১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ১৫:৫৭

যেভাবে ১৩১ কেজি ওজন কমিয়েছেন আদনান সামি

অনলাইন ডেস্ক

যেভাবে ১৩১ কেজি ওজন কমিয়েছেন আদনান সামি

বিশ্বব্যাপী গায়ক হিসেবে যথেষ্ট জনপ্রিয় আদনান সামি। তবে আরও একটি কারণে এককালে তিনি আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন। কারণটি ছিল তার স্থূলতা। এক সময় তার ওজন ছিল ২০৬ কেজি। কিন্তু তারপর এক ধাক্কায় তিনি আমূল পরিবর্তিত করে ফেলেন নিজের। অল্প সময়ের মধ্যে ঝরিয়ে ফেলেন ১৩১ কেজি। কিন্তু কীভাবে তিনি এই অসম্ভবকে সম্ভব করলেন?

আদনানের সেই মোটা চেহারা অনেকের চোখে ‘মিষ্টি’ দেখালেও তিনি ওই চেহারায় মোটেই সুস্থ ছিলেন না। সংগীত জীবনে তিনি সে সময় যতই সাফল্য পান না কেন, ব্যক্তিগত জীবনে তখন তার নানা ঝড়ঝাপটা চলছিল। এক দিকে স্ত্রীর সঙ্গে তার বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গেছে। অন্যদিকে স্থূলতার কারণে তার শারীরিক অবস্থাও তখন ভাল নয়। অতিরিক্ত চর্বির জন্য সে সময় আদনান রাত্রে ঘুমাতে পারতেন না। শুলেই শ্বাস বন্ধ হয়ে যেত তার।

হুইলচেয়ার বা ওয়াকারের সাহায্য ছাড়া এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারতেন না। হাঁটুর সমস্যাতেও তিনি তখন জর্জরিত। অবস্থা এমন জায়গায় পৌঁছায় যে, ডাক্তাররা তাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এভাবে চলতে থাকলে আর বড়জোর মাস ছয়েক বাঁচবেন আদনান। তখনই সচেতন হন গায়ক। আদনানের বাবাও তাকে উদ্বুদ্ধ করেন ওজন কমানোর জন্য।

এক বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে আদনান উড়ে যান আমেরিকার হুস্টনে। ডাক্তাররা আদনানের সমস্যা বিশ্লেষণ করে বুঝতে পারেন, তিনি খাওয়া-দাওয়া করেন ইমোশনাল কারণে। যখনই কোনো কারণে অবসাদ, হতাশা বা শোকে আক্রান্ত হন তিনি, তখনই খাওয়া-দাওয়ার মাধ্যমে নিজেকে খুশি করার চেষ্টা করেন। আর স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পরে আদনানের জীবনে হতাশারও অভাব ছিল না। ফলে চেহারায় পরিবর্তন আনার জন্য শরীরে নয়, মনের বদল আনার প্রয়োজন ছিল আদনানের।

আদনান সামিকে হাই প্রোটিন ডায়েট মেনটেন করার পরামর্শ দেন ডাক্তাররা। ফলে সাদা রুটি, ভাত, তেল কিংবা চিনির মতো খাবার খাওয়া একেবারে বন্ধ হয়ে যায় তার। তবে বাড়িতে তৈরি খাবার খেতে কোনো বাধা ছিল না তার। লবণ ছাড়া পপকর্ন, ডায়েট ফাজ স্টিক, আইসক্রিমের বদলে আইসললির মতো খাবার খেতে আদনানের কোনো নিষেধ ছিল না। ডাক্তররা অল্প করে হাঁটা চলারও পরামর্শ দেন আদনানকে।

এই উপায়ে মাস খানেকের মধ্যে ৪-৫ কেজি ওজন কমে যায় আদনানের। কিন্তু তখনও নিজের চেহারায় বাহ্যত কোনো পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছিলেন না তিনি। আরও কয়েক দিন কেটে যাওয়ার পরে তিনি খেয়াল করেন, রাত্রে তিনি নির্বিঘ্নে ঘুমোতে পারছেন। শোওয়া অবস্থা থেকে উঠতে কারো সাহায্য দরকার হচ্ছে না তার। মাস কয়েকের মধ্যে ৪০ কেজি ওজন কমে যায় আদনানের। তখন তিনি ট্রেডমিলে দৌড়ানো ও হালকা এক্সারসাইজ করা শুরু করেন। আরো দ্রুত গতিতে ঝরতে থাকে তার মেদ।

কঠোরভাবে নিজের ডায়েট মেনটেন করা শুরু করেন আদনান। নিজের বাড়িতে সেই কাজটা করা কঠিন ছিল না, কিন্তু কোনো পার্টিতে বা সামাজিক অনুষ্ঠানে গেলে সমস্যা দেখা দিতো। তাই পার্টিতে যেতে হলে এক অদ্ভুত কৌশল নিতেন আদনান। হাতে নানা খাবার ভর্তি প্লেট ধরে রাখতেন তিনি। লোকে ভাবত, তিনি বোধহয় কবজি ডুবিয়ে খাচ্ছেন। কিন্তু তিনি মুখে দিতেন না কিছুই।

এই কঠোর পরিশ্রমের ফল ফলে দ্রুতই। মাত্র ১১ মাসে ১৩১ কেজি ওজন ঝরিয়ে ফেলতে সক্ষম হন আদনান। এখন তিনি একেবারে সুস্থ। রীতিমতো ঈর্ষণীয় স্বাস্থ্যের অধিকারী তিনি। অসুস্থতা ও মৃত্যুকে পাশ কাটিয়ে তিনি এখন ফিরে এসেছেন সুস্থতার দিকে। শুধু গানের ক্ষেত্রে নয়, আদনান সামি তাই বহু সুস্থতাকামী মানুষের কাছেও আজ অনুপ্রেরণা।

বিডি প্রতিদিন/ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬/ এনায়েত করিম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর