সোমবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

আমি চাই না আমাকে নিয়ে বায়োপিক নির্মাণ হোক : অঞ্জু ঘোষ

আলাউদ্দীন মাজিদ

আমি চাই না আমাকে নিয়ে বায়োপিক নির্মাণ হোক : অঞ্জু ঘোষ

ঢালিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী অঞ্জু ঘোষ। ১৯৯৬ সাল থেকে কলকাতার চলচ্চিত্র আর যাত্রামঞ্চে থিতু হয়েছেন তিনি। প্রায় ২২ বছর পর নাড়ির টানে নিজ দেশে এসে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এই দর্শকপ্রিয় অভিনেত্রী। মিডিয়া থেকে দীর্ঘদিন নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখলেও দেশে এসে সংবাদকর্মীদের মুখোমুখি হন তিনি। গতকাল এফডিসিতে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির কার্যালয়ে তাকে সমিতির পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এরপর সাংবাদিকদের সঙ্গে নিজের অভিনয় ও ব্যক্তি জীবন নিয়ে কথা বলেন এই দর্শক নন্দিত অভিনেত্রী। জীবনের ৬২ বসন্ত পাড়ি দিলেও  বয়স এখনো ছুঁতে পারেনি চির সবুজ এই অভিনেত্রীকে। এখনো তাকে দেখলে মনে হয় সেই ‘সওদাগর’, ‘নরম গরম’, ‘পদ্মাবতী’ আর ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ ছবির উচ্ছল নায়িকাকেই দেখছি। উচ্ছ্বসিত অঞ্জু ঘোষ বলেন, দীর্ঘদিন পর দেশে এসে অবাক হয়েছি এটা দেখে যে এখনো এদেশের মানুষ আমাকে কতটা ভালোবাসে। এখনো এখানকার মিডিয়া আমাকে নিয়ে আগ্রহ দেখায়। তিনি বলেন, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির কারণেই আজ আবার নিজ দেশে এসে আমার প্রতি দেশের মানুষের ভালোবাসার উষ্ণতা দেখে অভিভূত হলাম। সবার প্রতি আমার হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা রইল। তার কাছে প্রশ্ন ছিল হঠাৎ করে দেশ ছেড়ে কলকাতার ছবিতে নিয়মিত হওয়া কেন? এ প্রশ্নের সোজসাপ্টা উত্তর দিতে গিয়ে তিনি বলেন, আসলে এক সময় মনের মতো চরিত্র ও গল্প পাচ্ছিলাম না। পরে কলকাতায় গিয়ে ১৯৯৬ সাল থেকে টানা সেখানকার চলচ্চিত্রে অভিনয় করি। একটা সময় সেখানেও যে ধরনের গল্প আর চরিত্রের প্রস্তাব আসছিল তাও পছন্দ হলো না। তাই ২০০২ সাল থেকে চলচ্চিত্রে কাজ করা বন্ধ করে দিলাম। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি সেখানকার যাত্রাপালাতেও অভিনয় করি। মাঝে কিছুটা বিরতি দিয়ে গত বছরের জুলাই মাসে ‘ধুলো মাটির ধন্যি মেয়ে’ শিরোনামের একটি যাত্রাপালায় অভিনয় করেছি। এখনো ভালো গল্প পেলে যাত্রায় অভিনয় করি। জানতে চাওয়া হয়েছিল তিনি এদেশের চলচ্চিত্রে আবার অভিনয় করবেন কিনা? তার জবাব ছিল ‘না, এখন আর ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে ইচ্ছে করে না। স্টেজও তেমনভাবে টানে না। শুধু নিজের দেশ নয়, কলকাতাতেও অভিনয় নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই আমার মধ্যে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের অন্য এক জবাবে অঞ্জু জানান, ‘আমিতো দীর্ঘদিন ধরে মিডিয়া থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছি, তবে কোনো অভিমান নয়, কাজ করতে করতে একটা সময় ক্লান্তি যখন শরীর মনে জেঁকে বসে তখন শরীর চায় একটু বিশ্রাম, মন চায় অনাবিল প্রশান্তি। এ জন্যই মিডিয়া থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখতে হয়েছে।’ এখন সময় কাটে কীভাবে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ভোরে জেগে উঠে ঈশ্বরের আরাধনা, তারপর সংগীতচর্চা, বাড়ির টুকটাক কাজ নিয়ে দিন কেটে যায়। মাঝে মধ্যে কেনাকাটার জন্য বাড়ির বাইরে বের হই। সবচেয়ে বেশি উপভোগ করি ভাইয়ের বাসায় গিয়ে তার বাচ্চাদের সঙ্গে খেলতে ও গল্প করতে।’ তার কাছে জানতে চাওয়া হয় তার বায়োপিক নির্মাণ করতে চাইলে তিনি অনুমতি দেবেন কিনা? স্মিত হেসে তিনি বলেন, আমার জীবনে বিশেষ বা এমন কোনো গল্প নেই যা দিয়ে বায়োপিক নির্মাণ করা যায়। না, আমি চাই না আমাকে নিয়ে বায়োপিক নির্মাণ হোক।’

১৯৮২ সালে ‘সওদাগর’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে এসে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ওঠা, বিশেষ করে ১৯৮৯ সালে ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ ছবিতে অভিনয় করে অভাবনীয় সাড়া জাগান অঞ্জু ঘোষ। এরপর ১৯৯৬ সাল থেকে কলকাতার ছবি পরে সেখানকার যাত্রা পালায় চরম ব্যস্ততা আর জনপ্রিয়তা নিয়ে কাজ করেন। অঞ্জু ঘোষ বলেন, ‘২২ বছর পর এখানে এসে দেখি অনেক কিছুই আর নেই। অনেক প্রখ্যাত নির্মাতা, শিল্পী না ফেরার দেশে চলে গেছেন। নায়করাজ রাজ্জাকের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, তার মতো একজন উঁচুমাপের অভিনেতার সঙ্গে ‘বড় ভালো লোক ছিলো’ ছবিতে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল আমার। তার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে অভিনয় সম্পর্কে অনেক কিছু শিখতে পেরেছিলাম। আজ তিনি নেই, কথাটা ভাবতেই মনের ভিতরটা অব্যক্ত বেদনায় ভরে যায়।’ ক্যারিয়ারের শুরু থেকে অনেক প্রতিকূলতা পাড়ি দিয়ে চির সুখী হওয়া কিংবদন্তি অভিনেত্রী অঞ্জু ঘোষ জানান, সময় সুযোগ পেলেই বারে বারে ছুটে আসবেন তিনি আপন ঘরে, নিজের জন্মভূমিতে। তার পরম চাওয়া নিজের দেশ আর দেশের মানুষ যেন ভালো থাকেন সব সময়।

সর্বশেষ খবর