রবিবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা
বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার সংবাদে সাড়া

সরকারিভাবে সিনেমা হল সংস্কার ও নির্মাণের উদ্যোগ

আলাউদ্দীন মাজিদ

সরকারিভাবে সিনেমা হল সংস্কার ও নির্মাণের উদ্যোগ

দেশের ৬৪ জেলা শহরে সিনেমা হল নির্মাণ ও সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে ১০টি উপসচিব পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে তথ্য মন্ত্রণালয়। কমিটিগুলো ইতিমধ্যে জেলা শহরে তাদের সার্ভের কাজ শুরু করেছে। তথ্য মন্ত্রণালয় এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। বিভিন্ন সিনেমা হল মালিকসূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার শোবিজ বিভাগে ‘সিনেমা হল শূন্য ২৫ জেলা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশের পর সরকার সিনেমা হলের দুরবস্থা দূরীকরণের উদ্যোগ নেয় এবং জেলা শহরগুলোতে সিনেমা হলের বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ, কেন সিনেমা হল বন্ধ হয়েছে তার কারণ উদঘাটন, বন্ধ সিনেমা হল কীভাবে চালু করা যায়, সিনেমা হলের আধুনিকায়ন এবং এতে ডিজিটাল প্রজেক্টর স্থাপনসহ নানা বিষয় সরেজমিন খতিয়ে দেখতে তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পর্যায়ে ১০টি কমিটি গঠন করে। কমিটিগুলো তাদের সার্ভের কাজ শেষ করে শিগগিরই তথ্য মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট পেশ করবে। রিপোর্ট যাচাই-বাছাই শেষে মন্ত্রণালয় সিনেমা হল নির্মাণ, সংস্কার, আধুনিকায়ন ও বন্ধ সিনেমা হল চালুর উদ্যোগ নেবে বলে জানায় চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি। এ বিষয়ে প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস বলেন, এর আগে একাধিকবার সরকারিভাবে এমন উদ্যোগ নিলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। সর্বশেষ সিনেমা হলে সরকারিভাবে ৫০টি ডিজিটাল প্রজেক্টর স্থাপনের জন্য কমিটি গঠন করে কয়েক দফা বৈঠক করার পরও সেই উদ্যোগ থমকে আছে। সমিতির উপদেষ্টা মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, শুধু সিনেমা হল সংস্কার আর চালু করলে সমস্যার সমাধান হবে না, মানসম্মত পর্যাপ্ত কন্টেন্টের ব্যবস্থা করা, সহজ শর্তে বিদেশি ছবি আমদানি, সিনেমা হলের বিদ্যুৎ বিল সরকার প্রতিশ্রুত বাণিজ্যিকের পরিবর্তে শিল্পনীতির আওতায় গ্রহণ করতে হবে। তাহলেই দেশীয় চলচ্চিত্রশিল্প আবার প্রাণ ফিরে পাবে।

 

বন্ধের ধারাবাহিকতায় ‘উপহার’

ছবির অভাবে লোকসান গুনে গত সপ্তাহে বন্ধ হয়ে গেল রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী সিনেমা হল ‘উপহার’। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস। সত্তরের দশকে স্থাপিত ‘স্নিগ্ধা’ সিনেমা হলটি নব্বইয়ের দশকে ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন চৌধুরী কিনে নেন এবং এর নতুন নামকরণ করেন ‘উপহার’। তার মৃত্যুর পর তার পুত্র সাজিদ হোসেন ও প্রদর্শক সমিতির সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম চৌধুরী পার্টনারশিপে এটি চালাতে থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে মানসম্মত ছবির অভাবে লোকসানের কবলে পড়ায় সম্প্রতি সাজিদ হোসেন এটি বিক্রি করে দেন এবং সিনেমা হলটির স্থানে একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে। রাজশাহীর ৪টি সিনেমা হলের মধ্যে আগেই অন্য তিনটি বন্ধ হয়ে গেছে। প্রদর্শক সমিতি জানায়, ছবির অভাবে শিগগিরই গাজীপুরের একটি সিনেমা হল বন্ধ হতে যাচ্ছে। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ইফতেখার নওশাদ, প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস, জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আবদুল আজিজ এবং জনপ্রিয় অভিনেতা ডি এ তায়েব অভিন্ন সুরে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সবার মুখে শুধু বড় বড় বুলি ‘শিগগিরই চলচ্চিত্রশিল্প ঘুরে দাঁড়াবে’ অথচ মানসম্মত ও পর্যাপ্ত ছবির অভাবে প্রায় ১৩০০ সিনেমা হল এখন ২৬৯-এর কোঠায় এসে ঠেকেছে। যারা অমূলক স্বপ্ন দেখাচ্ছে তারা আজ কোথায়। শুধু সরকারের ওপর এর দায় চাপিয়ে লাভ নেই। চলচ্চিত্রের মানুষের দায়িত্ব হলো এই অবস্থা রোধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। পর্যাপ্ত ও মানসম্মত ছবি দিয়ে সিনেমা হল টিকিয়ে রাখা। এর জন্য স্থানীয়ভাবে নির্মাণকে প্রাধান্য দিয়ে এরপর যৌথ প্রযোজনা ও একসঙ্গে দুই বাংলায় দুই বাংলার ছবি মুক্তি দেওয়ার বিকল্প নেই। ছবি ছাড়া শুধু সিনেমা হল পরিদর্শন ও সংস্কার করে কোনো লাভ নেই। উপহার সিনেমা হলটির ভালো পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও শুধু মানসম্মত পর্যাপ্ত ছবির অভাবে বন্ধ হয়ে গেল।

রাজধানীর মধুমিতা সিনেমা হলটি সম্প্রতি সংস্কার করা হয়েছে। তারপরও ছবির অভাবে এটি এখনো চরম লোকসান গুনছে। এভাবে লোকসান গুনে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখা যে যায় না এটি দিবালোকের মতো সত্য।

সর্বশেষ খবর