বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

যেমন চলছে ঈদের সিনেমা

আলাউদ্দীন মাজিদ

 যেমন চলছে ঈদের সিনেমা

ঈদের ছবি মানেই এ মহাউৎসবের আনন্দ বহুগুণে বাড়িয়ে তোলা। দর্শক মানসম্মত নতুন ছবি দেখতে ঈদের জন্য মুখিয়ে থাকে। প্রদর্শকরাও আগ্রহ নিয়ে ঈদের ছবির জন্য অপেক্ষার প্রহর গোনে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দেশে সিনেমা হল উদ্বেগজনক হারে কম থাকলেও নির্মাতারা তাদের ছবি মুক্তি দিতে বেশ দৌড়ঝাঁপ করেছেন, আর তাই মাত্র  শতাধিক সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছে ১১টি ছবি। এতে প্রদর্শক-দর্শক এবং নির্মাতা, সবাই মোটামুটি সন্তুষ্ট। কারণ সিনেমা হলে আবার দর্শক ভিড় করেছে। দেশীয় ছবি দেখতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। দেশীয় চলচ্চিত্রের দুর্দিনে এটি অবশ্যই বড় ধরনের প্রাপ্তি।

ঈদে যেসব ছবি মুক্তি পেয়েছে সেগুলো হলো- রাজকুমার, কাজলরেখা, ওমর, দেয়ালের দেশ, জ্বীন-২, আহারে জীবন, লিপস্টিক, সোনার চর, গ্রিণ কার্ড, মায়া দ্য লাভ ও মেঘনা কন্যা।

 

রাজকুমার

সিনেমা-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, ঈদের ছবি হিসেবে বাণিজ্য ও দর্শকপ্রিয়তায় এগিয়ে রয়েছে হিমেল আশরাফ পরিচালিত শাকিব খান অভিনীত ‘রাজকুমার’। এ  ছবির গল্পের বিভিন্ন অংশ দর্শককে আবেগাপ্লুত করছে। সেই সঙ্গে শাকিবের অভিনয়ও পাচ্ছে ভূয়সী প্রশংসা। ফলে স্টার সিনেপ্লেক্সসহ বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে উল্লেখযোগ্য দর্শক সমাগম হচ্ছে। ঈদে সর্বাধিক ১২৬টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ‘রাজকুমার’। ঈদের আগের দিন থেকেই অগ্রিম টিকিট বিক্রি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শাকিব ভক্তরা জানান দিয়েছে ‘রাজকুমার’ এবার কতটা দাপট নিয়ে প্রেক্ষাগৃহ রাজত্ব করবে। অগ্রিম টিকিট বিক্রির শুরুর কিছু সময় পরেই সব টিকিট বিক্রি হয়ে যায়। দর্শক চাপে আগের শোর সঙ্গে সনি স্কয়ারে একটি, বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে দুটি এবং রাজশাহীতে বাড়ানো হয় একটি শো। সব মিলিয়ে সিনেপ্লেক্সে ‘রাজকুমার’ সিনেমার মোট শো দাঁড়ায় ১৭টি। অন্যদিকে ঐতিহ্যবাহী হল মধুমিতার কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বললেন, তার মধুমিতাতে শাকিব খানের ছবি মানেই উৎসবের আমেজ। সিঙ্গেল স্ক্রিনগুলোতে শাকিব খানের ছবি দিয়েই দুই পয়সা আয়ের মুখ দেখছে। রাজকুমার ঈদের দিন থেকে সন্ধ্যার প্রায় সব শো হাউসফুল যাচ্ছে। এদিকে ‘রাজকুমার’-এর এ সাফল্যে দারুণ খুশি শাকিব খান। দর্শকদের ভালোবাসায় অভিভূত এ নায়ক জানিয়েছেন কৃতজ্ঞতা। সোমবার সকালে সামাজিকমাধ্যমে শাকিব খান লিখেছেন- ‘অবিরামভাবে মিলিয়ন মিলিয়ন ভালোবাসা পাচ্ছে ‘রাজকুমার’। প্রিয় দর্শকদের জন্যই এটা সম্ভব হয়েছে। সবাইকে ভালোবাসা।’

মোনা : জ্বীন টু

সিনেমা হল মালিকদের কথায় বেশ সরব অবস্থানে রয়েছে ‘মোনা : জ্বীন টু’ ছবিটি। তবে সিনেপ্লেক্স ও সিনেমা হল মিলিয়ে ৮ পর্দায় চলছে ছবিটি। এ ছবির প্রযোজক জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আবদুল আজিজ বলেন, ‘ছবিটির সাফল্য আমার প্রত্যাশার শতভাগেরও বেশি ছাড়িয়ে গেছে। টিকিট সেলের দিক থেকে এ ছবিটি এক নম্বর অবস্থানে রয়েছে। প্রতিটি হলে টিকিট অগ্রিম সোল্ড আউট হয়ে যাচ্ছে, যা ঈদের অন্য কোনো ছবির বেলায় নেই। মোনা : জ্বীন টুর অ্যাডভান্স টিকিটি সেলিং আমার কাছে খ্বু ভালো লাগছে। সবচেয়ে বড় কথা দর্শক পরিবার নিয়ে বারবার ছবিটি দেখছে। দর্শকরা ছবিটি দেখে বের হয়ে সমস্বরে ‘মোনা জ্বীন...মোনা জ্বীন’ বলছে, এর চেয়ে বড় সাফল্য আর কী হতে পারে। দ্বিতীয় সপ্তাহে পলিসিগত কারণে সিনেমা হলের সংখ্যা আমি বাড়াব না। এর পরের সপ্তাহ থেকে বাড়বে মোনার সিনেমা হল।’

 

ওমর

সিনেমা হল সংখ্যায় দ্বিতীয় জায়গাটি মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ নির্মিত ‘ওমর’ এর দখলে। ২১টি হল পেয়েছে ছবিটি। জানা গেছে, প্রেক্ষাগৃহের মতো দর্শক সাড়ায়ও ‘রাজকুমার’ এর পরেই অবস্থান করছে এটি। বিশেষ করে ছবিটির গল্প দর্শক-সমালোচকদের মুগ্ধ করছে। সিঙ্গেল স্ক্রিনে খুব একটা সুবিধা না করতে পারলেও মাল্টিপ্লেক্সে অগ্রিম টিকিট বিক্রিতে রাজকুমারের পরেই ওমরের অবস্থান বলে জানিয়েছেন সিনেপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ঈদ ও বৈশাখ উপলক্ষে লম্বা ছুটি পেয়েছে মানুষ। ফলে ঈদের সিনেমা দেখতে দর্শকদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অগ্রিম টিকিট বিক্রিতে রাজকুমারের পরই ওমর ছবিটি রয়েছে। আগামীতে এভাবে চললে শো বাড়ানো হবে। ওমর সিনেমায় মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন- শরিফুল রাজ, শহিদুজ্জামান সেলিম, নাসির উদ্দিন খান ও দর্শনা বণিক।

আহারে জীবন

ছটকু আহমেদ পরিচালিত ফেরদৌস ও পূর্ণিমা অভিনীত ‘আহারে জীবন’ ছবিটি ঈদে দর্শকদের মুগ্ধ করলেও সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতার কারণে দর্শক প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে আক্ষেপ নির্মাতার। তিনি বলেন, ঈদের প্রথম তিন দিন দর্শক দুপুর দেড়টায় কীভাবে ছবিটি দেখবে। অথচ এমন শোয়ের টাইম বেঁধে দেওয়ায় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দর্শকরা আমার ছবিটি তেমনভাবে দেখতে পারেনি। তিনি আরও বলেন, এটি কমার্শিয়াল ছবি নয়।

সিনেমা হল মালিকরা চায় যেদিন ছবিটি রিলিজ হবে সেদিনই যেন মার মার কাট কাট ব্যবসা করে। কিন্তু বাণীসমৃদ্ধ এ ছবিটির ক্ষেত্রে তো কিছুটা সময় দিতে হবে। যা আমি পাইনি। অথচ যারা ছবিটি দেখেছে তারা আবেগে অশ্রু সংবরণ করতে পারেনি। তাই ছবিটি আগামীতে আবারও দর্শকের সামনে আনব।’

কাজলরেখা

গিয়াস উদ্দিন সেলিম পরিচালিত ‘কাজলরেখা’ লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্যের হিরন্ময় স্মারক ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’ অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে। কেবল দেশের মাল্টিপ্লেক্সগুলোতে মুক্তি পেয়েছে ছবিটি। স্টার সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে সবচেয়ে বেশি মূল্যের ভিআইপি হলে চলছে ‘কাজলরেখা’। তারপরও দর্শকদের ভিড় খারাপ নয়। কাজলরেখার অনেক শো হাউসফুল গিয়েছে। গিয়াস উদ্দিন সেলিম জানিয়েছেন, ‘এই ছবি যারা দেখছেন তারা রূপকথার যে গল্প শুনে আসছিলেন তার সঙ্গে কানেক্ট করতে পারছেন। যারা দেখছেন তারা সবাই তৃপ্ত হয়ে হল থেকে বের হচ্ছেন। এখন পর্যন্ত সিনেমাটির কোনো নেতিবাচক রিভিউ পাইনি। একজন নির্মাতা হিসেবে এটাই আমার স্বার্থকতা। আমার বিশ্বাস ধীরে ধীরে কাজলরেখার দর্শক বাড়বে। বাড়বে হলও।’ সিনেমাটিতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন- মন্দিরা চক্রবর্তী, রাফিয়াত রশিদ মিথিলা, সাদিয়া আয়মান, শরীফুল রাজ, খায়রুল বাসার, গাউসুল আলম শাওনসহ আরও অনেকে।

