বাংলা গানের অন্যতম জনপ্রিয় গীতিকার-সুরকার ইথুন বাবু। তাঁর লেখা অসংখ্য গান সোনালি সময়ে আলোড়ন তুলেছে দেশব্যাপী। এখনো নিয়মিত গান করছেন তিনি। সম্প্রতি ‘দেশটা তোমার বাপের নাকি’ গান দিয়ে ফের আলোচনায় এসেছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে সমসাময়িক নানা প্রসঙ্গে কথা বলেছেন - পান্থ আফজাল
আপনার কথা-সুরে মৌসুমীর কণ্ঠে ‘দেশটা তোমার বাপের নাকি’ ভাইরাল হয়। আগেই কি জানতেন, গানটি হিট হবে?
গত কয়েক দশক তো গান নিয়েই থেকেছি। তাই গান কীভাবে হিট করতে হয় এবং কোন শিল্পীকে দিয়ে কী গান করাতে হয় আমি একটু হলেও বুঝি। কার দ্বারা গান হবে আর হবে না সেটাও বুঝি। আমি যখন আসিফকে দিয়ে ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’ করি তখন ওকে বলেছিলাম-এই গানের পর আর পিছু ফিরে তাকাতে হবে না। যেমন বলেছি তেমনই হয়েছে। গানটি পলাশ ও এন্ড্রু কিশোরের গাওয়ার কথা ছিল। আসিফ আকবর ভালো পারবেন বলেই ওকে দিয়ে করিয়েছিলাম। আজ আসিফ বাংলা গানের যুবরাজের খ্যাতি পেয়েছে। তেমনিভাবে ‘দেশটা তোমার বাপের নাকি’ করার সময়ই আঁচ করতে পেরেছিলাম গানটি হিট হবে।
গানটি কার জন্য করেছিলেন?
বিএনপির জন্য। আমি প্রায় ৪০টির মতো তাদের গান করেছি, যা বিভিন্ন সময় সমাবেশে গাওয়া হয়েছে।
‘দেশটা তোমার বাপের নাকি’ গানটির জন্য আপনার প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছিল শুনেছি, সত্যি?
সত্যি। এ গানের আদলে আসামের ভাষায় গানটি গেয়ে ভারতে গ্রেফতার হয়েছেন এক শিল্পী। এ গানের জন্য আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। মৌসুমীকে ধরার জন্য প্রচুর চেষ্টা করেছিল। তাদের সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
একসময় আপনি কালো তালিকাভুক্তও ছিলেন...
আসলে আমাকে কালো তালিকায় রাখার জন্য এ দেশের ইন্ডাস্ট্রির লোকজন জড়িত ছিল। গত ১৫ বছর আমার বিটিভির পথ বন্ধ ছিল। আমি উচ্চ পর্যায়ের সংগীত পরিচালক-সুরকার হলেও এ সময় কোনো কাজ করতে পারিনি। ভাবতে অবাক লাগে, যারা এ দীর্ঘ সময় বিটিভির সুবিধা নিয়েছে তারাই আবার সরকার পতনের পর দেখলাম স্বাধীনতা চেয়ে দাঁড়িয়েছে। যা খুবই হাস্যকার। দীর্ঘ ১৫ বছর রাজপথে সক্রিয় ছিলাম। আছি এবং থাকব। এ রাজপথের সংগ্রাম দমাতে স্বৈরাচারী শাসক অনেক চেষ্টা করেছে। এত বছরে জুলুম-অত্যাচার কম হয়নি। তাদের হাত থেকে পরিবারও রেহাই পায়নি। ছাত্র-জনতা এক হয়ে সংগ্রাম করে স্বৈরাচার হটিয়েছি। অবশেষে আমরা সফল।
আন্দোলনের পর নতুন একটি বাংলাদেশ পেয়েছেন। এ দেশের নীতিনির্ধারকদের কাছে আপনার প্রত্যাশা কী?
চমৎকার একটি বাংলাদেশ চাই। যে বাংলাদেশের জন্য মানুষ দীর্ঘ বছর অপেক্ষা করেছিল। দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত দেশ চাই। বন্যার্তদের পাশে যেভাবে সব শ্রেণির মানুষ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তাতেই বোঝা যায় তারা কেমন বাংলাদেশ চায়। এখন সবাই এক। এটাই তো আমার বাংলাদেশ। এ সুন্দর বাংলাদেশই চেয়েছিলাম। যেখানে থাকবে কথা বলার স্বাধীনতা। সব জায়গায় স্বৈরাচারীর লোক বসে আছে; প্রতিহত করতে হবে।