৪ মার্চ, ২০১৭ ১৭:০৩

কানাডার কোর্ট ব্যবস্থা কতো চমৎকার

শওগাত আলী সাগর:

কানাডার কোর্ট ব্যবস্থা কতো চমৎকার

শওগাত আলী সাগর

টরন্টো থেকে প্রায় সাড়ে চার শ' কিলোমিটার ড্রাইভিং দূরত্বের সুপ্রীম কোর্ট যখনি কোনো মামলার রায় ঘোষণা করে তখনি আমার ‘এলার্ট সিস্টেম’ তা জানান দেয়। ফেডারেল কোর্ট প্রতিদিনই গড়ে ৮/৯ টি মামলার রায় প্রকাশ করে। এলার্ট সিস্টেমে সেগুলো আমার ই-মেইলের ইনবক্সে চলে আসে। মামলার বিষয়বস্তু দেখেই ঠিক করে নেওয়া যায়- এই ডকুমেন্টটি আমার কাজে লাগবে কী না। কোর্টের এই ব্যবস্থাটাকে আমার কাছে চমকপ্রদ মনে হয়। প্রতিদিন কোর্টে যাওয়ার ঝক্কি ঝামেলা নেই। কানাডায় অধিকাংশ মামলায়ই শুনানী ধরে নিউজ করা হয় না বা করা যায় না। রায় প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। আর রায় প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই তো সেটি ইমেইলের ইনবক্সে চলে আসে।

সপ্তাহের শেষ দিন শুক্রবার ইনবক্সে আসা ফেডারেল কোর্টের রায়গুলোর মধ্যে একেবারে ৯ নম্বরটি ‘চৌধুরী ভার্সেস কানাডা (সিটিজেনশীপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন) । ‘চৌধুরী’ নামটা দেখেই মনে হয়- এই মামলায় বাংলাদেশ কিংবা আশপাশের দেশের কেউ জড়িত। সিস্টেম ক্লিক করতেই রায়ের কপিটা খুলে যায় চোখের সামনে। নাসিম চোধুরী আসলে বাংলাদেশেরই নাগরিক, এক সময়কার শিবির কর্মী, পরবর্তীতে তিনি বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন। ‘বিএনপি সন্ত্রাসী দল বিবেচনায় তার রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদনও নাকচ করেছে ইমিগ্রেশন অফিসার। সেই সিদ্ধান্ত নিয়েই জুডিশিয়াল রিভিউর আবেদন।

খুব মনোযোগ দিয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে পড়লাম রায়ের কপিটা। জুয়েল গাজীর মামলায় ফেডারেল কোর্টের এক বিচারক বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। এই মালায় বিচারক ভিন্ন কোনো মতামত দিয়েছেন কী না- সেটা নিয়ে কৌতূহল। ভিন্ন ইমিগ্রেশন অফিসার হলেও বিএনপি সম্পর্কে এই অফিসারের বক্তব্য এবং যুক্তি ঠিক আগের মামলার অফিসারের মতোই। মনে হচ্ছে,‘বিএনপি সন্ত্রাসী সংগঠন’- এটা আসলে কানাডার ইমিগ্রেশন ও সিটিজেনশীপ মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল অবস্থান।

নাসিম চৌধুরীর আবেদনের নিষ্পত্তি করতে গিয়ে বিচারক বিএনপির সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সম্পর্কে ইমিগ্রেশন অফিসারের তথ্য বা বক্তব্য নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলেন নি। বিচারক শামীমের মামলার নিষ্পত্তি করতে গিয়ে বললেন, যেই সময়কালের কর্মকান্ডের জন্য বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। সেই সময়ের অনেক আগেই শামীম সংগঠনের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে আমেরিকা পাড়ি জমিয়েছে। কাজেই তার ‘সাবেক সংগঠনের সন্ত্রাসী তৎপরতার’ জন্য তাকে দায়ী করা যায় না। আদালত শামীমের কেইসটি পর্যালোচনার জন্য ইমিগ্রেশন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে। এই রায়টি পড়তে পড়তেই মনে হলো সামনের দিনগুলোতে ফেডারেল কোর্টের প্রতিটি রায়ের উপরই চোখ রাখতে হবে। কে জানে- কোন রায়ে কী বিষ্ফোরক থাকবে। আর রায়গুলো তো ইনবক্সেই চলে আসবে, কেবল চক্ষু মেলিয়া দেখা আর কি।

 বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর