১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ২০:৫৬

আইকনিকের নান্দনিক সন্ধ্যা 'গদ্য গানে আড্ডায়'

অনলাইন ডেস্ক

আইকনিকের নান্দনিক সন্ধ্যা 'গদ্য গানে আড্ডায়'

একুশে পদক প্রাপ্ত দেশ বরেণ্য কথা সাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও সময়ের মেধাবী ক’জন কথা সাহিত্যিকদের লেখালেখি নিয়ে সম্প্রতি এক নান্দনিক সাহিত্য সন্ধ্যার আয়োজন করেছিল আইকনিক। 

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত খোলামেলা আড্ডা দেওয়ার এই আয়োজনের শিরোনাম ছিল ‘গদ্য গানে আড্ডায়’। 

আড্ডায় একুশে পদক প্রাপ্ত সৈয়দ মনজুরুল ইসলামকে এবং বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রাপ্ত শাকুর মজিদকে সংবর্ধনা দেন অনুজ কথাসাহিত্যিকেরা। দুজনকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন কথা সাহিত্যিক ও অধ্যাপক হোসনে আরা জলি এবং কবি-অভিনেত্রী শানারেই দেবী শানু। 

এদিন শুরুতে একটি ইন্টারভিউ সেশনে অংশ নেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও শাকুর মজিদ। এই অংশটি সঞ্চালনা করেন জনপ্রিয় আরজে নিরব খান। উপস্থিত দর্শক ও তরুণ কথাসাহিত্যিকদের একাধিক কৌতুহলের জবাব দেন মঞ্চে উপবিষ্ট অতিথিবৃন্দ। 

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন,‘অনেক তরুনকেই দেখি তারা ফেসবুকে লেখেন ২০ হাজার ওয়ার্ড শেষ করলাম, আলহামদুলিল্লাহ।  আমার খুব ভালো লাগে। আবার কেউ কেউ এটাকে অসুস্থ প্রচার বলে কমেন্ট করেন। যারা এ ধরণের সমালোচনা করেন তাদের বলি, আপনারা কি বিশ হাজার ইয়াবা খেয়েছি শুনলে খুশি হতেন? আমার কাছে বিষয়টি পরিস্কার। এই অস্থির সময়ে কেউ সাহিত্য চর্চা করছে। এটাকেই এপ্রিশিয়েট করা উচিত সবার আগে।  আমি আজকের এই আয়োজনের মূল কারিগর তরুণ কথা সাহিত্যিক তানভীরের লেখা পড়ি সবসময়। ওর প্রত্যেকটা বইয়ের শিরোনামেই এক একটি গল্প থেকে যায়। এ ধরণের আয়োজন আরো বড় হোক। সাহিত্য নিয়ে কিছুটা সময় কাটানোও এক ধরণের শিল্প চর্চা।’

কথাসাহিত্যিক রেজানুর রহমান বললেন,‘ আমরা না হয় মারা যাবো। কিন্তু যে তরুন লেখালেখির স্বপ্ন দেখছে, সে কোন পথে যাবে? ভালো লেখার চেষ্টা করবে না লবি মেনটেইন করবে? সাহিত্য সম্পাদকদের অযাচিত স্বজনপ্রীতি বন্ধ হওয়া উচিত।’ তখন করতালিতে মুখর হয় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের হলরুম।

কবি-কথা সাহিত্যিক মাহবুব আজীজ তার লেখালেখি নিয়ে কথা বলেন এবং স্বরচিত কবিতা পড়ে শোনান। 

পলাশ মাহবুব বলেন,‘ আমি মঞ্চের পেছনের মানুষ। মঞ্চে দাঁড়িয়ে কথা বললে আমার পা কাঁপে। ’ ঠিক সে সময় মঞ্চে উপবিষ্ট সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম রসিকতা করে বললেন,‘ আমি দেখছি তোমার পা কাঁপছে না।’

এছাড়াও উপস্থাপক টুটুল বারবার কবি-অভিনেত্রী শানুকে নিয়ে নানান রসিকতার যোগ করছিলেন। এমন প্রাঞ্জল হাসি আনন্দের খোরাক জোগাল বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এই আইকনিকের সন্ধ্যা। 

