বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

সিনেমা হল কেন বন্ধ থাকবে

 সিনেমা হল কেন বন্ধ থাকবে
চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সরকারকে আলটিমেটাম দিয়ে জানিয়েছে, ১১ এপ্রিলের মধ্যে তাদের দাবি পূরণ করা না হলে ১২ এপ্রিল থেকে সব সিনেমা হল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রদর্শকদের এ সিদ্ধান্তে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন চিত্র প্রযোজক, পরিচালক, শিল্পী কলাকুশলীরা। তাদের মধ্যে কয়েকজনের মন্তব্য তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

একতরফা সিদ্ধান্ত সুখকর হবে না : সুচন্দা                                

চলচ্চিত্র ব্যবসায় অচলাবস্থা নতুন কিছু নয়। এ সমস্যা চলচ্চিত্রের প্রতিটি সংগঠনের ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করা দরকার। প্রদর্শক এবং প্রযোজক-পরিবেশক এ দুটি সংগঠনের ওপরই ভর করে একটি দেশের চলচ্চিত্র শিল্প তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে। এ অবস্থায় সব পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা না করে প্রদর্শক সমিতির একতরফাভাবে সিনেমা হল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়ার মধ্যে কোনো যুক্তি নেই। এতে এ শিল্পের ক্ষতি আরও বাড়বে। অবশ্যই স্বীকার করছি পর্যাপ্ত ও মানসম্মত ছবি নির্মাণ হচ্ছে না। কীভাবে মানসম্মত ছবি নির্মাণ বাড়ানো যায় তা নিয়ে এখনো সময় আছে সব সংগঠনের কর্মকর্তারা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা চিহ্নিত করে সরকারের সামনে তা উস্থাপন করতে হবে। তাহলে আমার বিশ্বাস সংকট বলে আর কিছু থাকবে না।

 

সদিচ্ছাই সমাধানের পথ : শাকিব [অভিনেতা]

পর্যাপ্ত ও মানসম্মত ছবি নির্মাতারা দিতে পারছেন না বলে প্রদর্শকদের যে অভিযোগ তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। সমস্যা এখন যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তা থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হলো চলচ্চিত্রের সব সংগঠন আর মানুষদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে আলোচনায় বসে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা নিয়ে সরকারের কাছে যাওয়া। আমি মনে করি বিষয়টির দেখভালের জন্য একটি মন্ত্রণালয় রয়েছে। তারা কী করছে? চলচ্চিত্রের এ দূরাবস্থার দায়ভার তারা এড়াতে পারে না। সদিচ্ছা থাকলে কোনো সমস্যাই আর সমস্যা থাকে না। মূল কথা হলো চলচ্চিত্র শিল্পকে বাঁচাতে হলে সিনেমা হল আর প্রযোজককে আগে বাঁচাতে হবে।

 

আবু মুসা দেবু [সভাপতি এডিটরস গিল্ড]

সিনেমা হল বন্ধ করে দেওয়া মানে এ শিল্পকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া। প্রায় একদশক ধরে চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতি নিষ্ক্রিয়। এতে শিল্পের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। এর ওপর আবার প্রদর্শকরা যদি সিনেমা হল বন্ধের মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে চলচ্চিত্র শিল্প বলে কিছু থাকবে না। আমি স্বীকার করছি পর্যাপ্ত এবং মানসম্মত ছবির অভাব রয়েছে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এ অভাব দূর করা যায়। আমার মতে টিকিট বিক্রির গ্রোস সেলের ফিফটি ফিফটি প্রদর্শক এবং প্রযোজক ভাগ করে নিলে উভয় পক্ষ লাভবান হবে। চলচ্চিত্রের সব পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের বিকল্প নেই। শুধু সরকারের ওপর নির্ভর করে বসে থাকলে কোনো লাভ হবে না।

 

বদিউল আলম খোকন [মহাসচিব, পরিচালক সমিতি]

 দেশে কম ছবি নির্মাণ হওয়ার জন্য প্রদর্শকরাই দায়ী। কারণ প্রযোজকদের অভিযোগ অনুযায়ী টিকিট বিক্রির সঠিক হিসাব তারা কখনই পান না। এ কারণে একটি ছবি ব্যবসা করার পরেও তারা মূলধনই ফেরত পান না। প্রদর্শকরা উপমহাদেশীয় ছবি আমদানি করে সিনেমা হল চালাতে চান। এতে আমাদের কৃষ্টি-কালচারের প্রতি তাদের মমত্ববোধ কতটা রয়েছে সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন থেকেই যায়। এসব অমূলক দাবি আর হুমকি দিয়ে এ শিল্পের কল্যাণ অসম্ভব। আমার মনে হয় সরকার শিল্পটির প্রতি আরও মনোযোগ দিয়ে একে একটি সিস্টেমের মধ্যে নিয়ে আসবে।

 

মিশা সওদাগর [সভাপতি, শিল্পী সমিতি]

সিনেমা হল মালিকরা পর্যাপ্ত ও মানসম্মত কন্টেন্ট পাচ্ছে না এ কথা সত্য। তাই বলে বিদেশি ছবি আমদানির জন্য সরকারকে আলটিমেটাম দেওয়া মোটেও যুক্তিসঙ্গত নয়। পুরনো ঢাকায় একটি প্রবাদ আছে, ‘তোলা দুধে পোলা বাঁচে না’, মানে মায়ের দুধের পরিবর্তে বাইরের দুধ দিয়ে সন্তানকে বাঁচানো যায় না। তেমনি বিদেশি ছবি এনে চলচ্চিত্র শিল্পকে টিকিয়ে রাখা যাবে না। যেসব প্রখ্যাত প্রযোজক নির্মাণ ছেড়ে চলে গেছেন তাদের যদি আশ্বস্ত করে ফিরিয়ে আনা যায় তাহলে মানসম্মত ছবি নির্মাণ বাড়বে। প্রদর্শক আর প্রযোজক কীভাবে উভয়ে লাভবান হবে সেটি ঠিক করে নিতে হবে। এ শিল্পের সহযোগিতায় সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে।

 

খোরশেদ আলম খসরু [ সাবেক কর্মকর্তা, প্রযোজক সমিতি]

প্রদর্শকদের দেওয়া এ আলটিমেটাম একবারেই অযৌক্তিক। তাদের উত্থাপিত দাবি নিয়ে ইতিমধ্যে তারা তথ্য মন্ত্রণালয়ে মিটিং করেছে। সেখানে চলচ্চিত্রের সব সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। আমিও ছিলাম। মিটিংয়ে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে আরেকটি মিটিং করে সাফটা চুক্তির আওতায় কীভাবে সহজে ছবি বিনিময় করা যায় তা-সহ সার্বিক বিষয়ে সমাধান দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। তার পরবর্তী মিটিংয়ের জন্য অপেক্ষা না করেই এ ধরনের একতরফা সিদ্ধান্ত কেন নিলেন তা বুঝতে পারছি না। এটি সত্যিই দুঃখজনক।

 

অমিতাভ রেজা [নির্মাতা]

প্রদর্শকরা হুট করে এমন একটা সিদ্ধান্ত কেন নিলেন জানি না। তবে এটা অবশ্যই চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য দুঃখজনক। কারণ এটা তো তাদেরও ব্যবসা। এ ব্যবসায় লোকসান সব পক্ষেরই হচ্ছে। তাই সবাই একসঙ্গে আলাপ করে এর সমাধান বের করা যায়।

 সিনেমা হল মালিকদের এমন সিদ্ধান্তে নির্মাতাদের মধ্যে ছবি নির্মাণের উৎসাহ আরও কমে যাবে। সবার সমস্যা থাকবে, সে সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ সম্মিলিত উদ্যোগ।

সর্বশেষ খবর