২২ জুলাই, ২০১৮ ২০:০৫
'নোলক'-এর পরিচালক নিয়ে জটিলতা

মূলত রাশেদের খামখেয়ালিপনা দায়ী: সনেট

অভিযোগ প্রত্যাখ্যান রাশেদের

শামছুল হক রাসেল

মূলত রাশেদের খামখেয়ালিপনা দায়ী: সনেট

বামে সাকিব সনেট, ডানে রাশেদ রাহা

এ যেন রবীন্দ্রনাথের ছোট গল্পের মতো- 'শেষ হইয়াও হইলো না শেষ'। বলছি, আলোচিত নির্মিতব্য ছবি 'নোলক' তৈরির ইতিকথা। গত বছর বেশ ঘটা করে ছবিটি নির্মাণের ঘোষণা দেন প্রযোজক সাকিব ইনতেজার চৌধুরী (সনেট) এবং পরিচালক হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয় রাশেদ রাহার নাম। এটাই ছিল তার পরিচালনায় অভিষিক্ত ছবি। ছবিটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে আছেন শাকিব খান ও ববি। মহরতের পরপরই নোলকের গোটা টিম পাড়ি জমায় ভারতের হায়দরাবাদে। এরপর বেশ কিছু লটের শুটিং ক্যামেরাবন্দী হয় সেখানে। প্রযোজকের পরিকল্পনা ছিল এ বছর পহেলা বৈশাখে ছবিটি মুক্তি দেওয়ার। সেই অনুযায়ী লগ্নীও করছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার এই আশায় পানি ঢালেন পরিচালক রাশেদ রাহা। বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে এভাবেই পরিচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন প্রযোজক সাকিব সনেট নিজেই। অনেকটা আক্ষেপের সুরে তিনি জানালেন ছবিটির শুটিং দীর্ঘায়িত হওয়ার নেপথ্যের কাহিনী। আরও বললেন, পরিচালক হিসেবে এই ছবিতে রাশেদ রাহা আর নেই। 

এদিকে, প্রযোজকের এই সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়েছেন রাশেদ রাহা। তাই এ বিষয়ে একটি অভিযোগপত্রও আজ রবিবার পরিচালক সমিতিতে জমা দিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে রাশেদ রাহা বলেন, মাস খানেক আগে এই ছবির প্রযোজক সাকিব সনেটের পক্ষ থেকে বাকি অংশের শুটিংয়ের জন্য পরিচালক ইফতেখার চোধুরীর সঙ্গে পরামর্শ করতে বলা হয়। বিভিন্ন সূত্রে জানতে পারি, আমাকে ছাড়াই পরিচালক ইফতেখার চৌধুরীকে দিয়ে ‘নোলক’-এর বাকি অংশের শুট করতে প্রযোজক শনিবার কলকাতায় পৌঁছেছেন। 

