২৮ আগস্ট, ২০১৬ ০৯:৪৪

পুরনো ‘সাহেব বিবি গোলাম’ নয়, চমকটা অন্য জায়গায়

অনলাইন ডেস্ক

পুরনো ‘সাহেব বিবি গোলাম’ নয়, চমকটা অন্য জায়গায়

গল্পটাতে ‘ডার্ক এলিমেন্টে’র খোরাক অনেক। তেমনটা মাঝে মাঝেই মনে হতে পারে, এই বুঝি টারান্টিনোর স্টাইলে বুক-কাঁপানো, চমক-লাগানো কিছু ঘটবে! সেই কী হয়-কী হয় ভাবটা পুরোপুরি রয়েছে ‘সাহেব বিবি গোলাম’এ। কিন্তু কোথাও একটু খাপছাড়া মনে হতেই পারে।

ছবিতে অঞ্জন দত্ত সিরিয়াল কিলার। শহরেই প্রথম খুনটা করে অঞ্জনের চরিত্র জিমি। চরিত্রটি কোথা থেকে এল, কী বৃত্তান্ত— সে ব্যাপারে প্রথমেই খোলসা করেননি পরিচালক প্রতিম দাশগুপ্ত। ফলে রহস্য বজায় রইল ঠিকই। কিন্তু আশ্চর্যও লাগল, সেই খুন নিয়ে কোথাও কোন শোরগোল পড়ল না। খোঁজখবর তদন্ত হল না। কেন হল না, সেই প্রশ্ন তৈরি হতে না হতেই দেখা গেল জিমি এক মন্ত্রীর অনুগত। সেখান থেকে বেতনও নেয়। জিমি প্রাক্তন পুলিশ অফিসার এবং বর্তমানে পেশাদার খুনি হয়েও পূর্ব পরিচিত পুলিশ কমিশনারের সামনে চলে যেতে পারে! নির্দ্বিধায়। সংলাপ শুনলে মনে হতে পারে, কমিশনার বোধহয় তার কর্মজীবন সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন ও সহানুভূতিশীল! কিন্তু কোথাও স্পষ্ট করে বলা হল না, সিরিয়াল কিলার হওয়ার পিছনে জিমির ‘মোটিভেশন’ কী। 

চরিত্রটিতে অনেক ‘ডায়কোটমি’ রেখেছেন প্রতিম। খুনখারাপি করে বেড়ালেও জিমির বিবেক বলে একটা বস্তু আছে। নিজে অপরাধী হওয়া সত্ত্বেও অপরাধীকে শিক্ষা দেওয়ার সদিচ্ছা আছে। তাহলে সে কি রবিন হুড? স্পষ্ট নয়। জিমি বেহালাও বাজায়। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর ছেলের কাছ থেকে সরে যেতে হয় তাকে। সেই দায় নিয়ে কষ্টেও থাকে। সেই কারণেই কি সে রাতে খুনি আর দিনে খানিকটা সমাজসেবী গোছের কেউ? ডক্টর জেকিল-মিস্টার হাইড? সেটাও স্পষ্ট নয়। অঞ্জনকে পাগলাটে, অসহায়, হাফ-সাহেব চরিত্রে বহুবার দেখা গিয়েছে। এই প্রথম তিনি সিরিয়াল কিলার এবং ফাটাফাটি অভিনয় করেছেন। এভাবে তাকে ভাবার জন্য প্রতিমকে ধন্যবাদ। শুধু চরিত্রটা ঠিক মাছেভাতে টাইপ নয়, সেটা বোঝাতে গিয়ে কতগুলো ডিটেল বাদ পড়ে গিয়েছে, এই যা। 

বিবির চরিত্রে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় তথা জয়া যিনি গৃহবধূ, ঘোরতর সংসারী। কিন্তু স্বামীর আদর পায় না। অফিসে বরের অন্য সম্পর্কের খোঁজ পেয়ে এসকর্ট সার্ভিসে নাম লেখায়। যেখানে আবার গৃহবধূরাই কাজ করেন। জয়া সুন্দরী, যুবতী। ফলে ব্যাপারটা বেশ মসৃণভাবেই ঘটে যায় তার জীবনে। কিন্তু জয়ার ক্রাইসিস’টা এখানে নির্মাণের ক্ষেত্রে আরেকটু গুরুত্ব পেলে খুব ভাল হতো। একজন গৃহবধূ স্বেচ্ছায় দেহব্যবসায় নামছেন। নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করছেন। এই স্বাতন্ত্র্য শুধুমাত্র তার ‘সেক্সুয়ালিটি’-কেন্দ্রিক হল কেন? বিবির গল্পটা আঁধার-প্রবণ অথচ প্রবল সেক্সি! কিন্তু  সাংসারিক জীবনের পরিবর্তনগুলো ধরা পড়ল না তো? স্বস্তিকা এত ভাল অভিনয় করেছেন, যে এই সংকটীয় অভিব্যক্তিগুলো সিনেমাপ্রেমীরা দেখতে চাইলে তাদের দোষ দেওয়া যায় না বোধহয়!

শেষ গল্পটা গোলামের তথা জাভেদ (ঋত্বিক) যিনি ট্যাক্সি চালান এবং সমাজের গণ্যমান্য ও ধনী ভদ্রলোকের চূড়ান্ত ‘বোর্‌ড’ মেয়ের প্রেমে পড়েন। মেয়েটি রুমি (পার্নো)। গল্পটা ভারী মিষ্টি। মানে, যেভাবে তা এগোয় এবং ছবির ডার্ক টোনের সঙ্গে এই মিষ্টি ব্যাপারটা জুড়ে গিয়ে আগেভাগে যেন দর্শককে ত্রস্ত করে রাখে, যে স্বস্তির আশা না করাই ভাল! এবং স্বস্তি পাওয়ার কারণও যে নেই, ছবি ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছলেই বোঝা যায়। 

তবে রুমির সঙ্গে যে ভয়াবহ অপরাধ ঘটে, সেই দৃশ্যটা যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্যভাবে নেওয়া হলে থ্রিলারটায় সামঞ্জস্য বজায় থাকত। ঋত্বিক যথারীতি সাবঅলটার্ন প্রেমিকের চরিত্র দুরন্ত। পার্নোও ভারী মিষ্টি। গোটা ছবিতে আসলে সকলেই চরিত্রে ঢেলে দিয়েছেন নিজেদের। ছোটখাটো দুই চরিত্রে অরুণ মুখোপাধ্যায় এবং সোহাগ সেনকেও ভাল লাগল। ছোট্ট একটি অংশের নেপথ্যে এফএম চ্যানেলে ঋতুপর্ণ ঘোষের গলা শুনতে পেয়ে ভারী আনন্দ হল!

নীল অধিকারীর নেপথ্যসংগীত থ্রিলারের জন্য বেশ উপযোগী। অনুপম রায়ের সংগীতও উপভোগ্য। সঞ্জীব দত্তের সম্পাদনার গুণে ছবি খুব বেশি দীর্ঘ মনে হয়নি এবং টানটান ছন্দ যথেষ্ট বজায় ছিল। গৈরিক সরকারের ক্যামেরা কিছু কিছু জায়গায় ভাল। প্রতিম গল্পটাকে একেবারেই অন্য ছকে ভেঙেছেন। পুরনো ‘সাহেব বিবি গোলাম’কে নতুনভাবে দেখতে পাবেন— এই ধারণা না রাখাই ভাল। কারণ চমকটা আসলে সেখানেই।

সূত্র: এবেলা


বিডি প্রতিদিন/২৮ আগস্ট ২০১৬/হিমেল-০৬

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর