সোমবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
ইন্টারভিউ

এখনকার ছবিতে মাটি ও মানুষের চিত্র নেই

এখনকার ছবিতে মাটি ও মানুষের চিত্র নেই
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৭-১৮ প্রদানের জন্য গঠিত জুরি বোর্ডের অন্যতম সদস্য হয়েছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী রোজিনা। চলচ্চিত্রের সার্বিক দিক নিয়ে তিনি কথা বলেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে। তার বলা কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

আবারও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জুরি বোর্ডের সদস্য হলেন, চলচ্চিত্রের বর্তমান অচলাবস্থায় এই পদ আপনার জন্য কতটা স্বাচ্ছন্দ্যের?

হ্যাঁ, আমি ২০১০-১১ বছরের কমিটিতেও সদস্য ছিলাম। তখনকার চলচ্চিত্রের প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন। ছবির গল্প, মান, নির্মাতা, অভিনয়শিল্পী উল্লেখ করার মতো ছিল। বর্তমানে তেমন মানসম্মত ছবি দিতে পারছেন না নির্মাতা-কলাকুশলীরা। এ অবস্থায় এ দায়িত্ব পালন করা কিছুটা হলেও চ্যালেঞ্জ বলে মনে হয় আমার কাছে।

 

কেন চ্যালেঞ্জ বলে মনে হয়?

দেখুন, একটি ছবির শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারণ করতে গেলে ছবিটির স্ক্রিপ্ট, নির্মাণ, অভিনয়, মিউজিক, ফটোগ্রাফি- মানে এক কথায় সব বিষয়ের মান নির্ণয় করতে হয়। এখন মানের দিকটি বহুগুণে হ্রাস পেয়েছে। এর প্রমাণ দর্শকগ্রহণযোগ্যতার অভাবে সিনেমা হল দর্শকশূন্য হয়ে পড়া। পর্যাপ্ত মানসম্মত ছবি না পেলে কীভাবে শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারণ করা যাবে বলুন। তাই এ বিষয়টি এখন চ্যলেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

চলচ্চিত্রকারদের অভিযোগ, এক সময় এফডিসিভিত্তিক কমার্শিয়াল ছবিকে জাতীয়ভাবে পুরস্কৃত করা হতো। এখন ভিন্ন ধারার ছবির আধিক্য থাকে, কেন?

বিষয়টি উদ্বেগে। এর জন্য দায়ী এখনকার কমার্শিয়াল চলচ্চিত্রকাররা। আগের ছবিগুলোতে বাঙালি সংস্কৃতির ছোঁয়া থাকত। কিন্তু এখনকার ছবির বেশির ভাগই বাস্তবতাবিবর্জিত বিদেশি ছবির নকল বা অনুকরণে নির্মিত বলে এতে নিজ দেশের মাটি ও মানুষের চিত্র খুঁজে পাওয়া যায় না।

 

আগে বিদেশেও বাংলাদেশের কমার্শিয়াল ছবি পুরস্কৃত হতো, এখন হচ্ছে না কেন?

অবশ্যই, আগে বিদেশি উৎসবে সরকারিভাবে আমন্ত্রিত হয়ে বাংলাদেশের ছবি যেত। যে দেশের ছবি যাচ্ছে এবং যে দেশে উৎসব ও পুরস্কৃত হচ্ছে দুদেশের সরকারই এর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকত। আমন্ত্রিত নির্মাতা ও শিল্পীদের আসা-যাওয়া এবং থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করত উভয় দেশের সরকার। অনুষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতেন আয়োজক দেশের মন্ত্রী আর সচিবরা। সত্যি বলতে এখন মানসম্মত কমার্শিয়াল ছবি হয় না।

 

ভিন্ন ধারার যে সব ছবি বিদেশে পুরস্কৃত হচ্ছে তাও তো এদেশের দর্শক দেখে না।

এখন ভিন্ন ধারার ছবি বলে যে সব নির্মাণ হচ্ছে তার সঙ্গে এদেশের শিকড় থেকে শিখরের দর্শকরা তেমন পরিচিত নয়। আর এখন তো আগের মতো সরকারিভাবে বিদেশে চলচ্চিত্র উৎসব বা পুরস্কারের আয়োজন হয় না। বেশ কিছু ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান এর আয়োজন করে। আয়োজকরাই জুরি বোর্ডের সদস্য হয় এবং তারাই সার্টিফিকেট ও ট্রফি দেয়। টাকা দিয়েও এসব অ্যাওয়ার্ড কিনতে পাওয়া যায়। উৎসবের নামে বিদেশে গিয়ে সিনেমা হল ভাড়া করে এসব ছবি দুই-একদিনের জন্য প্রদর্শন করা হয়।

 

দেশীয় চলচ্চিত্রের এই ধসের জন্য দায়ী কারা?

চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত সবাই এর জন্য দায়ী। দেশে ভালো গল্পের অভাব না থাকা সত্ত্বেও নকল, অবাস্তব গল্পের নির্মাণ, শিল্পীরা সহজে বাড়ি-গাড়ি করার জন্য অভিনয় করে, এতে প্রকৃত অভিনয় আর হয়ে ওঠে না। সিনেমা হলে উন্নত ও আধুনিক ব্যবস্থার অভাব- এসব নানা কারণে দেশীয় চলচ্চিত্রের অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়েছে। বিগ বাজেটের বিদেশি ছবি আমদানি করে এ সংকট কাটানো সম্ভব নয়, কারণ এটি হলো অসম প্রতিযোগিতা।

 

অভিনয়ে ফিরছেন কখন?

ফেরার ইচ্ছা থাকলেও মানসম্মত গল্প ও দক্ষ নির্মাতার অভাবে ফিরতে পারছি না। ভালো ও উপযুক্ত চরিত্রের গল্প পেলে অবশ্যই অভিনয়ে ফিরব।

সর্বশেষ খবর