নাটক-ওটিটি, বিজ্ঞাপন কিংবা সিনেমা- সবখানেই রয়েছে নারীর উজ্জ্বল উপস্থিতি। অথচ টেলিভিশন-সিনেমায় নারী নির্মাতা বা পরিচালকের সংখ্যা একেবারেই হাতেগোনা। তবে যে কজন আছেন তারা ইতোমধ্যে নিজেদের কাজ দিয়ে দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও প্রশংসিত হয়েছেন। সেসব নারী পরিচালকের নির্মিত কাজ নিয়ে লিখেছেন - পান্থ আফজাল
বাংলাদেশের প্রথম নারী পরিচালক মনজন আরা বেগম যিনি রেবেকা নামেই পরিচিত। তিনি ‘বিন্দু থেকে বৃত্ত’ পরিচালনা করেন ১৯৭০ সালে। রেবেকা এখন বেঁচে নেই। ২০০৬ সালে মারা গেছেন তিনি। নিজেকে কেবল একজন নারী নয় বরং মানুষ হিসেবেই ভেবেছেন সব সময়। তার পথ ধরেই পরবর্তীতে চলচ্চিত্র ও টিভি পরিচালক হিসেবে ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছেন জাহানারা ভূঁইয়া, সুজাতা আজিম, সুমিতা দেবী, কোহিনূর আক্তার সুচন্দা, রোজী আফসারী, কবরী, রুবাইয়াত হোসেন, নার্গিস আক্তার, সামিয়া জামান, শবনম ফেরদৌসী, চয়নিকা চৌধুরী, মাতিয়া বানু শুকু, হৃদি হক, মারিয়া তুষার, শামীম আখতার, শাহনেওয়াজ কাকলী, রওশন আরা নিপা, মেহের আফরোজ শাওন, মাহবুবা ইসলাম সুমী, শ্রাবণী ফেরদৌস, প্রীতি দত্ত, ক্যাথরিন মাসুদ, ফৌজিয়া খান, জেসমিন আক্তার নদী, তানিয়া আহমেদ, ববিতা, মৌসুমী, নিমা রহমান, রোজিনা, অরুণা বিশ্বাস, আফসানা মিমি, ইরানী বিশ্বাস, তাসমিয়া আফরিন মৌ, রাকা নওশীন নাওয়ার, শেখ রুনা, নুজহাত আলভী আহমেদ, মেহজাদ গালিব, রোকেয়া প্রাচী, ফাহমিদা ইরফান প্রমুখ।
সর্বশেষ ‘শরতের জবা’ দিয়ে নির্মাতা হিসেবে যুক্ত হয়েছেন কুসুম সিকদার। যদিও বলার অপেক্ষা রাখে না যে নির্মাণশৈলী, গল্প বলার আঙ্গিক, লোকেশন নির্বাচনসহ নানা কারণে নারী নির্মাতারা বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ যে কোনো পুরস্কারেই এগিয়ে আছেন। তবে শোবিজ ইন্ডাস্ট্রিতে নারী নির্মাতাদের অবহেলিত অবস্থানের কারণে তারা নির্মাণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।
কোহিনূর আক্তার সুচন্দা : একজন সফল নির্মাতা হিসেবে তিনি ১৯৯৯ সালে নির্মাণ করেন ‘সবুজ কোট কালো চশমা’। পরে ২০০২ সালে তিনি ফের নির্মাণ করেন জহির রায়হানের উপন্যাস অবলম্বনে সরকারি অনুদানে ‘হাজার বছর ধরে’। এ চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ বেশ কয়েকটি শাখায় জাতীয় পুরস্কার অর্জন করে।
ববিতা : তিনি প্রযোজক হিসেবে যুক্ত ছিলেন ‘ফুলশয্যা’, ‘আগমন’ ও ‘পোকামাকড়ের ঘরবসতি’ চলচ্চিত্রে।
রোজিনা : চলচ্চিত্রে ‘দোলনা’ ও ‘জীবনধারা’য় প্রযোজক হিসেবে থাকলেও প্রথমবার নির্মাণ করেন অনুদানের চলচ্চিত্র ‘ফিরে দেখা’। তিনি আগে নাটকও নির্মাণ করেছেন।
সুজাতা : সুজাতা পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘অর্পণ’। তিনি ৭-৮টি চলচ্চিত্রে প্রযোজক হিসেবে যুক্ত ছিলেন।
