বৃহস্পতিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

দিন এখন ফোক গানের

আলী আফতাব

দিন এখন ফোক গানের

একটি দেশ তার সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে নিজেকে তুলে ধরে। সংস্কৃতির আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে ঐতিহ্যবাহী গান। একেক ঘরানার গান গেয়ে শিল্পীরা নিজে দেশের কৃষ্টি এবং ঐতিহ্য তুলে ধরতে পারেন খুব সহজেই। কোনো একটি দেশ, জাতি বা অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী সংগীতকে লোকসংগীত বলা হয়ে থাকে। অনেকে ফোক গানকে ওয়ার্ল্ড মিউজিকও বলে থাকেন। সাধারণত কোনো একটি অঞ্চলের নিজস্ব ঢঙে সুর ও সংগীত ব্যবহার করে। সে অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে এবং গানের কথায় সে অঞ্চলের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ফুটিয়ে তোলার মাধ্যমে ফোক গানের সৃষ্টি করা হয়। বহুকাল ধরে এসব ফোক গান মানুষের মুখে মুখে চলে আসছে বলে এসব গানের কথা, সুর ও সংগীতে বিভিন্ন রকম পরিবর্তন ঘটতে দেখা যায়। লোকসংগীতের একটি বৈশিষ্ট্য হলো মানুষের মুখে মুখে পরিবর্তিত হয়। কোনো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের বা সংস্কৃতির ফোক গান নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের হয়ে থাকে এবং অঞ্চলভেদে এর বৈশিষ্ট্যও ভিন্ন। বংশপরম্পরায় এবং যুগ যুগ ধরে এসব গান চলতে থাকে। উনিশ ও বিশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে ফোক গানের বড় রকমের পরিবর্তন দেখা যায়। আমাদের দেশে জারি, সারি, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, মুর্শিদী, গম্ভীরাসহ আরও নানা ধরনের ফোক গানের সম্ভার রয়েছে। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে এই গানগুলো গাইতে শুরু করে এই সময়ের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পীরা। ফকির লালন সাঁই, হাসন রাজা, খোদাবক্স শাহ, রাধারমন দত্ত, শাহ আবদুল করিম, দুর্বিন শাহ সংগীত রচয়িতা ও গায়ক হিসেবে বাংলা গানে নতুন ধারা সৃষ্টি করেছিলেন। পরবর্তীতে গায়ক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন আব্বাসউদ্দিন আহমদ, আবদুল লতিফ, আবদুল আলিম, মুজিব পরদেশী, মমতাজ, শাহনাজ বেলী, বারী সিদ্দিকী নানা সময়ে নানা ধরনের লোকসংগীত সৃষ্টি করে এবং গেয়ে জনপ্রিয় হয়েছেন। বর্তমান সময়ে লালন ব্যান্ড, জলের গান, আনুশেহ, সন্দীপন, হাবিব, কায়া, বিউটি, সালমা, রিংকু, অর্ণবসহ অনেক শিল্পী রয়েছেন যারা ফোক ফিউশন করে হয়েছেন জনপ্রিয়। অন্যদিকে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী গানের মধ্যে মাইজভাণ্ডারি গান অন্যতম। শুধু স্থানীয় শ্রোতা নয়, এই গানের জনপ্রিয়তা দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে আছে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে অবস্থিত মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফকে ঘিরেই এই গানের জন্ম। এখনো এ গান শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয়।

 

মমতাজ

আমার কাছে মনে হয় আমাদের সময় ফোক গান যতটা ভালো হতো এখন তার কম হচ্ছে না। কেননা নতুনদের মধ্যে একটা বিষয় সব সময় লক্ষ্য করি, তা হচ্ছে তারা অনেক শিল্পীর গান অনুকরণ করে নিজের মতো করে গাওয়ার চেষ্টা করে। তারা খুব ভালো করছে। যা এ ঘরানার গানের জন্য অনেকটা ইতিবাচক দিক। এককথায় বলতে চাই, ফোক ঘরানার গানে পরিবর্তন এলেও অনেক গান ভালো হচ্ছে।

 

কল্যাণী ঘোষ

মাইজভাণ্ডারি গানের অবস্থা এখনো ভালো। সত্তরের দশকে আমি যখন মাইজভাণ্ডারি গান শুরু করি তখন আমিই একমাত্র এই গানের নারীশিল্পী ছিলাম। কিন্তু দুঃখ হলো এসব গানকে অবিকৃতভাবে ধরে রাখতে আর কেউ এখন সাধনা করে না। নতুনভাবে এসব গান রচনার তাগিদ অনুভব করে না। পুরনো গানগুলোর চর্বিতচর্বণ করে যাচ্ছে এখনকার শিল্পীরা।

 

কালা মিয়া

বাউল গান আমার রক্তে মিশে আছে। তারপরও কিন্তু আমি সব ধরনের আঞ্চলিক গান গাওয়ার চেষ্টা করি। শুধু তাই নয়, আমি নতুন করে, আধুনিকভাবে গানগুলো গাওয়ার চেষ্টা করি। এ ছাড়া এই সময়ের বেশকিছু নতুনশিল্পী ভালো ফোক গান করছে। আমি মাঝেমধ্যে তাদের সঙ্গে স্টেজে গান করি। আমার অনেক ভালো লাগে তাদের গান।

 

ফকির শাহাবুদ্দিন

সংগীত হচ্ছে একটি গুরুমুখী বিদ্যা। আমাদের নতুন শিল্পীরা কেন জানি গুরুমুখী হতে চায় না। গানচর্চা করছে না। এ ছাড়া টিভি চ্যানেলগুলো তাদের অবসর থাকতে দিচ্ছে না। সব মিলিয়ে একটি অস্থির পরিবেশ বিরাজ করছে আমাদের এই গানের জগতে। তবে এই ফোক গান হচ্ছে আমাদের শিকড়ের গান। আমাদের তা ভুলে গেলে চলবে না।

 

বিউটি

ফোক গান হলো মাটির গান। শিকড়ের গান। এ গানের মাধ্যমে আমার আজকের পরিচয় পাওয়া। এমন কিছু ফোক গান করতে চাই, যেগুলো মানুষ আজীবন মনে রাখবে। কিছু কিছু প্রতিবন্ধকতার মাঝেও এ ধারায় অনেক ভালো গান হচ্ছে। যার মাধ্যমে আমরা নিজেদের দেশ, ঐতিহ্যকে বাইরের দেশের কাছে তুলে ধরতে পারছি। দেশের ঐতিহ্যকে জানানোর সুযোগ পাচ্ছি।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর