১২ এপ্রিল, ২০১৭ ১১:৩৮

এখন মেয়ের বকুনি খাই: বাবুল আক্তার

অনলাইন ডেস্ক

এখন মেয়ের বকুনি খাই: বাবুল আক্তার

স্ত্রীকে হারানোর পর দুই সন্তানের দায়িত্ব এখন নিজের কাঁধে। আগে তার ভোর হতো ৮টায়। সন্তানদের স্কুলের জন্য এখন হয় ৬টায়। এরপর মেয়েকে প্রস্তুত করে স্কুলের দিকে ছোটা। কথা হচ্ছে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের। স্ত্রী মিতু নির্মমভাবে খুন হওয়ার পর মা-মরা সন্তান দু'টোকে এখন বাবুল আক্তারই আগলে রেখেছেন। বদলে গেছে তার রুটিন। পুলিশের চাকরি ছেড়ে আছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। সন্তান লালন-পালন করতে গিয়ে নানা অভিজ্ঞতা অর্জন করছেন। বিভিন্ন আর্টিকেল পড়ছেন। আর নিজের সেই অভিজ্ঞতাগুলো নিয়মিত তুলে ধরছেন ফেসবুক পেজে। উদ্দেশ্য- তার লেখাগুলো যদি অন্য কারও কাজে লাগে।  গতকাল মঙ্গলবার লেখা তার একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

এখন বাচ্চাদের প্রায়ই স্কুলে দিয়ে ও নিয়ে আসতে হয়। মাঝে মাঝে না যেতে পারলে মেয়ের বকুনিও খেতে হয়, দিতে হয় হাজার কৈফিয়ত! "বাবা, তুমি কেন আনতে যাওনি আজ? দেখ না সবার আম্মুরা নিতে যায়?" "ওহ্ আচ্ছা বুঝতে পেরেছি, আমাকে তুমি ভালোবাস না, তাই যাও না।"

মাঝে মাঝে স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে ছেলের জন্য অপেক্ষা করতে করতে দেখি স্কুল শেষে সন্তানেরা ফেরার সাথে সাথে কোন কোন অভিভাবক খাতা মিলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। একদিন দেখলাম, ছুটির ঘন্টা বাজতেই এক ছোট্ট সোনামণি স্কুল শেষের স্বস্তি নিয়ে বাড়ি ফেরার উৎসাহে মায়ের কাছে দৌড়ে আসে। আর মা তখন ব্যস্ত হয়ে পড়েন সন্তানের খাতাপত্র নিয়ে। ঠিকমত লিখেনি বলে বকুনি খেয়ে রীতিমত চেঁচিয়ে কাঁদছে বাচ্চাটি।

বাচ্চাদুটোকে একা সামলাতে গিয়ে সন্তান লালন-পালনের নানা আর্টিকেল পড়ি নিয়মিত। বুঝলাম, শিশুরা হয় বায়বীয়। তাদের যেই পরিবেশে রাখা হয় আর যেই অভ্যাসে অভ্যস্ত করা হয় তারা আজীবন তা-ই লালন করে।

স্কুল ছুটির সাথে সাথে 'আজ ক্লাসে কী পড়িয়েছে?' 'সব ঠিকমত লিখেছ?' এসব প্রশ্ন করে শিশুকে ভীতির মধ্যে ফেলে না দেওয়াই উত্তম। এই প্রশ্ন থেকে শিশু শিখে স্কুল শুধুই পড়ালেখার জায়গা। কিন্তু আসলেই কী তাই? লেখাপড়ার পাশাপাশি স্কুল শিশুর মানসিক, শারীরিক এবং সামাজিক উন্নয়নের সহায়ক প্রতিষ্ঠান।
ছুটির পর সন্তানকে বুকে টেনে নিয়ে যদি প্রশ্ন করা হয় 'আজ কেমন দিন কাটালে, বাবা?' তবে গল্পে গল্পে সে আপনার সাথে প্রতিদিনের সব কথা শেয়ার করা শিখবে। দীর্ঘদিনের চর্চায় সন্তান হয়ে উঠবে আপনার বন্ধু। বড় হয়েও নিজের সব বিষয় জানাবে আপনাকে। তখন সন্তান কী করছে বা কার সাথে মিশছে সেই চিন্তায় অস্থির থাকতে হবে না। বন্ধুত্ব পরিচর্যার বিষয়, হঠাৎ করেই গড়ে ওঠে না।

সন্তানকে জিজ্ঞেস করা উচিৎ 'সে স্কুলে কাকে কাকে সাহায্য করেছে, কী কী ভাল কাজ করেছে।' এতে সে শিখবে জীবনে অন্যকে সাহায্য করা, ভাল কাজের মাধ্যমে সৎ মানুষ হওয়া লেখাপড়া শেখার মতই গুরুত্বপূর্ণ।

বাচ্চার কাছে জানতে চাওয়া উচিৎ 'সে নতুন কোন খেলা খেলেছে কী না। ক্লাসে মজার কিছু শিখেছে কী না।' এতে সে বুঝবে শেখার মাধ্যমেও জীবনকে উপভোগ করা যায়। অনেক বাচ্চাকে দেখেছি স্কুলে যেতে চায় না, কান্নাকাটি করে। কারণ সে স্কুলের আনন্দ উপভোগ করতে শিখেনি। অথচ স্কুল কোন ভীতির জায়গা না। নতুন এবং মজার কিছু শেখার আর করার জায়গা, উপভোগ করার জায়গা।

তাহলে কী লেখাপড়ার দরকার নেই?! আলবৎ আছে। তবে বাচ্চা তো এখন স্কুলে সবে শুরু করেছে লেখাপড়া। সে কেবলই চিনে নিচ্ছে পথঘাট। আমাদের আচরণই সন্তানের জীবনকে আকার দেয়। তাই কেবল পড়ালেখার গন্ডিতেই রাস্তা এঁটে দেওয়া উচিৎ না। সামনে এগুতে এগুতে সে নিজেই বুঝে যাবে পড়াশুনার মর্ম, প্রয়োজনীয়তা। কেবল অক্ষরজ্ঞানের দৌড়ে প্রথম হতে গেলে প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে এ.পি.জে. আব্দুল কালাম কখনও তার দেশের প্রসিডেন্ট এবং সেরা বিজ্ঞানী হতে পারতেন না। আমাদের উচিৎ বইখাতায় সীমাবদ্ধ না রেখে সন্তানের চারপাশ প্রসারিত করে দেওয়া।

শৈশব একটাই। গত হলে আর ফিরে আসবে না। আজ থেকে বিশ বছর পর আমাদের সন্তান যেন শৈশবের সুখস্মৃতি মনে করতে পারে, যেন রোমন্থন করতে পারে স্কুল শেষে আপনার আর তার গল্পের ফুলঝুরি আর স্মৃতিকথা।

শুদ্ধ মমতায় প্রতিটি শিশুই পাক নিখাদ শৈশব। (বাবুল আক্তারের ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত)

 

বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর