১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ১২:৩৯

'শহুরে আধুনিক মশলাবিহীন রান্না'

রিমি রুম্মান, নিউইয়র্ক (যুক্তরাষ্ট্র)

'শহুরে আধুনিক মশলাবিহীন রান্না'

যদিও আম্মা ভালো রাঁধতে জানতেন না, তবে চেষ্টার কমতি ছিল না মোটেও। আমাদের ভালো-মন্দ রেঁধে খাওয়াতে চাইতেন প্রাণপণে। প্রায়ই আক্ষেপ করে বলতেন, "এতো তেল, মশলা দিয়ে যত্ন করে ভেজে রান্না করি, তবুও ক্যান জানি তোর দাদীর মতন হয় না।"

সপ্তাহের ছুটির দিনটিতে খুব ভোরে প্রায়ই আমরা দাদুর বাড়ি যেতাম। দাদু বয়সের ভারে কুঁজো হয়ে হাঁটতেন যদিও, কিন্তু আমাদের দেখে উচ্ছ্বাস, আনন্দে এঘর, ওঘর, রান্নাঘরে ছুটোছুটি বেড়ে যেতো। মাটির চুলায় দাউদাউ আগুনে ক্ষেতের লাল চালের ভাত রান্না হতো। অন্য চুলোয় তাজা মাছ কুটে, ধুয়ে সামান্য হলুদ আর লবণে জ্বাল দিতো। অতঃপর তরকারির সাথে মিশিয়ে রান্না হতো। শহুরে আধুনিক মশলাবিহীন রান্না। আমরা মেঝেতে পাটি বিছিয়ে সবাই একসাথে খেতে বসতাম। তৃপ্তি নিয়ে খেতাম। দাদূ সামনে বসে তদারকি করতেন। পাতে তুলে দিতেন। আব্বার পাতের দিকে তাকিয়ে বলতেন, " আব্দুর রব, তোঁয়ারে আরেকটু ভাত দেই ?" আব্বা প্লেট এগিয়ে দিতেন।

দুপুরে বিছানায় শুয়ে রাজ্যের গল্প হতো। পাশের বাড়ির রহিমার মা'র কোমরের ব্যথা বেড়েছে, অমুকের মা বিছানায় শয্যাশায়ী, তমুকের সাথে জামাইয়ের তালাক হয়েছে... এমনতর গ্রামের অন্যদের নানান সুখ-দুঃখের গল্প। সন্ধ্যা নামার আগে শহরে নিজেদের বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিতাম আমরা। দাদু ছলছল চোখে দু'হাতে আম্মাকে জড়িয়ে ধরে বলতেন, "বউ, আবার কবে আইবা?" আমরা আঁকাবাঁকা সরু রাস্তা ধরে হেঁটে বাজার পর্যন্ত যেতাম, আর বিষণ্ণ মনে বারবার পিছু ফিরে চাইতাম। দেখতাম দাদু একহাতে লাঠি ভর করে দাঁড়িয়ে, আর অন্যহাতে আঁচলে চোখ মুছতেন। আমাদের নিয়ে রিক্সাটি ধুলো উড়িয়ে ট্রেন স্টেশনের দিকে ছুটতো। সবুজ শেওলার দেয়াল ঘেরা স্টেশনের নাম ছিল "মধুরোড"।

আমাদের ভীষণ মায়ার ছুটির দিনগুলো এখানকার ডিজনিল্যান্ড এ ঘুরার আনন্দের চেয়ে মধুরতর ছিল। শুভ হোক সকলের দিন।

(লেখিকার ফেসবুক পেইজ থেকে সংগৃহীত)


বিডি-প্রতিদিন/১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭/মাহবুব

সর্বশেষ খবর