শুক্রবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ইত্যাদির বিচারক দর্শক পুরস্কার ভালোবাসা

শোবিজ প্রতিবেদক

ইত্যাদির বিচারক দর্শক পুরস্কার ভালোবাসা

‘‘ হানিফ সংকেত, তার নির্মিত ইত্যাদি সব শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রিয় অনুষ্ঠান। সমাজের বিরল সফলতা তুলে ধরেন তিনি। তুলে ধরেন নানা অসঙ্গতি ও সুপ্ত প্রতিভা। এবারের ইত্যাদি নির্মিত হয়েছে নীলফামারীতে। আজ তা প্রচার হবে। ইত্যাদি ও সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে আজ তার সাক্ষাৎকার—

 

ইত্যাদি এবার এত দূরে নীলফামারীতে কেন?

অনুষ্ঠান নির্মাণের ক্ষেত্রে ‘দূর’ বা ‘কাছে’ এই বিষয়গুলো আমাদের কাছে বিবেচ্য নয়। অনুষ্ঠানের বৈচিত্র্যের স্বার্থে যখন যেখানে প্রয়োজন সেখানেই আমরা গিয়েছি এবং যাচ্ছি। আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে জানা এবং জানানোর প্রত্যাশায় আমরা প্রায় তিন দশক ধরেই ছুটে বেড়াচ্ছি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। তারই ধারাবাহিকতায় এবারে নীলফামারী। এখানকার উত্তরা ইপিজেডে এক সময়ের পিছিয়ে পড়া নীলফামারীর নারীদের হাতে গড়া বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্য সারা বিশ্বে রপ্তানি হচ্ছে। প্রশংসিত হচ্ছে সারা বিশ্বে। এ বিষয়টিও নীলফামারী যেতে উদ্বুদ্ধ করেছে।

 

আপনি যখন যেখানে অনুষ্ঠান করতে যান, সেখানকার স্থানীয় শিল্পীদের সম্পৃক্ত করে তাদের দিয়ে বিভিন্ন পর্ব করান। এটা কীভাবে সম্ভব?

আমরা লোকেশন ঠিক করার পর সবক্ষেত্রেই গবেষণা করি এবং বেশ কিছুদিন ধরে মহড়া দিই। সেগুলো নিয়ে বিহাইন্ড দি সিন জাতীয় কোনো অনুষ্ঠান করি না, এসব নিয়ে প্রচার-প্রচারণাও করি না- তাই আপনারা জানেন না। তবে আমাদের এই উদ্যোগের ফলে স্থানীয় শিল্পীরা উৎসাহিত হয়, নাচে-গানেও বৈচিত্র্য আসে। ওই এলাকার সংস্কৃতির পরিচয় পাওয়া যায়। সবচেয়ে বড় কথা, বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে ইত্যাদির করা এসব গান-নাচ পরবর্তীতে তারা ওই জেলার গান হিসেবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পরিবেশন করে। কারণ ওই গানটি আমরা জেলার বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য বিষয় দিয়ে রচনা করি। তাই সেটি জেলার থিম সং হয়ে যায়। এমনকি ওই জেলাকে নিয়ে তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদনটিও বিভিন্ন স্থানে আর্কাইভ হিসেবে সংরক্ষিত হয়।

 

আজকাল অনেক অনুষ্ঠানে ইত্যাদির বিভিন্ন বিষয়কে অনুকরণ করতে দেখা যায়, বিষয়টাকে কীভাবে দেখেন?

আমি সবকিছুই পজেটিভ দেখি। টিভি অনুষ্ঠানকে স্টুডিওর চার দেয়াল থেকে বের করে আমরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়ে গিয়েছি, যেটা এখন কেউ কেউ শুরু করেছে। সেসব স্থানে গিয়ে ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরি। সেটাও শুরু হয়েছে। আমরা বিদেশি প্রতিবেদন করছি তিন দশক ধরে- যখন দেশে কোনো স্যাটেলাইট চ্যানেলই ছিল না, সেটাও অনুকরণ শুরু হয়ে গেছে। তবে একটি বিষয় ভালো লাগে, এরা এখন দেশীয় অনুষ্ঠান অনুকরণ করছে। এরাই একসময় বিদেশি অনুষ্ঠান নকল করত। পৃষ্ঠপোষকতা করত। তবে মনে রাখতে হবে দলবল নিয়ে ঢাকার বাইরে গেলেই চলবে না, বিষয়বস্তু লাগবে। আর সেটা করতে একটু মেধা খরচ করতে হবে। যেটা নকল করা যায় না।

 

এবারের অনুষ্ঠানে কি কি থাকছে?

থাকছে নেদারল্যান্ডস প্রবাসী আনোয়ারার পরিবারকে খুঁজে পাওয়ার আবেগঘন ঘটনা, রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার গ্রাম, বাড়ি এবং তার বন্দিশালা রোবেন আইল্যান্ডের ওপর একটি প্রতিবেদন। এই অঞ্চলের শ্রমজীবী মানুষের হাতে তৈরি বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডের পণ্যসামগ্রী নির্মাণের বিস্ময়কর কাহিনী। রয়েছে নীলগাছ-নীলচাষ আর নীলকরদের অত্যাচার, ভাওয়াইয়া সংগীত সম্রাট আব্বাসউদ্দিন, নীলসাগর, চিনি মসজিদ, রেলওয়ে কারখানার ওপর তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন। এছাড়াও বিষয়ভিত্তিক গান, নাচ এবং ইত্যাদির নিয়মিত পর্ব।

 

ইত্যাদির জন্য এখনো দর্শকরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন, কেন?

প্রশ্নটা দর্শকদের করলে ভালো হতো। কারণ উত্তরটা তারাই ভালো বলতে পারবেন। আজকাল তো নিজের চ্যানেলে নিজেরাই নিজেদের সেরা ঘোষণা করে ফেলে। নিউজে-ভিউজে-স্ক্রলে কোথাও বাদ নেই। আমি বুঝি না, এদের কি লজ্জা-শরমও নেই? তবে আপনার প্রশ্নের উত্তর আপনার প্রশ্নেই আছে। ওই যে বললেন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। আর এই আগ্রহের কারণেই আমরা দীর্ঘদিন গবেষণা করে একটি অনুষ্ঠান নির্মাণ করি। তাদের অপেক্ষার মূল্য দিতে চেষ্টা করি। ইত্যাদি কোনো পুরস্কার বা কারও মূল্যায়নের ধার ধারে না। এই যে বললেন দর্শকরা ইত্যাদির জন্য অপেক্ষা করেন- এটাই তো বড় পুরস্কার। আসলে ইত্যাদির বিচারক ‘দর্শক’ আর পুরস্কার ‘দর্শকদের ভালোবাসা’।

সর্বশেষ খবর