা তৈরি হয়েছে? এখন সব ন্যাচারাল ডেথে চলে গেছে। আমাদেরকে নতুন দলগুলোর জন্য জায়গা করে দিতে হবে। থিয়েটারে প্রফেশনালিজম আনতে হবে। মঞ্চে নিরুৎসাহিত হলে প্রজন্ম তো টেভি চ্যানেলের দিকে ঝুঁকবেই। তবে সরকার কিন্তু চেষ্টা করছেন।

 

রোজী সিদ্দিকী

দায়ী তো আমাদের যত ইকোনিমিক্যাল অবস্থা। অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা-অভিনেত্রী এখন মঞ্চ থেকে সরে গেছেন। কারণ, এখন তো অনেক চ্যানেল। আর আরণ্যকে আজিজুল হাকিম, নাট্যকেন্দ্রে জাহিদ হাসান বা তৌকীর আহমেদ কি মঞ্চে সময় দিতে পারছে? অন্যদিকে বাংলাদেশে থিয়েটার চর্চায় সরকারের তেমন কোনো পৃষ্ঠপোষকতা নেই। থিয়েটারে কোনো মিনিমাম সাপোর্ট এ দেশের সরকার দিচ্ছে না! বাইরের দেশে কিন্তু ভিন্ন চিত্র। আর আমাদের মাথার ওপর ছায়ার মতো যারা আছেন তারা আবার নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে ব্যতিব্যস্ত রয়েছেন। তারা শিল্পচর্চার জায়গা থেকে সরে সামাজিক দায়িত্বই বেশি পালন করছেন। বড় দলের কর্ণধারেরা রাজনৈতিকভাবে বেশি ইনভলব। রাজনৈতিক চিন্তাধারা তাদের মগজে প্রোথিত। শিল্পের জায়গা থেকে সবাই সরে যাচ্ছেন। পারিবারিক ঘরানায় জড়িয়ে গেছে থিয়েটার অঙ্গন। এখন তো আগে থেকেই নাটকে চরিত্র ফিক্সড করা থাকে। আগে আমাদের একটি চরিত্র করতে কতভাবে যে চর্চা করতে হতো! এ রকম হলে তো নতুন ছেলেমেয়েগুলো থিয়েটার চর্চা থেকে নিরুৎসাহিত হবেই। মঞ্চে ভালো নাটক আনছে কিন্তু নতুন নতুন নির্মাতারাই।

 

নুনা আফরোজ

মঞ্চে নতুন নাটক আসছে। তবে আমার ব্যক্তিগত অভিমত, পাইওনিয়ার দলগুলোর মানুষেরা ব্যক্তিগত কাজ, ব্যবসা বা অন্য কাজে জড়িয়ে যাওয়ার কারণে মঞ্চে ঠিকমতো সময় দিতে পারছেন না। আর নতুন নাটক মঞ্চে আনতে যে সময় দিতে হয়, তা তারা দিতে পারছেন না। কিছু বড় দল কাজ করছেন, তবে সেই প্রযোজনা ৩ বছর অন্তর অন্তর পাওয়া যায়। আবার কিছু আছে যারা ৫, ১০ বা ১৫ বছর পরও মঞ্চে উল্লেখযোগ্য কোনো প্রযোজনা আনতে পারছে না। এসব বয়োজ্যেষ্ঠরা তাদের পার্সোনাল কাজে জড়িয়ে গেছেন। নতুন নাটক তৈরি করার সময় কোথায়? এদের মধ্যে নতুন মঞ্চকর্মী তৈরি করার প্রবণতাটাও কম। ফলে নতুন প্রডাকশন, নতুন নাট্যকার, ডিজাইনার এখন তৈরি হচ্ছে না। আমাদের প্রাঙ্গণে মোর-এর ৫ জন নতুন নির্দেশকের কাজ মঞ্চে চলছে। আমি আর অনন্তের মধ্যেই শুধু আমাদের থিয়েটার সীমাবদ্ধ নেই। আমাদের বয়স মাত্র ১৫ বছর! আমরা তাই এখন নতুন কিছু নাটক নামাতে পারছি। কিন্তু ২৫ বছর পরে আমরাও কিন্তু কিছুটা শ্লথ হয়ে পড়ব। তবে যারা তৈরি হচ্ছে, তারা তো সামনে কাজ করে যাবে। একটা থিয়েটার যদি একজন-দুইজন সর্বস্ব হয়, তবেই সমস্যা। নতুন নাট্যকার, নির্দেশক বা ডিজাইনার তৈরির কোনো বিকল্প নেই।

সর্বশেষ খবর