২২ জানুয়ারি, ২০১৮ ১২:৫৫

ছবি বাংলার নাম ইংরেজি

আলাউদ্দীন মাজিদ

ছবি বাংলার নাম ইংরেজি

সরকারি আদেশ অমান্য করে এখনো নির্মিত হচ্ছে ‘ইংরেজি’ শিরোনামে বাংলাদেশি চলচ্চিত্র। সেন্সর বোর্ড এসব ছবিকে অবলীলায় ছাড়পত্রও দিচ্ছে। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র সাংবাদিক ও গবেষক অনুপম হায়াৎ বলেন, এটি জাতি হিসেবে আমাদের দৈন্য ও চরম ব্যর্থতা। সেন্সর নীতিমালায় এ বিষয়ে কঠোর আইন থাকা উচিত ছিল। ২০১৪ সালে সরকারি এক প্রজ্ঞাপনে বাংলা ছবির ইংরেজি নামকরণ নিষিদ্ধ করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞা নির্মাতা বা সেন্সর বোর্ড মানছে না। এটি দুঃখজনক।

২০১৪ সালের ৭ মার্চ বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের শোবিজ বিভাগে ‘ইংরেজি নামে অবাধে ছবি নির্মাণ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর আগস্ট মাসেই সরকার বাংলা ছবির ইংরেজি নাম নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. রবিউল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়-‘সাম্প্রতিককালে অনাবশ্যকভাবে বাংলা সিনেমার নাম ইংরেজিকরণের প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। ঢালাওভাবে বাংলা চলচ্চিত্রের ইংরেজি নামকরণ বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এসব বিষয় বিবেচনা করে চলচ্চিত্রের নামের ছাড়পত্র প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির অনুসরণ নিশ্চিতকল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’

তথ্য মন্ত্রণালয়ের এই প্রজ্ঞাপনটি চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক সমিতি ও সেন্সর বোর্ডের কাছে প্রেরণ করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ২০১৪ সালের আগস্টের পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত ইংরেজি নামে বাংলা ছবি মুক্তি পেয়েছে। এসব ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো—গেইম রিটার্নস, বিগ ব্রাদার, অ্যাকশন জেসমিন, ইউটার্ন, ব্লাকমানি, লাভ ম্যারেজ, লাভার নম্বর ওয়ান, দ্য  স্টোরি অব সামারা, গ্যাংস্টার রিটার্ন, হেড মাস্টার, লাভ স্টেশন, সুইটহার্ট, মিসড কল, ব্ল্যাকমেইল, ওয়ার্নিং, রানআউট, আন্ডার কনস্ট্রাকশন, হিটম্যান, মাই নেম ইজ সিমি প্রভৃতি।

চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সচিব মুন্সী জালালউদ্দীন বলেন, সরকারি প্রজ্ঞাপনে ইংরেজি নামকরণকে নিষিদ্ধ করা হয়নি, নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। তারপরেও  অনাবশ্যকভাবে ইংরেজি নামকরণ সমর্থনযোগ্য নয়। এই প্রবণতা যদি বেড়ে যায় তাহলে সেন্সর বোর্ডের ১৫ সদস্যের যে কমিটি আছে তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে পারে।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায় প্রজ্ঞাপনটিতে এমন কোনো ক্লজ রয়েছে যার ফাঁক ফোকরে ইংরেজি নামকরণের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ও সেন্সর বোর্ডের সদস্য ইফতেখার নওশাদ বলেন, ছবির গল্পের সঙ্গে না গেলে অহেতুক ইংরেজি নামকরণ সমর্থন করি না। কিছু ইংরেজি শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ না থাকায় অনেক ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়। এ বিষয়ে এফডিসির ভূমিকা প্রধান। তারা অহেতুক ইংরেজি নামে ছবি এন্ট্রি না করলেই হয়।

প্রখ্যাত অভিনেতা ডি এ তায়েব বলেন, ইংরেজি নামকরণের প্রবণতা বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা আজিজুর রহমান বলেন, সেন্সর বোর্ড নীতিমালার এস আরও ১৯৮৫-এর ধারা ১ এর উপধারা ‘এ’ তে বর্ণিত আছে— ‘বাংলাদেশ বা এর জনগণের সমসাময়িক ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, প্রথা ও পোশাকের পরিপন্থী কোনো বিষয় চলচ্চিত্রে থাকতে পারবে না।’

এই নির্মাতার প্রশ্ন-ভাষাগতভাবে ছবির নামের দিকটি গুরুত্বপূর্ণ হলেও এর বাধ্যবাধকতার বিষয়টি সেন্সর বোর্ডের আইনে কেন উল্লেখ নেই?’ এই নীতিমালার দুর্বলতার সুযোগে অসাধু নির্মাতারা বাংলাদেশি ছবির নাম ইংরেজিতে রাখার দুঃসাহস দেখিয়ে যাচ্ছে। এটি প্রতিরোধ করা জরুরি। সেন্সর বোর্ড এ বিষয়ে কঠোর হবে বলে আশা করছি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর