বুধবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
ইন্টারভিউ

মনের বয়স আজও ২৫ বছর

মনের বয়স আজও ২৫ বছর

বরেণ্য অভিনেতা, নাট্যকার ও নির্দেশক আবুল হায়াত। থিয়েটার, টিভি নাটক, বিজ্ঞাপন ও চলচ্চিত্রে এখনো তার উপস্থিতি দর্শকদের মুগ্ধ করে। ১৫ ফেব্রুয়ারি আসছে তার অভিনীত ‘ফাগুন হাওয়ায়’ চলচ্চিত্র। আর একুশে বইমেলায় এসেছে তার লেখা বই। এসব  বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন- পান্থ আফজাল

 

কেমন আছেন? ৪ ফেব্রুয়ারি আপনার বিবাহবার্ষিকী ছিল। কীভাবে উদযাপন করলেন?

জি, ভালো আছি। ১৯৭০ থেকে একত্রে ৪৯ বছর পার করলাম। অথচ মনে হচ্ছে, এই তো কালই বুঝি...। মনে তো আমি এখনো ২৫ বছর।

 

প্রতিবারের মতো এবারের বইমেলায়ও মেয়ের প্রচ্ছদে বই বের হচ্ছে...

গতকালই বইমেলায় এসেছে। ‘বিষফল’ উপন্যাসটি প্রিয়মুখ থেকে প্রকাশিত। এটির প্রচ্ছদ করেছে বিপাশা হায়াত। বরাবরের মতো এ বছরও মিস করতে চাইনি। একজন ৫০-৫৫ বছর বয়সী মানুষের ব্যক্তিগত সমস্যা আর বিবাহ নিয়ে দ্বিধা, বিপর্যয়  উঠে এসেছে এই উপন্যাসে। ভদ্রলোকটি বিয়ে করবে কি করবে না তা নিয়ে থাকে দ্বিধায়।

 

এই মাসেই আপনার অভিনীত ‘ফাগুন হাওয়ায়’ চলচ্চিত্রটি প্রেক্ষাগৃহে আসছে। ইতিমধ্যে সেন্সরও পেয়েছে। চলচ্চিত্রটি নিয়ে প্রত্যাশা কেমন?

ভাষা আন্দোলনের একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র এই চলচ্চিত্রে খুঁজে পাওয়া যাবে। ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সেভাবে কোনো ছবি  তৈরি হয়নি। আশা করি দর্শকদের ভালো লাগবে।

 

রিজওয়ান খানের রচনা আর কায়সার আহমেদের পরিচালনায় ‘চাঁন বিরিয়ানী’ নামের একটি ধারাবাহিকে অভিনয় করছেন। এটাতে আপনার চরিত্র সম্পর্কে জানতে চাই...

চাঁন বিরিয়ানী নাম শুনেই বুঝতে পারছেন গল্পটা কী নিয়ে! পুরান ঢাকার গল্প এটি। স্বভাবে, বেশ-ভুষা আর কথাবার্তায় পুরান ঢাকার চরিত্র খুঁজে পাবেন। এটাতে আমি হোমিওপ্যাথি ডাক্তার; জুঁই ও তানিয়ার মামা।

 

মঞ্চে নিয়মিত না হওয়ার কারণ কী?

বিভিন্ন ব্যস্ততায় মঞ্চে এখন নিয়মিত কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।

 

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সঙ্গে আপনার সম্পৃক্ততা জানতে চাই ।

তখন আমি ঢাকা শহরে ছিলাম। আমি মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করিনি। মাঝে মাঝে বন্ধুরা এলে তাদের কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধের খবরাখবর জানতাম, খোঁজ নিতাম। মূলত তারাই আমাকে দেশের সব অবস্থার কথা বলত। আমি মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত অসুস্থ ছিলাম। হাসপাতালে তখন ভর্তি। প্রায় ৩-৪ মাস। সেই সময় তো স্বাধীনতার যুদ্ধ চরম রূপ ধারণ করেছিল। ১৯৬৯, ’৭০ ও ’৭১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত আমরা দলবেঁধে নাটক করেছি। সেই সময় আমরা সরকারবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। রাজপথে সবাই মিলে আন্দোলন করেছি। তবে সেই চরম সময়ে অসুস্থ থাকার কারণে প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধ করা সম্ভব হয়নি।

 

কী ধরনের নাটক আপনারা তখন করতেন?

আমরা নাটক দিয়েই আমাদের আন্দোলন চালিয়েছি। মূলত সব নাটকই ছিল সংগ্রাম ও বিপ্লবকে উপলক্ষ করে। পাকিস্তানি শাসকরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক নিষিদ্ধ করেছিল। কিন্তু আমরা সেই নিষেধ অমান্য করে মাঠে-ঘাটে, হলে, শহীদ মিনারে, ট্রাকে নাটক করেছি। সেই সময় আমরা করেছি রক্তকরবী, বৈকুণ্ঠের উইল, রক্ত দিলাম স্বাধীনতার জন্য, চাঁদ উঠবে ইত্যাতি নাটক। বিপ্লব ও সংগ্রামকে উপজীব্য করে সেই সময়কার এই নাটকগুলো আমরা আন্দোলনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছি। এক একটা নাটকের ব্যপ্তি কখনো ছিল ৩০ মিনিটের, কখনো ১ ঘণ্টার বা তারও বেশি। হাসান ইমাম ভাই আমাদের দলের প্রধান ছিলেন। আমরা দেশের বিভিন্ন স্থানে, পথে-ঘাটে, মঞ্চে দলবেঁধে নাটক করতাম। আমরা এক স্থান থেকে আরেক স্থানে ঘুরে ঘুরে এসব নাটক প্রদর্শন করতাম।  

 

স্বাধীন দেশের কাছে আপনার প্রত্যাশা কী?

আমি অনেক কিছুই পেয়েছি। দেশ পেয়েছি, একটি পতাকা পেয়েছি। স্বাধীনতা পেয়েছি। এর থেকে বড় পাওয়া আর কিছুই হতে পারে না। এই ঋণ শোধ হওয়ার নয়। আমি এই স্বাধীন দেশে বসবাস করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর