বুধবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
ইন্টারভিউ

মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র ছিল ৬ দফা

মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র ছিল ৬ দফা
চলচ্চিত্রের মিয়াভাই খ্যাত অভিনেতা আকবর পাঠান ফারুক। ছাত্র জীবন থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত তিনি। বঙ্গবন্ধুর ডাকে দেশকে হানাদার মুক্ত করার সংগ্রামেও ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। এখনো বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত স্বপ্ন পূরণে সক্রিয় তিনি। অভিনেতা ফারুক কথা বলেছেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে। তার কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

বাঙালির মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে কী বলবেন?

এ ক্ষেত্রে আমার মূল কথা হলো পাকিস্তানিদের কাছে বাঙালি জাতি ছিল বঞ্চিত। শিক্ষা, অন্ন, বস্ত্র, চাকরি, মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার, এক কথায় সর্বক্ষেত্রে ন্যায্য পাওনা বঞ্চিত ছিল বাঙালি জাতি। আর এই বঞ্চিত জাতি একসময় যখন বুঝতে পারল তারা পরাধীন, পাকিস্তানিরা তাদের হাত পা শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছে তখনই তারা মুক্তিযুদ্ধের দিকে এগিয়ে গেল। মুক্তিযুদ্ধের বিকল্প কোনো পথ ছিল না।

 

মুক্তিযোদ্ধারা কার ছায়ায় জড়ো হলো

একটি মানুষ যাকে তার বাবা-মা স্নেহ করে নাম রেখেছিলেন খোকা। যিনি সমৃদ্ধ সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখতেন তার নাম সারা দেশের মানুষের মনে ছড়িয়ে পড়ল। এই মানুষটির নাম শেখ মুজিবুর রহমান। আমাদের এই সাব কন্টিনেন্টে ব্রিটিশ আমল থেকে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী প্রমুখ নেতারা বাংলাদেশকে পরাধীনতার শেকল মুক্ত করার চেষ্টা করে পারেননি। এই ব্যর্থতায় বঙ্গবন্ধু কিন্তু‘ দমে যাননি। একসময় তিনি দ্বার থেকে দ্বারে গিয়ে দেশের আপামর জনতাকে স্বাধীনতার বিষয়টি বোঝাতে লাগলেন, বললেন আপনারা আমার সঙ্গে আসুন। গুটি কয়েক ছাড়া সবাই তার ডাকে সাড়া দিলেন। এরপর শুরু হলো মুক্তির সংগ্রাম।

 

এই সংগ্রামের মূল মন্ত্র কী ছিল?

স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল মন্ত্র ছিল ৬ দফা আন্দোলন। যাকে বলা হয় স্বাধীনতার প্রকৃত মন্ত্র। আমার মতে আসলে এটি ৬ দফা নয়। ৬টি পাখনার মধ্যে একটি পিলার। মানে ১ দফা। এই দফা নিয়ে বাঙালি জাতি ’৬৯-এর গণআন্দোলন, ’৭০-এর জাতীয় নির্বাচন আর ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। বিজয় ছিনিয়ে আনে।

 

মুক্তিযুদ্ধে উজ্জীবিত হতে বাঙালির অনুপ্রেরণার উৎস কী ছিল?

এই উৎস হলো বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের সেই ঐতিহাসিক ভাষণ। এই ভাষণে তিনি বাঙালি জাতিকে আগেই দিকনির্দেশনা দিয়ে বলেছিলেন, ‘প্রতিটি ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো’ ও ‘রক্ত যখন দিয়েছি আরও দেবো, এ দেশকে মুক্ত ছাড়বো ইনশাল্লাহ’। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে বঙ্গবন্ধুর এই নির্দেশনা জনগণের মধ্যে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো কাজ করেছিল। বঙ্গবন্ধু যুদ্ধ শুরুর আগেই জেনেছিলেন তাকে বন্দী করা হবে। তাই ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, ‘আর যদি একটা গুলি চলে...আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি তোমাদের যা কিছু আছে তা নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করবে।’ বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে অবশেষে ৩০ লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে আর ২ লাখ ৬৫ হাজার মা বোনের আত্মত্যাগে বাঙালি জাতি পেল একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ, বিশ্ব মানচিত্রে একটি স্বতন্ত্র পতাকা।

 

মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত লক্ষ্য বাস্তবায়ন হয়েছে কি?

বঙ্গবন্ধু মহানুভব চিন্তা আর যে দূরদর্শী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেছিলেন, ‘এই রক্তের ঋণ শোধ করে যাবো, এই দেশটাকে সোনার বাংলা বানাবো’ আর এই লক্ষ্য নিয়ে নিজ গুণে সাফল্যের পথ ধরে যখন হেঁটে যাচ্ছিলেন তখনই কতিপয় বেইমান তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা মানে স্বাধীনতা, ভালোবাসা আর বাঙালি জাতিকে হত্যা করা। যা কখনো মেনে নেওয়া যায় না। সৌভাগ্য ক্রমে বঙ্গবন্ধুর দুই সুযোগ্য কন্যা বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন। আর আমরা পেয়েছি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে আমাদের মহান নেত্রী শেখ হাসিনাকে। তিনি তার জীবনের সব কিছু তুচ্ছ করে দেশ ও জনগণের কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করেছেন। স্বাধীনতার পর এতবড় অর্জন কখনই অর্জিত হয়নি। তিনি তার জীবনের বিনিময়ে হলেও এদেশের মানুষের দরিদ্রতা দূর করে সবার মুখে হাসি ফোটাবেন। এটি বাঙালি জাতির জন্য পরম সৌভাগ্য ও গর্বের বিষয়।

 

এমপি নির্বাচিত হলে পার্লামেন্টে প্রধমে কী বলবেন?

প্রথমেই বলব বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কেউ যেন বাজে কথা বলতে না পারে তার জন্য কঠোর আইন প্রণয়ন করা হোক। এরপর দেশ আর জনগণের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করব। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

সর্বশেষ খবর