১৫ এপ্রিল, ২০১৭ ১১:২১

কুকুরপ্রেমী একজন সুলক্ষ্মী

তসলিমা নাসরিন

কুকুরপ্রেমী একজন সুলক্ষ্মী

সুলক্ষ্মী দাশগুপ্ত রাস্তার কুকুরদের খাওয়ান জানতাম। কিন্তু খাওয়ানোটা কখনও সামনে থেকে দেখিনি। অনেকদিন বলেছি একদিন সঙ্গে যাবো। সেই একদিনটা এত কাল আসেনি, তবে আজ এলো। আজ বিকেলে বেরিয়েছিলাম সুলক্ষ্মীদি'র সঙ্গে। পাঁচ ঘণ্টা লাগলো খাওয়াতে খাওয়াতে। সকালে এক অঞ্চলের কুকুরদের খাওয়ানো হয়, বিকেলে আরেক।

প্রতিদিন ৪০০ কিলো ভাত আর চিকেন বড় বড় কৌটোয় ঢেলে গাড়িতে করে সুলক্ষ্মী এবং তার সৈন্য সামন্ত রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় থেমে থেমে কুকুরদের থালা বিছিয়ে খাবার দেন। কুকুররা অপেক্ষা করতে থাকে, তারা জানে সুলক্ষ্মী ওই সময়টায় খাবার নিয়ে আসবেন। কুকুরেরা তাদের নিজের চৌহদ্দিতে থাকে। খাবারের গাড়ি প্রতিটি কুকুরের কাছে থামে। সুলক্ষ্মী প্রতিটি কুকুরকে চেনেন। অসুস্থ কুকুরদের জন্য ওষুধ নিয়ে যা্ন, চিকেনের ভেতর ওষুধ ভরে খাইয়ে দে্ন। বেশি অসুস্থ হলে হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসা করিয়ে আনেন। কখনও নিজের বাড়িকেও হাসপাতাল বানিয়ে ফেলেন।

ডাস্টবিন ঘেঁটে কুকুরেরা বাসি পচা নোংরা যা-ই অখাদ্য পায়, খেয়ে নেয়। কখনও তাও জোটে না, না খেয়ে থাকে। কুকুরের পা ভেঙ্গে দেয় লোকে, কুকুরদের গণহারে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলে। কুকুর যত না কুকুরের নাম, তার চেয়ে বেশি গালির নাম। কাউকে অপমান করতে হলে, অপদস্থ করতে হলে মানুষ তাকে কুকুর বলে ডাকে।

খারাপ লেগেছে দুটো কুকুরকে বেঁধে রাখা হয়েছে দেখে। রাস্তার ওপর দুটো চায়ের দোকানের লোক কুকুরকে নিজের সম্পত্তি বলে মনে করছে। বলে এলাম কুকুরের স্বাধীনতা হরণ করার কোনো অধিকার তাদের নেই। অনেকে বলে মানুষ তো খেতে পায় না, মানুষকে না খাইয়ে কুকুরকে খাওয়াচ্ছ? মানুষকে তো কত কেউ খাওয়ায় , সারা পৃথিবীতে কত রকম সংস্থা সংগঠন। কুকুরদের খাওয়ানোর কেউ নেই। সুলক্ষ্মী এই কাজটি কোনও পণ্ডিতের আদেশে করছেন না, করছেন সম্পূর্ণই পশুপাখিদের প্রতি ভালোবাসা থেকে। এখনও নিজের পকেট থেকে খরচ করে যাচ্ছেন। টাকা পয়সায় খুব ধনী নন, তবে হৃদয়ে ধনী।

সুলক্ষ্মী কুকুরদের জন্ম নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাও করেন। যে প্রাণীগুলোর জন্ম হয়েই গিয়েছে, তাদের কাউকে যেন না খেয়ে মরতে না হয়, খিদেয় কষ্ট পেতে না হয়- এই চান। সুলক্ষ্মী এই কাজটা ১৫ বছর যাবত করছেন। একা। কেউ যোগ দিতে চাইলে টাকা দিন, নয়তো চাল দিন, চিকেন দিন। কিছু একটা দিন। একটা দেশ কতটা সভ্য, তা সেই দেশের মানুষ তাদের পশুদের সঙ্গে কী রকম আচরণ করে, তার ওপর নির্ভর করে।


(লেখিকার ফেসবুক পেইজ থেকে সংগৃহীত)

 

বিডি প্রতিদিন/১৪ এপ্রিল, ২০১৭/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর