দেশীয় চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়ক, প্রযোজক ও পরিচালক আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল। চলচ্চিত্রশিল্পের উন্নয়নে তাঁর নিরলস ভূমিকা অস্বীকার্য। চলচ্চিত্রের বিভিন্ন সমিতির নেতৃত্বেও ছিলেন তিনি। একই সঙ্গে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত আছেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে চলচ্চিত্র নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। তাঁর বিশেষ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ
বর্তমানে চলচ্চিত্রের অবস্থা আপনার দৃষ্টিতে কেমন?
দীর্ঘদিন ধরেই এ দেশের চলচ্চিত্র দৈন্যদশায় আছে। বলা যায় গ্রাউন্ডেড। এ অবস্থার রাতারাতি উত্তরণ সম্ভব নয়। কারণ আমাদের চলচ্চিত্রের প্রেক্ষাপট অনেক বড়। সেই ১৯৫৬ সালে ‘মুখ ও মুখোশ’ সবাক ছবি দিয়ে এ দেশে চলচ্চিত্রের যাত্রা শুরু হয়। এরপর বিখ্যাত সব মেধাবী নির্মাতার হাত ধরে ধীরে ধীরে এ চলচ্চিত্র একসময় একটা সোনালি সময়ে আসীন হয়। তখন ছিল এনালগ যুগ। আর এখন ডিজিটাল যুগের সূচনা হয়েছে। কিন্তু চলচ্চিত্র নির্মাণের সূতিকাগার খ্যাত এফডিসি এ ডিজিটাল ব্যবস্থার প্রবর্তনে এখনো পুরোপুরি সক্ষম হয়নি। তাই এক্ষেত্রে আগে উন্নয়ন দরকার। তারপর আমাদের চলচ্চিত্রের প্রকৃত সময় আবার ফিরবে।
এ উন্নয়ন কীভাবে সম্ভব?
এখন এ ডিজিটাল যুগে আমাদের দেশে চলচ্চিত্রের নানাদিকের প্রশিক্ষণে কোনো একাডেমি বা ইনস্টিটিউট নেই। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উন্নয়নের পথে এগোতে গেলে এগুলো আবশ্যক। আমাদের ফিল্ম ডেভেলপের জন্য এফডিসি মানে স্ট্রাকচার আছে। নির্মাতা শিল্পী কলাকুশলী সবই আছে। এখন শুধু আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবস্থা করা দরকার। তাহলেই চলচ্চিত্রের উন্নয়ন অনেকটা সহজ হবে বলে মনে করি।
এ উন্নয়নের দায়িত্বটা কাকে দেওয়া যেতে পারে?
এফডিসি যেহেতু নিয়ন্ত্রণ করে সরকার, তাই চলচ্চিত্রের উন্নয়নে সার্বিক দিক এফডিসির কাছে ন্যস্ত করতে হবে। চলচ্চিত্রের দুটি দিক আছে। একটি হলো কন্টেন্ট, অন্যটি মার্কেটিং। চলচ্চিত্র হলো কন্টেন্ট আর সিনেমা হল হলো মার্কেটিং। কন্টেন্ট তৈরির পর দর্শকের কাছে তা প্রদর্শনের জন্য মার্কেটিং করা হয় সিনেমা হলে। এখন মানুষের রুচি পাল্টেছে। সিনেমা দেখার মাধ্যমও বদলেছে। এখন স্বল্প আসনের সিনেপ্লেক্স কালচার চালু হয়েছে। এ মনোপুলি সেক্টরে আয় করাও খুব সহজ। তাই এফডিসিকে সারা দেশে সেন্ট্রাল সার্ভারের মাধ্যমে সিনেপ্লেক্সের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব দেওয়া হোক। আর চলচ্চিত্রের উন্নয়নে সরকার যেন এফডিসিকে একটি ফান্ড দেয়। সেই ফান্ড থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া যেতে পারে। এতে জয়েন্ট ভেঞ্চারের ব্যবস্থা করেও চলচ্চিত্রের প্রাণসঞ্চার করা সহজ হবে। এফডিসির অধীনে সারা দেশে থাকা সিনেপ্লেক্সগুলোতে সেই চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হলে চলচ্চিত্রের সব পক্ষ এখান থেকে যথাযথ সুবিধা পাবে। তাই চলচ্চিত্রের উন্নয়নে এফডিসির এখন প্রধান দায়িত্ব হতে হবে প্রোডাকশনের