এছাড়া কথা সাহিত্যে এবছর বেশ কিছু সম্মানজনক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত কথা সাহিত্যিক মোজাফফর হোসেন বলেন,‘প্রাণ খোলা আড্ডাটা আমাদের জন্য খুব জরুরী। সবচেয়ে জরুরী এই লেখালেখির চর্চার সাথে অধ্যাবসায়। আর আইকনিকের এই আয়োজন একদিন বৃহৎ থেকে বৃহত্তর হবে, সেদিন এটাও আমাদের কথাসাহিত্যে এক দারুন দৃষ্টান্ত তৈরি করবে বলে আমি মনে করি।’ 

মাসউদ আহমাদ বলেন,‘আমি খুবই সম্মানিত বোধ করছি এমন এক ব্যতিক্রমী আয়োজনে থাকতে পেরে।’

কথাশিল্পী লুৎফর হাসান, অনুষ্ঠানে উপস্থিত সৈয়দ মনজুরুল ইসলামকে নিয়ে তার নস্টালজিক স্মৃতির কথা বললেন। বললেন, ‘আমি ধন্য এমন একটি মঞ্চে নিজের গদ্য নিয়ে কথা বলার সুযোগ পেয়ে।’

কবি-কথা সাহিত্যিক গোলাম রাব্বানী বলেন,‘আমরা তো আজকাল শুনতে ভুলে গেছি। ফেসবুকে পড়ে আছি নিজেদের বিজ্ঞাপনে। সেখানে এই নির্মল আড্ডা, গল্প নিয়ে কথাবার্তা খুব ভালো লাগছিল। এই আয়োজন প্রতিবছরে একবার না হয়ে আরো বেশি হওয়া উচিত।’

আয়োজক কথা সাহিত্যিক তানভীর তারেক বলেন,‘ আমরা ভার্চুয়াল দুনিয়ার বাইরে একেবারে নির্জলা আড্ডা দেবার তাগিদেই এই আয়োজন করার চেষ্টা করছি প্রতিবছর। সবাই আজকাল স্বার্থ গোনে যে কোনো কাজে। আমাদেরও স্বার্থ আছে। সেই স্বার্থ হলো আমরা সম্মিলিত হয়ে নিজেদের সমৃদ্ধ করার প্রয়াস। আগামীতে দুই বাংলার লেখকদের নিয়ে বর্ধিত কলেবরে বড় একটি সাহিত্য সম্মেলন করার ইচ্ছে রয়েছে।’

খায়রুল বাবুই তার কথায় প্রশ্ন তোলেন, রম্য লেখককে কেন শুধু লেখক বলা হয় না? সে প্রশ্নের জবাব দেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।  

ইকবাল খন্দকার বলেন, যেহেতু সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম স্যার এভাবে উৎসাহ দিলেন তাই বইমেলাতে একাধিক বই লেখার ব্যাপারে আরো উৎসাহিত হলাম। গীতিকার-কথাশিল্পী ইশতিয়াক আহমেদ মজা করে বললেন,‘ বই মেলার মাসে এভাবে আইকনিকের অনুষ্ঠানে আসলে বই বিক্রির স্তুতি হয়। কিন্তু এই নির্মল আড্ডাটাও খুব কাজের।’ 

আমিরুল মোমেনীন মানিক তার গদ্য গানে মুগ্ধ করেন সকলকে।

শানারেই দেবী শানু বলেন,‘আমি সত্যিই খুব গর্ব বোধ করছি এমন আয়োজনের অংশ হতে পেরে। 

আড্ডা পর্বের শেষ দিকে হঠাৎ করেই মঞ্চে আসেন জনপ্রিয় শিশু সাহিত্যিক আমীরুল ইসলাম। তিনি বলেন,‘ এই চমৎকার ফিউশন অনুষ্ঠানকে স্বাগত ও শুভেচ্ছা জানাই। আমি আমন্ত্রণ পাইনি, তবুও এই নান্দনিক কোলাহলের খবর পেয়ে ছুটে এলাম। আমরা তো এখন আড্ডা দিতেই ভুলে গেছি।’ এরপর লিমনের গিটার ও  তুফানের কাহনে গান শোনান আরিফ, মানিক, লুৎফর হাসান ও তানভীর তারেক। 

পুরো আয়োজনটি পরিকল্পনা ও সমন্বয় করেছেন তানভীর তারেক ও মোস্তাফিজ মিঠু। উপস্থাপনা করেছেন টুটুল জহিরুল ইসলাম।

বিডিপ্রতিদিন/ ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮/ ই জাহান

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর