বৃহস্পতিবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
অভিযোগের তীর শিল্পকলা একাডেমির দিকে

ভরা মৌসুমেও দেখা নেই যাত্রাপালার

ভরা মৌসুমেও দেখা নেই যাত্রাপালার
এখন চলছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃৃতি যাত্রাপালার ভরা মৌসুম। অথচ এই মৌসুমেও মঞ্চস্থ হচ্ছে না যাত্রাপালা। অন্যদিকে শিল্পকলা একাডেমি ৬৪ জেলায় চলতি মাসে যাত্রা উৎসবের আয়োজন করলেও যাত্রা সংশ্লিষ্টরা এ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ ও পান্থ আফজাল

 

মিলন কান্তি দে

(সভাপতি, বাংলাদেশ যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদ)

ঐতিহ্যবাহী যাত্রাশিল্পের বিলুপ্তি ঠেকাতে সরকার কোনো কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করছে না। যাত্রা মৌসুমে স্বাভাবিক নিয়মানুযায়ী ছয়/সাত মাস যাত্রা প্রদর্শনী হওয়ার কথা থাকলেও দুই মাসের বেশি কোনো দলই অনুষ্ঠান করতে না পারায় যাত্রাশিল্পে রীতিমতো দুর্ভিক্ষ চলছে। অনিশ্চয়তা, হতাশা ও দুর্ভোগের কবলে যাত্রাশিল্পীরা দিনাতিপাত করছেন।

 

এম এ মজিদ

(সাধারণ সম্পাদক, যাত্রা পালাকার পরিষদ)

প্রচলিত নিয়মানুযায়ী দুর্গাপূজার সপ্তমী থেকে যাত্রা মৌসুম শুরু হয়। শেষ হয় ১৩ এপ্রিল। এবার যাত্রা মৌসুম শুরুর পর খুলনার দুটি ধর্মীয় যাত্রা সংগঠন ‘মা ক্যাটকরণী’ ও ‘শুভ যাত্রা ইউনিট’ ৫ দিন ধরে ৫টি পালা করেছে। তাও আবার মন্দিরকেন্দ্রিক খোলা মঞ্চে। নিবন্ধন ছাড়া নামসর্বস্ব দুটি দল শ্রীমঙ্গলের চা-বাগানে পালা করেছে। এ ছাড়া এ পর্যন্ত আর কোনো আয়োজন হয়নি। খুলনা ও সাতক্ষীরার দুটি স্থানে অনুমতি নিয়েও সেখানে পালা মঞ্চস্থ সম্ভব হয়নি। অথচ যাত্রাপালার এখন মৌসুম প্রারম্ভ পর্ব চলছে। দেশের দীর্ঘদিনের যাত্রা দল মালিকরা এবার সংগঠিত হননি। এর কারণ যাত্রার নামে অশ্লীল নাচ আর জুয়া হাউজির কারণে দর্শকরা এর প্রতি আগ্রহ হারিয়েছে। একই কারণে স্থানীয় প্রশাসনও অনুমতি দেয় না। যাত্রাশিল্পের স্থায়ী নীতিমালা প্রণয়নের পর এই শিল্পটিকে শিল্পকলা একাডেমির ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। তাই এর ভালোমন্দ দেখার দায়িত্ব শিল্পকলার হলেও এ ব্যাপারে এই সংস্থার কোনো মাথাব্যথা নেই। ২০১৩ সালে নীতিমালা পাসের পর থেকে শিল্পকলা এ পর্যন্ত ৯ বার দেশব্যাপী যাত্রা উৎসবের আয়োজন করেছে। ১০৬টি দলকে নিবন্ধন দিয়েছে। শর্ত না মানার কারণে পরে ৩৬টি দলের নিবন্ধন বাতিল করেছে। চলতি মাসের ১২ ও ১৩ তারিখ ৬৪ জেলায় দশম যাত্রা উৎসব শুরু হবে। পরিতাপের বিষয় এই উৎসবে বাতিল হওয়া শাস্তিপ্রাপ্ত তিনটি দলকে অংশগ্রহণের সুযোগ দিচ্ছে শিল্পকলা একাডেমি। দল তিনটি হলো—খুলনার স্বদেশ অপেরা, মাগুরার চৈতালী অপেরা ও শরীয়তপুরের ডায়মন্ড নাট্যসংস্থা। আমার প্রশ্ন হলো- যে দলগুলোকে অনৈতিকতার কারণে শাস্তি দেওয়া হলো তারা আবার সুযোগ পায় কীভাবে? তাদের সুযোগ দেওয়া মানে অন্যদেরও অনিয়ম ও অনৈতিকতায় প্রশ্রয় দেওয়া। যা কারও কাম্য নয়।

 

তপন বাগ্চী

(যাত্রা গবেষক, উপপরিচালক বাংলা একাডেমি]

শুরুতেই শিল্পকলা একাডেমিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই দেশব্যাপী আবারও যাত্রা উৎসব করার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য। তবে শিল্পকলার কর্মকর্তাদের প্রতি আমার অনুরোধ নিয়মনীতি লঙ্ঘনের কারণে নিবন্ধন বাতিল হওয়া দলগুলোকে যেন আর সুযোগ দেওয়া না হয়। এই বাতিল হওয়া দলকে সুযোগ দিলে এই শিল্পের শৃঙ্খলা আরও ভেঙে পড়বে। এ ছাড়া প্রতিবারই দেখা যায় উৎসবে বিচারক হিসেবে যাত্রা সংশ্লিষ্টদের রাখা হয় না। এটি মোটেও যৌক্তিক নয়।

 

 লিয়াকত আলী লাকি (মহাপরিচালক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি)

এই বছরকে কিন্তু আমরা যাত্রার বছর হিসেবে দেখছি। নভেম্বরের ১২ ও ১৩ তারিখে শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে ৬৪ জেলায় যাত্রা নির্মাণ ও প্রদর্শনী হচ্ছে। আর যাত্রা উৎসব শুরু হবে ডিসেম্বর মাসে।

৬৪টি জেলায় প্রতিষ্ঠিত ১২টি যাত্রা দল এই উৎসবে অংশ  নেবে। এর মধ্যে আমরা ৫টি যাত্রা দলকে অনুদানও দেব। সামনের বছর মার্চ মাসেও যাত্রা উৎসব হবে।

এসব উদ্যোগ আসলে যাত্রাশিল্পের বিভিন্ন সংকট নিরসন করে নবযাত্রার উদ্দেশ্যে করা। আর অশ্লীলতার অভিযোগে অভিযুক্ত যে তিনটি দলের নিবন্ধন বাতিল হয়েছিল তাদের ইন্টারভিউ নেওয়ার জন্য ডাকা হচ্ছে শুধু। জাতীয় কমিটি তাদের সঙ্গে কথা বলবে, জবাবদিহি করবে।

অশ্লীলতা কেন করেছে, সামনে আবারও করবে কিনা! কারণ, তারা তাদের ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে। ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে বলেছে, তারা আর অশ্লীল যাত্রা প্রদর্শন করবে না। তাই আমরা তাদের আপিলের একটা সুযোগ দিচ্ছি মাত্র। তারা পরীক্ষা দেবে নতুন করে নিবন্ধনের উদ্দেশ্যে।

সর্বশেষ খবর