নানা বাণী ও গল্প নিয়ে নির্মিত হয় চলচ্চিত্র। এসব গল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি অধ্যায় হলো ছাত্র আন্দোলন। দেশে দেশে সর্বকালের সেরা বহু চলচ্চিত্রে দেশের ছাত্রদের আন্দোলনের ভূমিকা উঠে এসেছে। দেশ- বিদেশের এমন কয়েকটি চলচ্চিত্রের কথা তুলে ধরেছেন - আলাউদ্দীন মাজিদ
বাংলাদেশ
বাংলাদেশে সত্তর দশকে সমকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান সাহসী চলচ্চিত্রনির্মাতা জহির রায়হান ‘জীবন থেকে নেওয়া (১৯৭০)’। রূপকধর্মী এ ছবিতে পরিচালক দক্ষতার সঙ্গে প্রকাশ করেছিলেন পাকিস্তানি শাসনবিরোধী বক্তব্য। দর্শককে রাজনৈতিক চেতনায় অনুপ্রাণিত করা ছিল ছবির মূল উদ্দেশ্য। সেখানে ছাত্ররাজনীতি মূল বক্তব্য না হলেও নায়ক রাজ্জাক ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন বলে দেখানো হয়। তবে ছাত্ররাজনীতিকে প্রাধান্য দিয়ে বানানো হয়েছে এমন কয়েকটি সিনেমার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো - একজন সঙ্গে ছিল, ২০০৭ সালের ঢাকা ভার্সিটির আন্দোলন সময়কার। ‘অধিকার চাই’, ‘মুক্তির সংগ্রাম’, যন্ত্রণা, চেতনা, ত্রাস, বিক্ষোভ, সাহসী মানুষ চাই, ফাগুন হাওয়ায় প্রভৃতি। এর আগে ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ছাত্র আন্দোলনকে প্রচ্ছন্নভাবে তুলে আনেন খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার খান আতাউর রহমান। তিনি নানা রাজনৈতিক ঘটনার গল্পের সঙ্গে ছাত্ররাজনীতিকে যুক্ত করে নির্মাণ করেন ‘আবার তোরা মানুষ হ’ চলচ্চিত্রটি। এরপর নারায়ণ ঘোষ মিতাও প্রায় একই প্রেক্ষাপটে নির্মাণ করেন ‘আলোর মিছিল’ ছবিটি। যেখানে অভিনেতা রাজ্জাক ও ফারুককে ছাত্র হিসেবে রাজাকার, ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে দেখা যায়। এছাড়াও বাংলাদেশে নির্মিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ‘ওরা ১১ জন’, ‘সংগ্রাম’সহ আরও অনেক চলচ্চিত্রের গল্পে ছাত্র আন্দোলনের বিষয়টি অবধারিতভাবে উঠে আসে।
বলিউড
বলিউড অনেকটা স্বাধীনভাবে ছাত্ররাজনীতি দেখাতে পারে। বিশ্বায়ন-পরবর্তী সময়ে যেসব হিন্দি ছবিতে ছাত্র আন্দোলন বারবার উঠে এসেছে তার মধ্যে অন্যতম রামগোপাল ভর্মার ‘শিবা’ (১৯৮৯), তিগমাংসু ধুলিয়ার ‘হাসিল’ (২০০৩), মনিরত্নমের ‘যুবা’ (২০০৪), গোবিন্দ নিহালনীর ‘হাজার চৌরাশী কি মা’ (১৯৯৮), অনুরাগ কাশ্যপের ‘গুলাল’ (২০০৯) অন্যতম। এ ছবিগুলোতে একদিকে যেমন ছাত্র আন্দোলন দেখানো হয়েছে, তেমনি ছাত্র আন্দোলনের কিছু খারাপ দিকও তুলে ধরা হয়েছে। আমির খানের ‘রং দে বাসন্তী-(২০০৬)’, ভারতের দিল্লির এক অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া একদল শিক্ষার্থীদের গল্প। ঘটনাক্রমে জনৈক বিদেশিনীর তথ্যচিত্রের বিষয় হতে গিয়ে তাদের ভগত সিং, চন্দ্রশেখর আজাদ, রাজগুরু এবং আসাফুল্লাহ খানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। সেই ঐতিহাসিক চরিত্রগুলোই এ যুগে রূপান্তরিত হয়। সময়ের প্রয়োজনে রাষ্ট্রের বৃহৎ স্বার্থে তাঁরা ঝাঁপিয়ে পড়ে। অনুরাগ কাশ্যপের গুলাল (২০০৯) ছাত্ররাজনীতির অনবদ্য দলিল। ছাত্ররাজনীতির বাস্তব চিত্রটি কাশ্যপ দারুণভাবে তুলে ধরেছেন। নির্মাতা প্রকাশ ঝা। তার ‘আরাকশন’ সিনেমায় উঠে এসেছিল ভর্তি ও কোচিং বাণিজ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
হলিউড
ছাত্র আন্দোলন নিয়ে হলিউডে সর্বশেষ নির্মিত হয় বার্নাদো বার্তোল্লুচির ‘ড্রিমার (২০০৩) চলচ্চিত্রটি। মূলত এটি ১৯৬৮ সালের ছাত্ররাজনীতির প্রেক্ষাপটে একটি প্রেমের ছবি। এছাড়াও ফ্রাঁসোয়া ক্রুফোর ‘স্টোলেন কিসেস (১৯৬৮)’ নামক ছবিতেও দেখানো হয়েছে ছাত্ররাজনীতি। ১৯৭১ সালে মুক্তি পায় ‘পানিশমেন্ট পার্ক’। যখন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন রাষ্ট্রে জরুরি অবস্থা জারি করেছে তখনই উত্তাল হয়ে উঠে ছাত্রসমাজ। সেই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে সিনেমাটি নির্মাণ হয়। ‘দ্য স্ট্রবেরি স্টেটমেন্ট’ ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৭০ সালে। আমেরিকান শিক্ষার্থীরা ভিয়েতনামে যুদ্ধের বিপক্ষে আন্দোলন গড়ে তোলেন। এছাড়াও হলিউডের ফারেনহাইট ৪৫১ (১৯৬৬), ক্রাই ফ্রিডম (১৯৮৭), দ্য বেডার মেইনহুফ কমপ্লেক্স (২০০৮), হাঙ্গার (২০০৮), ইফ (১৯৬৮), মিল্ক (২০০৮), মেইড ইন ডেগেনহাম (২০১০) নাইট অব দ্য পেনসিল ছবিগুলোতে ছাত্রদের আন্দোলন দেখানো হয়েছে।