চলচ্চিত্রের রিমেক বা পুনর্নির্মাণ নতুন কোনো বিষয় নয়। আগের কোনো জনপ্রিয় ছবি দীর্ঘদিন পুনর্নির্মাণ করে দর্শক মন কাড়ার চেষ্টাই হচ্ছে রিমেকের মূল উদ্দেশ্য। শুধু দর্শক মন কাড়া নয়, নির্মাতার বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়াটাও এই রিমেকের আরেকটি লক্ষ্য। বর্তমান সময়ে রিমেক এসব উদ্দেশ্য পূরণে কতটা সমর্থ হবে তা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল, এ কথা চলচ্চিত্রকারদের। সম্প্রতি দেশীয় পাঁচটি চলচ্চিত্র রিমেকের সিদ্ধান্ত নিয়েছে একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। ছবিগুলো হলোÑ বেদের মেয়ে জোসনা, মোল্লা বাড়ির বউ, মনের মাঝে তুমি, গাড়িয়াল ও নসিমন। আশি থেকে দুই হাজার সালের শুরুর দিকে নির্মিত এই জনপ্রিয় ছবিগুলো এখন রিমেক করলে কতটা ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে? এমন প্রশ্নে এদেশে বলিউডের ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ ও ‘সাজান’ ছবির রিমেক করা প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান বলেন, আগে যখন রিমেক হতো তখন পুরনো ছবি দেখার বিকল্প কোনো মাধ্যম ছিল না। এখন ইউটিউব সিডি ডিভিডিসহ নানা মাধ্যমে চাইলেই দর্শক যে কোনো দেশের যে কোনো নতুন-পুরনো ছবি সহজেই দেখতে পারছে। এ অবস্থায় বর্তমানে দর্শক রিমেক ছবি দেখবে কিনা জানি না। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র প্রযোজক ও প্রদর্শক ইফতেখার নওশাদ বলেন, রিমেক করা যায় তবে সেটি হুবহু হলে চলবে বলে মনে হয় না। থিম ঠিক রেখে গল্পকে যদি সময় উপযোগী করা যায় তাহলে দর্শক দেখতে পারে। মানে সময়ের পথে হাঁটতে হবে। জনপ্রিয় চিত্রনায়ক নাঈম তার অভিনীত প্রথম ছবি ‘চাঁদনী’-কে রিমেক করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন বছর দুয়েক আগে। পরে তিনি তার সিদ্ধান্ত থেকে কেন সরে এলেন সে কথা বলতে গিয়ে বলেন, দেখুন সময় আর পরিস্থিতি দিনে দিনে পাল্টায়। চাঁদনী যে সময় নির্মিত হয় সেই সময় আর এ সময় এক নয়। এখন যদি সেই চাঁদনী নির্মাণ করি তাহলে দর্শক কোনোভাবেই সেটি দেখবে না। হয়তো আধুনিক করে নির্মাণ করা যেতে পারে। সত্তরের দশকে নির্মিত ‘দোস্ত দুশমন’ ছবিটি রিমেক করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন জনপ্রিয় নায়ক ডি এ তায়েব। তিনি বলেন, একটা সময় গবেষণা করে দেখলাম এখন আর রিমেক ছবি চলবে না। কারণ দর্শকের রুচি পাল্টেছে। সময় উপযোগী, আধুনিক এবং নতুন কিছু পেলেই দর্শক তাতে সাড়া দেবে। এর উদাহরণ হলো ২২ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পাওয়া ‘অন্ধকার জগত’ ছবিটি। এটি বর্তমান চিন্তাভাবনা আর প্রেক্ষাপটের আলোকে মৌলিক গল্পে নির্মিত বলে চলচ্চিত্রের এই দুঃসময়ে আশাতীত সাড়া পাওয়া গেছে। প্রথম সপ্তাহে ৫৩, দ্বিতীয় সপ্তাহে আরও ১০ এবং চলতি সপ্তাহে আরও ৭টি সিনেমা হলে নতুন করে রিলিজ হয়েছে ছবিটি। যা দেশীয় চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে একটি রেকর্ড বলে জানান সিনেমা হল মালিকরা। ডি এ তায়েব বলেন, এটি যদি নতুন আঙ্গিকের না হয়ে পুরনো কোনো ছবির রিমেক হতো তাহলে হয়তো এই সাফল্য পেতাম না। অন্ধকার জগতের এই সাফল্যে এ ধরনের চলচ্চিত্র নির্মাণে উৎসাহিত হয়েছেন নির্মাতারা। বলেছেন বেশ কয়েকজন চলচ্চিত্রকার। শীর্ষ নায়ক শাকিব খান বলেন, আগে যেসব রিমেক ছবি হতো ওগুলো তো বেশ সুপারহিট হতো। ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ তার প্রমাণ। এখন হয় না। কারণ এখন আমরা কাজ নিয়ে সচেতন নই। কলকাতার ছবিগুলোর দিকে যদি তাকান দেখবেন বাণিজ্যিক যেসব সিনেমা হচ্ছে তার বেশির ভাগই রিমেক। আগে ‘ওয়েল এডুকেটেড’ এবং মেধাবী মানুষরা সিনেমার গল্প ও চিত্রনাট্য লিখতেন। তাদের কেউ এখন সিনেমার চিত্রনাট্য লিখছেন না। সৈয়দ শামসুল হক, যোশেফ শতাব্দী, হুমায়ূন আহমেদের মতো মানুষরা বেঁচে নেই। তাই অনেক সময় বাধ্য হয়েই রিমেক ছবি করতে হয়। প্রথমেই দর্শক কী চায় তা বুঝতে হবে। মানে সময়ের পথে হাঁটতে হবে। এ সাফল্যের ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে শাকিব তার নিজের সাম্প্রতিক কয়েকটি ছবি ও ডি এ তায়েবের ‘অন্ধকার জগত’ ছবির দর্শক গ্রহণযোগ্যতার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘এগুলো বর্তমান সময়কে ধারণ করে নির্মিত হয়েছে বলে দর্শক সাড়া পেয়েছে।’