এদিকে, মুঠোফোনে কথা হয় সাকিব সনেটের সঙ্গে। কলকাতা থেকে তিনি বলেন, এই ছবির পরিচালক এখন আর রাশেদ রাহা নেই। আরও পরিষ্কার করে বলতে হয়, গত জানুয়ারির পরে তার সঙ্গে এই ছবি নিয়ে কোনো সম্পর্ক নেই। মুখের কথা শেষ না হতেই প্রশ্ন ছোঁড়া হলো-পরিচালকের সঙ্গে প্রযোজকের সম্পর্ক নেই? এবার সনেট বলেন, এজন্য রাশেদের খামখেয়ালিপনা দায়ী। হায়দরাবাদে শুটিং চলাকালীন বেশ কিছু আপত্তিকর ঘটনা ঘটেছে সেখানে। যার জন্য সম্পূর্ণ দায়ী পরিচালক নিজেই। বলতে পারেন কোনো স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ছিল না শুটিং সেটে। তখন অনেক কিছু মুখ বুঝে সহ্য করেছি- শুধুমাত্র সিনেমার স্বার্থে, লগ্নীকৃত টাকার দিকে চেয়ে। বেশ কয়েকবার সুযোগ দেওয়ার পরও রাশেদের খামখেয়ালিপনা থামেনি। একটা পর্যায়ে গত ২৮ জানুয়ারি নিজ হাতে রাশেদ আমাকে লিখিত দিয়েছেন পহেলা বৈশাখের আগে শেষ করবেন এই ছবির শুটিং। শুটিং শিডিউল নিয়েও কোনো জটিলতা পাকাবেন না। এছাড়াও কিছু শর্তও মেনে নিয়েছিলেন। এটাও বলেছিলেন, এসব শর্ত না মানলে তার সম্মানি ফেরত দিতে বাধ্য থাকবে। এখন সে অফিসিয়ালি অনেক কিছু করার চেষ্টা করছে আমার বিরুদ্ধে। তাই আমিও অফিসিয়ালি বলতে চাই, সে যে আমার ছবির পরিচালক তার কোনো ডকুমেন্টস নেই। যা ছিল তার সবই মৌখিক। সনেট আরও বলেন, গত ৪/৫ মাস এই ছবির সঙ্গে সংযুক্ত নন। এরপরও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে 'নোলক' নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য ও ছবি আপলোড করে যাচ্ছেন।

তাহলে কি এখন ইফতেখার চৌধুরীকে দিয়ে ছবির শুটিং চলছে? এবার সনেট বলেন, দেখুন, ইফতেখার চৌধুরী নতুন করে যুক্ত হননি। প্রথম থেকেই তিনি এই ছবির ভিএফএক্স টেকনিক্যাল উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন। এটা রাশেদও জানে। নতুন করে এ বিষয়ে জটলা পাকানোর কোনো মানে নেই। বর্তমানে আমার দায়িত্বে সহকারী পরিচালকের মাধ্যমে ছবিটির শুটিং চলছে। ছবিতে পরিচালকের নাম গেলে প্রযোজনে আমার নামই যাবে।

সনেটের দাবি করা সেই লিখিত হলফনামা প্রসঙ্গে রাশেদ রাহা বলেন, জানুয়ারি মাসে আমি তাকে (সনেট) কোনো লিখিত হলফনামা দেইনি। এগুলো মনগড়া। 

রাশেদ রাহা আরও বলেন, আমাকে যদি বাদ দেওয়ার ইচ্ছাই থাকতো তাহলে কলকাতায় যাওয়ার আগেই এক সাথে বসে একটা সুরাহা করতে পারতো। তাহলে আজ আর এত কথা আসতো না। আমাকে এড়িয়ে কলকাতার শুটিং করার কী দরকার ছিল? রাশেদের এই অভিযোগ প্রসঙ্গে সনেট বলেন, গত কয়েকমাস তাকে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। ফেসবুকে ইনবক্স করেছি। মেসেজ দেখার পরেও রিপ্লাই দেয়নি। এমনকি লোক মারফত খবরও পাঠিয়েছি। সবচেয়ে বড় কথা তার হাতের লেখা সেই হলফনামা অনুযায়ী সে এখন আর নোলক-এর পরিচালক নন।

অন্যদিকে, প্রযোজক ও পরিচালকের এই দ্বন্দ্বের অবসান চান চলচ্চিত্র বোদ্ধরা। তাদের মতে, যেখানে সিনেমায় লগ্নীকারক দিন দিন কমে যাচ্ছে সেখানে পরিচালকদের নিয়ে এসব অভিযোগ উঠলে নতুন করে এই শিল্পে ঝুঁকবে না কেউ। সম্প্রতি আরও দু'একজন পরিচালককে ঘিরে নানা অঘটন ও প্রশ্ন উঠেছে ফিল্মপাড়ায়। এতে করে ফিল্মপাড়ারই ক্ষতি হবে। যা মোটেও কাম্য নয়।

বিডি-প্রতিদিন/২২ জুলাই, ২০১৮/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর