১৯ অক্টোবর, ২০১৮ ১৫:১২

আইয়ুব বাচ্চুকে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা যায়নি এফডিসির কোনো সংগঠনের

অনলাইন প্রতিবেদক

আইয়ুব বাচ্চুকে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা যায়নি এফডিসির কোনো সংগঠনের

ব্যান্ড সংগীতের কিংবদন্তি প্রয়াত শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু ঢাকাই চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাক শিল্পী হিসেবেও ছিলেন তুমুল জনপ্রিয়। তার বেশ কিছু গান এখনও মানুষের মুখে মুখে। বাংলা চলচ্চিত্রে তরুণ প্রজন্মকে যুক্ত করতে আইয়ুব বাচ্চুর ভূমিকা ছিল অনবদ্য। ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’, 'আম্মাজান', ‘আকাশ ছুঁয়েছে মাটিকে’, ‘আমি তো প্রেমে পড়িনি প্রেম আমার উপরে পড়েছে’, ‘তোমার আমার প্রেম এক জনমের নই’ শিরোনামের বহু গান তার চলচ্চিত্র প্লে-ব্যাকের ক্যারিয়ার সমৃদ্ধ করলেও সেই শিল্পীর মরদেহে শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে দেখা যায়নি চলচ্চিত্রাঙ্গনের কাউকে। দেখে মেলেনি চলচ্চিত্রাঙ্গনের কোনো সংগঠনের উপস্থিতিও। 

শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সর্ব সাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হয় আইয়ুব বাচ্চুর মরদেহ। সেখানে প্রিয় শিল্পীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের ঢল নামে। ঢাকার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সংগঠন, বড় ছোট রাজনৈতিক দল, ঢাকার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও শহীদ মিনারে আইয়ুব বাচ্চুকে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করে। ছিল না কেবল চলচ্চিত্রাঙ্গনের কেউ। 

‘লুটতরাজ’ ছবির ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’ গানের মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাক ক্যারিয়ার শুরু হয় আইয়ুব বাচ্চুর। সে সময় গানটি রাস্তাঘাটে, পথে প্রান্তরে সবখানেই বেজেছে। এরপর অসংখ্য সিনেমায় গানে তার কণ্ঠ শোনা গেছে। 'আম্মাজান'র মতো ইতিহাস সৃষ্টি করা গান এ শিল্পীরই গাওয়া। এই গানটিকে বাংলা সিনেমার ইতিহাসের সবচেয়ে জনপ্রিয় গানগুলোর একটি ধরা হয়। 

এ ছাড়া বাংলা চলচ্চিত্রে গাওয়া আইয়ুব বাচ্চুর উল্লেখযোগ্য গান হলো- ‘সাগরিকা’ ছবির ‘আকাশ ছুঁয়েছে মাটিকে’, ‘ব্যাচেলর’ ছবির ‘আমি তো প্রেমে পড়িনি প্রেম আমার উপরে পড়েছে’, ‘লাল বাদশা’ ছবির ‘আরো আগে কেন তুমি এলে না’, ‘তেজী’ ছবিতে ‘এই জগত সংসারে তুমি এমনই একজন’, ‘স্বামী আর স্ত্রী’, ‘তোমার আমার প্রেম এক জনমের নই’, ‘মেয়েরা মাস্তান’ ছবিতে ‘ঘড়ির কাঁটা থেমে থাক’, ‘চোরাবালি’ ছবিতে ‘ভুলে গেছি জুতোটার ফিতেটাও বাঁধতে’ শিরোনামের গান।

'এক ঝাঁক পাখি উড়ে আকাশে', 'স্বামী আর ইস্তিরি বানাইছে কোন মিস্তিরি', 'এই জগতও সংসারে তুমি এমনও একজন'সহ জনপ্রিয় গানগুলোও আইয়ুব বাচ্চুর কণ্ঠের।

তাই শুধু যে ব্যান্ডসঙ্গীতের মানুষ ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু তা নয়। ছিলেন চলচ্চিত্রের মানুষও। চলচ্চিত্রের অনেক মানুষের সঙ্গে সখ্য ছিল তার। অথচ আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুর শোক যেন পৌঁছায়নি চলচ্চিত্রপাড়ায়। কেবল ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে দায় সেরেছেন তারা। বৃহস্পতিবার হাসপাতালেও দেখতে যাননি চলচ্চিত্রাঙ্গনের কোন মানুষ। তার মৃত্যুর পর চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট কোনো সংগঠনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতিও পাওয়া যায়নি। 

এ বিষয়ে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন বলেন, তিনি শুটিং-এর কাজে ঢাকার বাইরে আছেন। 

তবে চলচ্চিত্রের সবচেয়ে সক্রিয় সংগঠন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির পক্ষ হতেও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়নি। এ বিষয়ে জানার জন্য বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানের মুঠোফোনে। কিন্তু ফোনে অপর প্রান্ত থেকে কোনো রকম সাড়া শব্দ পাওয়া যায়নি। 

এক পর্যায়ে কথা হয় শিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য সাইমন সাদিকের সঙ্গে। তিনি বলেন, কিছুক্ষণ আগে আইয়ুব বাচ্চুর জানাজায় অংশ নিলাম। ছোটবেলা থেকে আমি তার একনিষ্ঠ ভক্ত। সেই টানেই জানাজায় অংশ নিয়েছি। তবে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে কেউ আসেনি কেন তা আমি জানি না। আমি এসেছি ভক্ত হিসেবে, সমিতির সদস্য হিসেবে নয়। সাইমন আরও বলেন, এসব বিষয়ে সমিতিগুলোকে আরও সচেতন হতে হবে।
 
বিডি-প্রতিদিন/১৯ অক্টোবর, ২০১৮/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর