বৃহস্পতিবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বদলে যাচ্ছে এফডিসি

আলাউদ্দীন মাজিদ

বদলে যাচ্ছে এফডিসি

দেশীয় চলচ্চিত্রের সোনালি অতীত ফিরিয়ে আনতে আরও একটি  উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এবার বিএফডিসিকে আধুনিকভাবে গড়ে তুলতে ৩২২ কোটি ৭০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।

মঙ্গলবার শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান।

এম এ মান্নান বলেন, মৃতপ্রায় চলচ্চিত্রশিল্পকে উজ্জীবিত করতে বড় প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পটির আওতায় বহুতল এফডিসি কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। কমপ্লেক্সে স্থাপন করা হবে চারটি থ্রিডি অত্যাধুনিক সিনেপ্লেক্স। নির্মাণ করা হবে ৭৩ হাজার ৪৬৯ বর্গমিটার শুটিং ফ্লোর। এর ফলে বিনোদনের নতুন দিক উন্মোচন হবে। প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, বর্তমানে চলচ্চিত্রশিল্পে বিরাজমান মহামন্দা থেকে গৌরবময় সোনালি অতীত ফিরিয়ে আনতে বিএফডিসি কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। এর আওতায় নির্মিতব্য ভবনে নানা রকম কারিগরি ও আধুনিক সুবিধা স্থাপন করা হবে। ‘গ্রিন বিল্ডিং’ ধারণার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ভবনটিতে ছাপ থাকবে হাতিরঝিল প্রকল্পের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের। এর আওতায় স্থাপন করা হবে ডিজিটাল প্রজেক্টর ও উন্নত সাউন্ড সিস্টেমসমৃদ্ধ চারটি সিনেপ্লেক্স। বিএফডিসির সিনেপ্লেক্সে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হবে। দর্শক প্রেক্ষাগৃহমুখী হলে বাড়বে চলচ্চিত্র নির্মাণের হার। তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত প্রকল্পটি ২০২১ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ১৯৫৭ সালে বর্তমানের এফডিসি প্রতিষ্ঠিত হয়। বিএফডিসি কমপ্লেক্সে সিনেপ্লেক্স, তিন তারকা হোটেল আর শপিং মলসহ চলচ্চিত্র নির্মাণের অত্যাধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা থাকছে। বিদেশি চলচ্চিত্র নির্মাতারাও এখানে ছবির কাজ করতে পারবেন। ৯৪ কাঠা জমির ওপর নির্মিত হবে ২০ তলা ভবনের নতুন এই কমপ্লেক্স। এফডিসি কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০১২ সালের ৩০ অক্টোবর বিষয়টি নিয়ে এফডিসিতে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও তৎকালীন এমডির মধ্যে বৈঠক হয়। ওই বৈঠকেই এফডিসিকে আধুনিকীকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর নকশায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে একটি অত্যাধুনিক শপিং কমপ্লেক্স, চলচ্চিত্রবিষয়ক পাঠাগার, ক্যামেরা লেন্সসহ আনুষঙ্গিক বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বিক্রির ব্যবস্থা, সিনেপ্লেক্স, তিনটি শুটিং ফ্লোর, চারটি প্রদর্শনী কক্ষ নিয়ে তৈরি একটি মাল্টিপ্লেক্স, শিশুদের বিনোদনের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা, বিশেষ শিশুদের জন্য খেলার জায়গা, ফুড কর্নার, চেইনশপ, প্রযোজনা সংস্থার অফিস, তিনটি বেজমেন্টস, বেসরকারি চ্যানেলের শুটিংয়ের জন্য স্টুডিও রুম, ছাদে জিমনেশিয়াম, সুইমিং পুল ও রেস্তোরাঁ। এই কমপ্লেক্স নির্মাণ হবে এফডিসির বর্তমান ৩ ও ৪ নম্বর শুটিং ফ্লোর, পরিত্যক্ত দুটি সম্পাদনা ভবন ও পুলিশ ফাঁড়ির জায়গায়। এই প্রকল্প থেকে অর্জিত বার্ষিক আয় এফডিসির খাতেই জমা হবে।

চলচ্চিত্রকাররা কীভাবে দেখছেন

বিএফডিসি প্রকল্প পাস হওয়ায় চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। গতকাল এফডিসিতে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র সংগঠন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করে। অন্যদিকে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ইফতেখার উদ্দীন নওশাদ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সিনেমা হল ঠিক না করে এফডিসি কমপ্লেক্স নির্মাণ করে কী লাভ হবে। যদি সিনেমা হলই না থাকে ছবি বানিয়ে কোথায় প্রদর্শন করা হবে। দীর্ঘদিন আগে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রত্যেক জেলায় সিনেমা হল নির্মাণ করা হবে। সেই প্রতিশ্রুতির আজও বাস্তবায়ন হয়নি। তাই সিনেমা হল বাঁচাতে আগে পর্যাপ্ত ও মানসম্মত ছবি দিতে হবে। প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস বলেন, এই উদ্যোগ শুভ, এর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। তবে বিষয়টি ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেওয়ার মতো হয়েছে। ছবির অভাবে একের পর এক সিনেমা হল বন্ধ হচ্ছে। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে প্রদর্শকদের দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর সিনেমা হল নির্মাণের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না করে এফডিসি কমপ্লেক্স নির্মাণে এই শিল্পের কতটা লাভ হবে সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। তাহলে কি সিনেমা হল নির্মাণে আমলা কর্তাব্যক্তিদের কোনো আগ্রহ নেই। এর আগে এফডিসির আধুনিকায়নে ৫৯ কোটি আর ফিল্ম আর্কাইভ উন্নয়নে ৭৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এর থেকে সরকার এখন পর্যন্ত কি বেনিফিট পেয়েছে। সিনেমা হলের উন্নয়ন না করে যত কিছুই করা হোক এতে চলচ্চিত্রশিল্পের কোনো উন্নতি হবে না। চলচ্চিত্র এডিটরস গিল্ডের সভাপতি আবু মুসা দেবু বলেন, বর্তমানে যে এফডিসি রয়েছে তাতেই কোনো কাজ নেই, আবার নতুন কমপ্লেক্স বানিয়ে কী হবে। গত ৫-৬ বছর ধরে চলচ্চিত্রকাররা সিনেমা হলের আধুনিকায়ন ও সংস্কারের যে দাবি করে আসছেন তা আগে পূরণ করতে হবে। চলচ্চিত্রের সত্যিকারের উন্নয়ন চাইলে আগে সিনেমা হলের উন্নয়ন এবং চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি অনুদানের অর্থ ও সংখ্যা বাড়ানো দরকার। চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখে বলছেন, চলচ্চিত্র নির্মাণে এখানে আধুনিক সব ব্যবস্থাসহ নানা সুযোগ সুবিধা থাকছে, তা ছাড়া এই কমপ্লেক্স থেকে অর্জিত অর্থ দিয়ে এফডিসি পরিচালনা সহজ হবে। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ছবি নির্মাণে শুধু দেশীয় নির্মাতা নন, বিদেশিরাও এখানে স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারবেন। এজন্য বর্তমান সরকার ও প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। শীর্ষ নায়ক শাকিব খানও বিষয়টিকে চলচ্চিত্রশিল্পের জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখে বলছেন, এরপর সরকার নিশ্চয়ই সিনেমা হল নির্মাণ ও সংস্কারের উদ্যোগ নেবে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী হলেন চলচ্চিত্র ও শিল্প সংস্কৃতিবান্ধব একজন মানুষ। চলচ্চিত্রের উন্নয়নে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর পথ অনুসরণ করে এগিয়ে যাচ্ছেন। জনপ্রিয় অভিনেতা ডি এ তায়েব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। আমার প্রত্যাশা এই শুভ উদ্যোগ থেকে চলচ্চিত্রকাররা সত্যিকার সুফল পাবেন। এ খাতে সরকারের লাভ যদি কমও হয়, চলচ্চিত্রের উন্নতি হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। তাই চলচ্চিত্রের উন্নয়নে বর্তমান সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপ প্রশংসাযোগ্য। এবার সিনেমা হলের আধুনিকায়ন চাই।

এফডিসির কলাকুশলী ও কর্মচারী লীগের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব বলেন, এমন একটি সময়োপযোগী প্রকল্প বাস্তবায়নে অনুমোদন দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও প্রমাণ করলেন দেশীয় চলচ্চিত্রশিল্পের প্রতি সত্যিই তিনি আন্তরিক। তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর