দেশে এখনো সেভাবে নাটকের শুটিং ব্যস্ততা বাড়েনি। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের জেরে লম্বা সময়ে শোবিজ ইন্ডাস্ট্রি স্থবির। ফলে বিশাল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে এ দেশের বিনোদন জগৎ। তবে জুলাই বিপ্লবের আগে থেকেই কিছু শোবিজ তারকা নির্ঝঞ্জাট শুটিং করতে বিদেশে অবস্থান করেন। তাদের পথ ধরে বিদেশেই শুটিংয়ের দিকে ঝুঁকেছেন অনেক শিল্পী। বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন অনেক নির্মাতা-শিল্পী-কলাকুশলী। বিদেশে শুটিং নিয়ে ব্যস্ততায় তানিয়া বৃষ্টি, ইয়াশ রোহান, ফারহান জোভান, কেয়া পায়েল, তৌসিফ মাহবুব, ইরফান সাজ্জাদ, নিলয় আলমগীর, সাফা কবির, আইশা খান, সাদিয়া আয়মান, জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি, খায়রুল বাসার, তটিনী, সামিরা মাহির মতো অভিনয়শিল্পীরা। কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন দেশে চলছে শুটিং, সামনেও এ ব্যস্ততা থাকবে বলে জানা গেছে। প্রায় অর্ধডজন নাটকের শুটিং নিয়ে বিদেশে ব্যস্ত রয়েছেন তারা। বর্তমান পরিস্থিতিতে যদিও বেশ গোপনীয়তা রক্ষা করে কাজ করা হচ্ছে, তারপরও কিছু কাজ শেয়ার করেছেন প্রযোজক, নির্মাতা ও শিল্পীরা।
বিদেশে নির্মিত নাটক প্রসঙ্গে আরটিভির দেওয়ান শামসুর রকিব বলেন, ‘ইউনিট ছোট হয়, ফলে দেশের বাইরের শুটিংয়ে খরচ কম। এ জন্য তুলনামূলক চাপ কম। তাই পরিকল্পনা করে কাজ করলে দেশের বাইরে নির্মিত নাটক দর্শকরা পছন্দ করেন।’ শিল্পী-নির্মাতাদের ভাষ্য হচ্ছে, ‘দেশের চেয়ে দেশের বাইরে শুটিং খরচ কম। এখানে অনেক অনুমতি নিতে হয়। আর বিদেশে সব অভিনয়শিল্পী একসঙ্গে থাকার ফলে কাজটা দ্রুত শেষ হয়। এ ছাড়া দেশে আউটডোরে শুটিং করতে গেলে অনুমতির পাশাপাশি দর্শকের একটা ভিড় জমে যায়, দেশের বাইরে সেটা হয় না।’
সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ায় মূকাভিনয় উৎসবে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি নাটকের শুটিং করেছেন নির্মাতা হাসান রেজাউল। এ নির্মাতা গত ১৩ আগস্ট যান দক্ষিণ কোরিয়ায়। তার সঙ্গে ছিলেন ইয়াশ রোহান ও তানিয়া বৃষ্টি। উৎসবে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি তাদের নিয়ে নির্মাণ করছেন তিনটি নাটক। আরও দুটি নাটক নির্মাণের অপেক্ষায় রয়েছে। নির্মিত তিনটি নাটক হচ্ছে- আহমেদ তাওকীরের গল্প ও চিত্রনাট্যে ‘লাভ লক’, ‘মনে পড়ে তোমাকে’ এবং তানিম রহমানের গল্পে ‘রিফ্লেকশন অব লাভ’। এ তিনটি নাটকের শুটিং হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল, জিওং সিওং, ডিএমজি অঞ্চলে। নাটকগুলো আগামীতে বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রচার হবে এবং পরে ইউটিউব চ্যানেলে মুক্তি দেওয়া হবে বলে নির্মাতা জানান। এদিকে মাবরুর রশীদ বান্নাহর নেতৃত্বে জুলাই মাসের শেষ দিক থেকে ব্যাংককে শুটিং করতে যায় একঝাঁক তারকা। এ টিমে অংশ নেন তৌসিফ মাহবুব, ফারহান আহমেদ জোভান, ইরফান সাজ্জাদ, নিলয় আলমগীর, সাফা কবির, আইশা খান, সাদিয়া আয়মান, জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি, নির্মাতা সহীদ উন নবী, হাসিব হোসেন রাখিসহ চিত্রগ্রাহক রাজু রাজ, মেহেদী রনি ও ফোরকান। বান্নাহ, সহীদ উন নবী, হাসিব হোসেন রাখিরা এ পর্যন্ত নির্মাণ করেছেন প্রায় ২৫টির মতো নাটক। এরমধ্যে বান্নাহ নির্মাণ করেছেন আটটি, হাসিব হোসেন রাখি ছয়টি এবং সহীদ উন নবী ছয়টি। এসব নাটকে অভিনয় করেছেন নিলয় আলমগীর, জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি, তৌসিফ মাহবুব, সাদিয়া আয়মান, সাফা কবির, ফারহান আহমেদ জোভান ও আইশা খান। এ মাসেই মালয়েশিয়াতে শুটিং ইউনিট নিয়ে যাবেন তিন পরিচালক মাইদুল রাকিব, সহীদ উন নবী ও হাসিব হোসেন রাখি। তাদের সঙ্গে থাকবেন নিলয় আলমগীর, তানিয়া বৃষ্টি, সামিরা খান মাহিসহ আরও কয়েকজন।
মাইদুল রাকিব বলেন, ‘আমরা প্রত্যেকে পাঁচটি করে নাটক নির্মাণের পরিকল্পনা করেছি।’ এদিকে আমেরিকায় নাটক নির্মাণ করবেন ওসমান মিরাজ। ৫ সেপ্টেম্বর তাঁর আমন্ত্রণে দেশটিতে যাবেন ফারহান আহমেদ জোভান ও কেয়া পায়েল। এ জুটিকে নিয়ে আটটি নাটক নির্মাণ করবেন মিরাজ। সেখানে আরও কয়েকজন নির্মাতা রয়েছেন। তাঁরাও এ জুটিকে নিয়ে নাটক নির্মাণ করবেন।
প্রসংগত, এর আগে এপ্রিল মাসে অস্ট্রেলিয়ায় শুটিংয়ে অংশ নেন খায়রুল বাসার ও তটিনী। সেখানে তাঁরা পাঁচটি নাটকের শুটিং করেন। সবকটি নাটক পরিচালনা করেন রুবেল হাসান। অভিনেতা খায়রুল বাসার জানান, ‘পরিস্থিতি ও গল্পের প্রয়োজনেই বিদেশে শুটিং হয় নাটকগুলোর। আর ঝামেলামুক্ত শুটিংয়ের পাশাপাশি ঘোরাও যায়।’
তবে বিদেশে নির্মিত নাটক দর্শক সেভাবে গ্রহণ করে না বলে অনেকের রয়েছে অভিযোগ। নাটক সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ঠিকঠাক পান্ডুলিপি, একই লোকেশনে অল্প সময়ের মধ্যে শুটিং, বাজেট সংকোচন এবং বিভিন্ন টেকনোলজিরও ঘাটতির কারণে নাটক সেভাবে হয়ে ওঠে না। যদিও বিদেশে বেশকিছু সুবিধা পাওয়া যায়। অর্ধেক ব্যয়ে নাটকও নির্মাণ করা যায়। সব ভালোমন্দ মিলিয়েই বিদেশে নাটকের শুটিং করা হয়।