পাশাপাশি মার্কেটিং উইং তৈরি করা। একই সঙ্গে ই-টিকিটিংয়ের ব্যবস্থা করা। প্রোডাকশনের পাশাপাশি যদি মার্কেটিংয়ের দায়িত্ব এফডিসি নেয় তাহলে আমি মনে করি নিয়মতান্ত্রিকভাবে উৎপাদন ও প্রদর্শন ব্যবস্থায় ক্ষেত্রে সমন্বয় ঘটাতে পারবে এফডিসি এবং এতে চলচ্চিত্র ব্যবসা লাভজনক হবে। তাছাড়া এখন চলচ্চিত্র প্রদর্শনের নতুন মাধ্যম ওটিটিও চালু হয়েছে, এখানেও মার্কেটিং করতে পারে এফডিসি। এ ছাড়া বিদেশে বাংলাদেশি প্রবাসীদের কাছে দেশীয় চলচ্চিত্রের ব্যাপক চাহিদা রযেছে। তাই বিভিন্ন অ্যাম্বাসির সহায়তায় বিদেশে নিয়মিত আমাদের ছবি মুক্তি দিতে পারলে চলচ্চিত্র ব্যবসায় দৈন্যদশা বলে আর কিছুই থাকবে না।
বিগত সরকারের আমলে চলচ্চিত্রের অবস্থা কেমন ছিল?
বিগত সরকারের আমলে দীর্ঘ ১৫ বছর রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতিসহ দেশের সব সেক্টর যেমন অন্যায় দুর্নীতিতে নিম্নগামী হয়েছে, চলচ্চিত্রও তার বাইরে নয়। এখানেও যথেষ্ট দলীয়করণ হয়েছে। আসলে তখন চলচ্চিত্রের যোগ্য লোকজনকে কোনো সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়নি। এ বিষয়গুলো পত্র-পত্রিকা ও সোশ্যাল মিডিয়ায় এসেছে, সবাই দেখেছে। প্রকৃতপক্ষে ক্যামেরার সামনে কোনো কাজ হয়নি। যা হয়েছে পেছনে। এতে করে চলচ্চিত্রের প্রকৃত লোকজনের হাতে কোনো কাজ ছিল না। স্বৈরাচার সরকার দেশে থাকলে দেশের অধঃপতন হয়, চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
বর্তমানে চলচ্চিত্রের উন্নয়নে আপনার ভূমিকা কেমন হবে?
দেখুন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এ দেশে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, চলচ্চিত্র নির্মাণে অনুদান প্রথা প্রবর্তন, চলচ্চিত্রের মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে কল্যাণ ফান্ড গঠন, একুশে পদক প্রথা চালু থেতে শুরু করে সবই করেছেন। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে চলচ্চিত্র নিয়ে আমার আলাপ-আলোচনা হতো। তিনি দেশের এ প্রধান ও বড় গণমাধ্যমটির উন্নয়নে নিবেদিতপ্রাণ মানুষ ছিলেন। তাঁর হাতে গড়া রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে আমি সবসময় যুক্ত ছিলাম। এখন আমি দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মানজনক পোস্ট সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আগামীতে বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে চলচ্চিত্রের সময়োপযোগী সার্বিক উন্নয়নে আমি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার প্রত্যাশা করছি।
দীর্ঘদিন ধরে অভিনয় এবং নির্মাণ থেকে দূরে আছেন, কেন?
এর কারণ হলো একজন শিল্পী হচ্ছে ‘র ম্যাটেরিয়াল’ এর মতো। তাকে যে নির্মাতা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারবে তেমন নির্মাতার এখন বড়ই অভাব রয়েছে। পর্দায় আমার কাজে যে ইমেজ আমি দর্শকের মাঝে তৈরি করেছি সেই কাজের পরিবেশও এখন আর নেই। তাছাড়া বিভিন্ন চলচ্চিত্র সমিতিরও নেতৃত্বে সফল হয়েছিলাম। সব মিলিয়ে বলতে পারেন যদি সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসে তবে অবশ্যই আবার অভিনয় ও নির্মাণে ফিরব।