লিপস্টিক

‘লিপস্টিক’ ছবি দিয়ে প্রশংসা কুড়াচ্ছেন তরুণ নায়ক আদর আজাদ ও নায়িকা পূজা চেরী। কামরুজ্জামান রোমান পরিচালিত ছবিটিকে ‘পয়সা উসুল’ বলে মনে করছেন অনেক দর্শক। যদিও নানা জটিলতায় এটি সাতটির বেশি হল জোগাতে পারেনি। তবে অনেকেই আশা করছেন এ সিনেমার হল সংখ্যা আরও বাড়বে।

ছবিটির প্রথম সপ্তাহের সাফল্যে ছবির নায়ক আদর আজাদ বলেন, প্রত্যাশার চেয়ে সিনেমা হল নানা কারণে কম পেলেও দর্শক সাড়ায় আমি অভিভূত। দর্শকের অনুরোধের কারণে দ্বিতীয় সপ্তাহে ‘লিপস্টিক’ এর হল সংখ্যা ৭ থেকে বেড়ে ১৭ এর চেয়েও বেশি হবে। ছবিটি নিয়ে দর্শক মন্তব্য খুবই পজিটিভ। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে রিপিট দর্শক হচ্ছে। একটি ছবির সফলতার জন্য এটি বিশাল প্রাপ্তি। দর্শকের জায়গা থেকে মাউথ পাবিলিসিটি হচ্ছে। ফলে দ্বিতীয় সপ্তাহে আমরা বড় মাপের বেশ কিছু সিনেমা হল পাচ্ছি। দর্শকদের গঠনমূলক আলোচনায় একদিকে লিপস্টিকের সিনেমা হল বাড়ছে, অন্যদিকে ছবিটি সন্তোষজনক সাফল্য পাচ্ছে। এটি ঈদে এ ছবির টিমের জন্য বড় সুখবর।

সোনার চর

জায়েদ খান অভিনীত সোনার চর ঈদে সাতটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। জাহিদ হোসেন পরিচালিত এ ছবিটি সন্তোষজনক ব্যবসা করছে বলে দাবি ছবির নায়ক জায়েদ খানের। তিনি বলেন, ঈদে ছবিটি আমার প্রত্যাশার শতভাগ পূরণ করেছে। কারণ দর্শক বলছে এতে প্রকৃত একজন অভিনেতা হিসেবে জায়েদ খানকে খুঁজে পেয়েছেন তারা। ফলে জায়েদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ দর্শকের প্রতি আমি মুগ্ধ। দর্শকের ভালোবাসায় আগামী সপ্তাহে সোনার চর-এর সিনেমা হলের সংখ্যা আরও বাড়ছে। আমি আমার প্রিয় ভক্তদের প্রতি কৃতজ্ঞ।’

 

দেয়ালের দেশ

মিশুক মনি নির্মিত ‘দেয়ালের দেশ’ নিয়ে প্রত্যাশা ছিল অনেকের। স্টার সিনেপ্লেক্স ছবিটির জন্য সর্বোচ্চ শো বরাদ্দ দিয়েছিল। কিন্তু মুক্তির পর সেই প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির সমীকরণ মেলেনি সেভাবে। তাই ছবিটির শো কমানো হয়েছে বলে জানিয়েছে সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ।

ছবিটিতে মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন শরিফুল রাজ ও বুবলী। দেশজুড়ে এটি ১৩টি প্রেক্ষাগৃহে চলছে।

 

মেঘনা কন্যা, মায়া, গ্রীন কার্ড

এর বাইরে  ফুয়াদ চৌধুরী পরিচালিত ‘মেঘনা কন্যা’, জসিম উদ্দিন জাকির পরিচালিত ‘মায়া : দ্য লাভ’, কাজী হায়াতের ‘গ্রিন কার্ড’, ছবিগুলো এভারেজ দর্শক টানছে বলে সিনেমা হল মালিকরা বলছেন।

সর্বশেষ খবর