নায়ক রাজ বলতে বাংলাদেশে একজনই ছিলেন। তিনি হচ্ছেন চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী রাজ্জাক। যে মানুষটি একাধারে একজন অভিনেতা, প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবে চলচ্চিত্র অঙ্গনে ভূমিকা পালন করেছিলেন। ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্র জগতের অভিভাবক। তার হাত ধরেই বাংলা চলচ্চিত্রে শুরু হয় নতুন ধারার, নতুন যুগের।
অ্যাকশান, রোমান্টিক,কমেডি তিন ধরনের ছবিতেই নায়ক রাজ নতুনত্ব নিয়ে আসেন। পেয়েছেন দর্শকদের অফুরন্ত ভালবাসা ও শ্রদ্ধা। বলা যায়, এ তিন চরিত্রে ত্রিরত্নের মতো বাংলা সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি।
নায়ক রাজ রাজ্জাকের জন্ম, কলকাতার টালিগঞ্জে। অভিনয়ের শুরুটাও ছিল সেখানেই। কিশোর বয়সে কলকাতার মঞ্চ নাটকে জড়িয়ে শুরু। এর পর ১৯৬৪ সালে আলে দাঙ্গার উত্তাল সময়ে নতুন জীবন গড়তে একজন সাধারন মানুষ হিসাবে আবদুর রাজ্জাক পরিবার সহ ঢাকায় চলে আসেন।কঠোর পরিশ্রম আর জীবনের প্রতিটি মূহুর্তের সাথে সংগ্রাম করে উপাধি পেয়েছেন আজকের নায়ক রাজ রাজ্জাক। আর এই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন তৎকালীন টেলিভিলশনের ঘরোয়া নামের ধারাবাহিক নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে।
জীবনে নানা সংগ্রামের পথ অতিক্রম করেন তিনি। তার পর আব্দুল জব্বার খানের সহযোগিতায় তিনি একবাল ফিল্মে কাজ করার সুযোগ লাভ করেন। তিনি 'উজালা' ছবিতে কাজ শুরু করেন পরিচালক কামাল আহমেদের সহকারী হিসাবে। এর পর সালাউদ্দিন প্রোডাকশন্সের 'তেরো নাম্বার ফেকু অস্তাগড় লেন' চলচ্চিত্রে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করে সবার কাছে নিজ মেধার পরিচয় দেন রাজ্জাক।
পরবর্তীতে কার বউ, ডাক বাবু, আখেরী স্টেশনসহ আরও বেশ কটি ছবিতে ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করে তিনি। পরে বেহুলা চলচ্চিত্রে সুচন্দার বিপরীতে তিনি নায়ক হিসেবে ঢালিউডে উপস্থিত হন এবং সবার মন জয় করে নেন। দর্শকের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে তিনি নায়করাজ হিসেবে পরিচিতি পান।
১৯৭৩ সালে রংবাজ ছবির নাম ভূমিকায় অভিনয় করে রাজ্জাক বাংলা চলচ্চিত্রের নতুন ধারা প্রবর্তন করেন। তিনি সূচনা করেন চলচ্চিত্রের আধুনিক অ্যাকশন যুগেরও। রংবাজ দিয়েই রাজ্জাক তাঁর অভিনয় জীবনে বৈচিত্র নিয়ে আসেন। ওই সময় রাজ্জাক বলেছিলেন, রংবাজ ছবির সাফল্যের পর আমার মনে হলো, দর্শকদের একঘেয়েমি থেকে মুক্ত রাখতে হলে সব ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে হবে। প্রয়োজনে দর্শকদের জন্য নিজের অর্থে ছবি নির্মাণ করতে হবে।
'কি যে করি' ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ২০১১ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তিনি আজীবন সম্মাননা অর্জন করেছেন। এই পর্যন্ত তিনি চার বার জাতীয় সম্মাননা লাভ করেন।
বিডি প্রতিদিন/ ২১ আগস্ট, ২০১৭/ ই জাহান