মঙ্গলবার, ১ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

চলচ্চিত্রকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনতে হবে

চলচ্চিত্রকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনতে হবে

চলচ্চিত্রের মিয়াভাই খ্যাত জনপ্রিয় অভিনেতা আকবর হোসেন পাঠান ফারুক এবার সক্রিয়ভাবে একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন। বিপুল ভোটে ঢাকা-১৭ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। সংসদ সদস্য হওয়ার পর চলচ্চিত্র, দেশ ও জনগণকে নিয়ে তার ভাবনা কেমন। তার বলা সেই কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

একজন জনপ্রিয় অভিনেতা থেকে জনপ্রতিনিধি হলেন, অনুভূতি কেমন?

ছাত্রজীবন থেকে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি করে আসছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ হৃদয়ে লালন করছি। তিনি সংগ্রাম করতে পছন্দ করতেন। তাঁর এই সংগ্রাম ছিল দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর সংগ্রাম। আমিও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করতে গিয়ে সেই ধারায় পড়ে গেছি। সবচেয়ে বড় আনন্দ হলো, এখান থেকেই বঙ্গবন্ধু নির্বাচন করেছেন। তাঁরই নির্বাচনের জায়গায় এভাবে আসব ভাবতেও পারিনি। এলাকার প্রতিটি মানুষকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাই। প্রমাণ করেছেন তারা আমাকে ভালোবাসেন। তাদের কাজকর্ম করার দায়িত্ব এখন আমার। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও জনগণ আমার বিশাল মূল্যায়ন করেছেন। সরকারের কাছে গিয়ে মানুষের কথা বলার জন্য এই সুযোগ আমার খুবই দরকার ছিল। সবাই সবকিছু বলতে পারেন না। অনেক সময় ক্ষুদ্র একটি জিনিস হয়তো অনেক বড় কাজে লেগে যায়। একজন সামান্য মানুষ হিসেবে আমি হয়তো সৃষ্টিকর্তার রহমতে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর জনগণের ভালোবাসায় সংসদে গিয়ে মানুষের দুর্দশার কথা বলতে পারব, তাদের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করতে পারব। এই কাজ সফলভাবে করতে পারলেই আমি সত্যিকার অর্থে নিজেকে একজন সফল জনপ্রতিনিধি মনে করতে পারব।

জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে কোন বিষয়টিকে প্রাধান্য দেবেন?

বঙ্গবন্ধুৃ দেশ ও জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে যা করতে চাইতেন তাকে অসময়ে ঘাতকরা পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ায় তিনি সব স্বপ্ন পূরণ করে যেতে পারেননি। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত স্বপ্ন পূরণে কাজ করে যেতে চাই। আমি যে এলাকা থেকে নির্বাচিত হয়েছি সেখানেও উন্নয়নমূলক কাজে অনেক গ্যাপ রয়ে গেছে। গরিব-দুঃখী মানুষের অনেক সমস্যা আছে। সে সব সমস্যার কথা সংসদে তুলে ধরে সব অভাব-অনটন দূর করতে চাই।

আপনার মূল নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি কি ছিল?

যখন নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করতে যাচ্ছিলাম তখন ঠিক করলাম শুরুটা করব ভাষাণটেক এলাকা থেকে। ওই এলাকার অনেক সমস্যা সম্পর্কে আগে থেকেই জানতাম। কারণ মিরপুরে আমার নানাবাড়ি। সেখানে গিয়ে দেখলাম স্থানীয় মানুষ অনেক কষ্টে আছে। আওয়ামী লীগের মানুষ অনেক আছে সেখানে। কিন্তু তাদের মধ্যে মনকষাকষি, পরস্পরের প্রতি স্নেহ, মমতা, ভালোবাসা সহমর্মিতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে ক্ষতিকর। এই সমস্যা দূর করতে আমি চোখ বন্ধ করে প্রথমে আল্লাহতায়ালা, তারপর বাবা-মা, এরপর বঙ্গবন্ধু এবং আমার মহান নেত্রী শেখ হাসিনাকে স্মরণ করলাম। মনে হলো সমাধান পেয়ে গেছি। নেত্রী যেন আমাকে বলছেন, ‘মানুষের জন্য কাজ কর তুই’, তাই তিনি আমাকে এই এলাকা থেকে নির্বাচন করতে দিলেন। এখানে গত ১৬-১৭ বছর ধরে আওয়ামী লীগের কোনো জনপ্রতিনিধি ছিল না। তাই এখানকার মানুষের অভাব-অনটনও অনেক আছে। যেমন মহাখালীর ৭ তলাসহ একটি অংশ, মাটিকাটা, কচুক্ষেত এলাকা উন্নয়নবঞ্চিত মনে হয়েছে। এসব দেখে ঠিক করলাম নির্বাচনের আগেই সবাইকে একতাবদ্ধ করে উন্নয়নের পথে এগোতে হবে। অল্প সময়ের মধ্যে এই কঠিন কাজটি সহজে করতে পারব ভাবিনি। শেষ পর্যন্ত পেরেছি, এটিই আমার সার্থকতা। এবার সমৃদ্ধ এলাকা বিনির্মাণে সংসদে কথা বলব।

ঐক্যবদ্ধ করাটা কীভাবে সম্ভব হলো?

এটি আসলে কোনো গেম বা ম্যাজিক নয়। এটি ছিল আমার প্রতি জনগণের ভালোবাসা। পলিটিশিয়ানরা গেম করে। আমি তা করি না। আমার স্বপ্ন একটিই বঙ্গবন্ধু এবং আমার নেত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে ভূমিকা রাখা। নেত্রী সোনার বাংলাকে নতুন একটি আসনে বসিয়েছেন। শতভাগ পূর্ণতা অর্জন করতে এখন নিরলস কাজ করে যেতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় দেশ ও জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করতে চায় এবং করে।

সংসদে গিয়ে প্রথম চাওয়াটা কি হচ্ছে?

১৯৬৬ সাল থেকে যে পৃথিবী দেখা শুরু করেছি ২০১৮ সালে এসে সেই পৃথিবী আবার দেখছি। বঙ্গবন্ধু যে চোখ দিয়ে তাকিয়ে দেখতেন আর ভাবতেন এ দেশে ক্ষুধা থাকবে না, থাকবে মানুষের মুখে শুধুই হাসি। সেই স্বপ্ন নিয়ে আওয়ামী লীগ নিরবচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। সংসদে গিয়ে সরকারের কাছে বঙ্গবন্ধুর দেখা বাংলাদেশকে চাইব। আশা করব সরকার মুখ ফিরিয়ে নেবে না। আমার নেত্রী হাসতে হাসতে বলবেন, ‘তোমার কাজ দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ানো, তাদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করা, তুমি তাই কর...’।

চলচ্চিত্রকার হিসেবে এ শিল্পের উন্নয়নে আপনার ভূমিকা কি হবে?

১৯৫৭ সালে বঙ্গবন্ধু এই চলচ্চিত্র শিল্প প্রতিষ্ঠা করে দিয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসার এই শিল্পটি এখন নানা দৈন্যদশার মধ্যে রয়েছে। একে ঢেলে সাজাতে হবে। দেশ থেকে জঙ্গিবাদসহ নানা নেতিবাচক দিক উৎপাটনে চলচ্চিত্রের বিকল্প নেই। একটি চলচ্চিত্রই পারে সুষ্ঠু জনমত গড়ে তুলে দেশ, সমাজ ও জাতিকে জাগ্রত করতে। তাই চলচ্চিত্রকে আবার মর্যাদার আসনে বসাতে হবে। চলচ্চিত্রের মানুষ হিসেবে যখনই কেউ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে গেছেন তিনি কাউকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেননি। দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে সমানভাবে সহযোগিতা করেছেন। তাকে বলব ‘চলচ্চিত্রের উন্নয়নে আরও কিছু করা প্রয়োজন। দরকার হলে শেখ হাসিনা ফাউন্ডেশন নামে একটি ফান্ড গঠন করে দিন। এতে এই শিল্প ও শিল্পের মানুষরা আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। চলচ্চিত্র এমন একটি সুদৃঢ় অবস্থানে পৌঁছে যাবে যা দেখলে বিশ্ববাসী গর্বের সঙ্গে বলবে এটি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র।’ আরেকটি বিষয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে উল্ল্খে করব। আর তা হলো- ‘এই শিল্পের উন্নয়নের স্বার্থে চলচ্চিত্রকে তথ্য মন্ত্রণালয় নয়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে আসা উচিত।’

 

 

সর্বশেষ খবর