রুবাইয়াত হোসেন : ২০১০ সালে রুবাইয়াত হোসেন নির্মাণ করেন ‘মেহেরবান’। এরপর তিনি ‘আন্ডার কন্সট্রাকশন’ ও ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ নামে দুটি ছবি নির্মাণ করেন। সর্বশেষ তার পরিচালিত শিমু চলচ্চিত্র মুক্তি পায়।
নার্গিস আক্তার : তিনি মোট ৮টি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। ‘পৌষ মাসের পিরিত’ ছবিটি পরিচালনার মাধ্যমে নির্মাণে আসেন তিনি। তার ‘মেঘলা আকাশ’ একাধিক ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায়। এরপর তিনি করেন ‘চার সতীনের ঘর’ ও ‘মেঘের কোলে রোদ’। তার নির্মিত ‘যৈবতী কন্যার মন’ ২০২১ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে কয়েকটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পায়। তিনি বহু টিভি নাটকও পরিচালনা করেছেন।
চয়নিকা চৌধুরী : নাট্যজগতে দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে নির্মাতা হিসেবে ৪ শতাধিক নাটক পরিচালনা করেছেন তিনি। নির্মাণ করেছেন চলচ্চিত্র ‘বিশ্ব সুন্দরী’ যা ৮টি শাখায় জাতীয় পুরস্কার পায়। দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘প্রহেলিকা’ দিয়েও প্রশংসা কুড়ান তিনি।
শাহনেওয়াজ কাকলী : ২০১২ সালে নির্মাণ করেন ‘উত্তরের সুর’। ছবিটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ চারটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে। এরপর ২০১৫ সালে শেখ জহুরুল হকের ‘গুণ’ উপন্যাসের কাহিনি অবলম্বনে কাকলী নির্মাণ করেন ‘নদীজন’।
মৌসুমী : এই প্রিয়দর্শিনী ২০০৩ সালে ‘কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি’ দিয়ে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। পরে ২০০৫ সালে মৌসুমী পরিচালনা করেন ‘মেহের নিগার’।
মেহের আফরোজ শাওন : হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে ‘কৃষ্ণপক্ষ’ পরিচালনার মাধ্যমে প্রথম নির্মাণে আসেন শাওন। তিনি একাধিক নাটক ও টেলিফিল্ম নির্মাণ করেছেন।
সামিয়া জামান : ২০০৬ সালে ‘রানী কুঠির বাকি ইতিহাস’ নির্মাণ করে জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন তিনি। আর ২০১৪ সালে ‘আকাশ কত দূরে’ নির্মাণ করেন। তার প্রযোজিত ছবি ‘আজব কারখানা’।
তানিয়া আহমেদ : ‘ভালোবাসা এমনই হয়’ তানিয়ার প্রথম ছবি। তিনি একাধিক নাটক ও টেলিফিল্মও নির্মাণ করেছেন।
অন্যান্য যারা : এ যাবৎকালে অনেক নায়িকা-অভিনেত্রী মেধার প্রমাণ দিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন নির্মাতা হিসেবে। এই তালিকায় আছেন রোজী আফসারীর ‘আশা নিরাশা’ (১৯৮৬), কবরীর ‘আয়না’ (২০০৬) এবং ‘এই তুমি সেই তুমি’ (অসমাপ্ত), অরুণা বিশ্বাসের ‘অসম্ভব’, হৃদি হকের ‘১৯৭১ সেই সব দিন’ প্রমুখ।