১ মে, ২০১৭ ১১:১৮

অভিনয় করতে করতে আকাশী হাঁপিয়ে উঠছে

মাকসুদা আক্তার প্রিয়তি

অভিনয় করতে করতে আকাশী হাঁপিয়ে উঠছে

আকাশী নামের একটি মেয়ের জীবনযুদ্ধ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কলম ধরেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত মিস আয়ারল্যান্ডখ্যাত মাকসুদা আক্তার প্রিয়তি। এবার সেই কাহিনীর তৃতীয় পর্ব উপস্থাপন করেছেন এই মডেল-অভিনেত্রী। বাংলাদেশ প্রতিদিনের পাঠকদের জন্য সেটা হুবহু তুলে ধরা হলো।

আকাশী মেতেছিল সমাজে লোক দেখানো সুখী হওয়ার প্রতিযোগিতায়। পৃথিবীর বেস্ট স্বামী তার জীবনসঙ্গী তা যেন তাকেই প্রমাণ করতে হবে তার আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধবদের কাছে। আকাশী হয়তো বুঝতো না যে, প্রমাণ তখনই করতে হয় যখন ওই ব্যপারটিতে কোন সন্দেহ থাকে। বয়স কম, জীবনে দেখেছে কম, এতো কিছু বুঝবে কিভাবে? তার কাছে বড় হলো সমাজে 'প্রেসটিজ' ইস্যু। তা দেখে বা শিখে বড় হয়েছে। সে যেমনটি করতো, নিজেই নিজের জন্য শপিং করে বান্ধবীদের/কলিগদের বলবে, তোমাদের দুলাভাই গিফট করেছে। নিজেই বাইরে থেকে ফুল কিনে ছবি উঠিয়ে ফেসবুক এ আপলোড দিয়ে বলবে, ‘ ও কাল রাতে কিনে এনেছে’ অথবা অতিথিরা বাসায় আসলে তাদেরকে বলবে। বিশেষ দিন গুলোতে নিজেই সব কিছু আয়োজন করে বান্ধবী/কলিগদের বলতো, তোদের দুলাভাই আমাকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য এতকিছু করেছে। এমনকি বেশীরভাগ সময় এই ব্যাপারগুলো পুরোপুরি সত্য লাগার জন্য আকাশী তার স্বামীর সাথে যুক্তি-পরামর্শ করে নিতো। হ্যাঁ, জামাই বাবাজি সবই জানতেন, সায়ও দিতেন কিন্তু কখনও নিজ থেকে সত্যিকারের মতো আকাশীর জন্য কিছু করার চেষ্টা করতেন না। আর এই দিকে আকাশী টাকা দিয়ে সুখ কেনার চেষ্টায় থাকতো, আর সে চেষ্টাই শুধু করতে পারতো কিন্তু তার ভিতর অজানা শূন্যতা রয়েই যেতো , ওইটা সে পূরণ করতে পারতো না কোনভাবেই। 

এদিকে, শ্বশুরবাড়ির সবাইকে খুশী রাখা আকাশীর মোক্ষম দায়িত্ব। তাদের যেন আকাঙ্ক্ষার শেষ নেই। দায়িত্ব পালন করতে না পারলে বিয়ে করে এসছে কেন এই বাড়িতে? আচ্ছা বলুন তো, বিয়ের ব্যাপারটি কি এমন যে, শ্বশুরবাড়ির সবার মন রক্ষা করার জন্যই বাঙালী একটি মেয়ের বিয়ের হয়, তার নিজের কোন স্বপ্নের অস্তিত্ব থাকবে না? শুধুমাত্র আরেক পরিবারের পূর্ব 'প্রেশার' নতুন কারও উপর চাপিয়ে দেয়ার জন্যই একটি মেয়েকে বিয়ে করিয়ে বাড়িতে আনা। কোথায়, বিয়ে করার আগে তো পারিবারিকভাবে ওই তথ্যগুলো খুব ভালোভাবে গোপন করা হয়। যৌতুক আজকাল কমে গেলেও মেয়েকে তার ঘর সাজিয়ে তাকে তার শ্বশুরবাড়ি পাঠানো হচ্ছে কিনা তা সামাজিক 'প্রেসটিজ' ইস্যু ছেলেপক্ষদের কাছে। 

যাইহোক, আকাশী যেহেতু কর্মজীবী মেয়ে ছিল, বাসার কাজে তেমন হাত দিতে পারতো না। কিন্তু শ্বশুর-শাশুড়ি, ননদ-দেবর সবার আর্থিক আবদার/প্রয়োজনগুলো রাখতো তার সাধ্যমতো। প্রশ্ন কখনও তুলেনি যেহেতু এটা তার নিজ পরিবার। কিন্তু আসলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরের মেয়ে পরের মেয়েই রয়ে যায়। যত কিছুই করুক না কেন আকাশী সব প্রশংসা কুড়াতো তার স্বামী জয়। জয়ের পরিবার আত্মীয়-স্বজনদের কাছে শুধু জয়ের প্রশংসা করতো, অথচ সেই কাজটি হয়তো আকাশী করেছে। জয়ও তা উপভোগ করতো আর আকাশী মুখ বুজে তাকিয়ে তাকিয়ে তামাশা দেখত কিভাবে পুরো একটি পরিবার এমন বিষাক্ত হতে পারে, যেখানে আকাশীকে ওই পরিবারের সদস্য হিসাবে কেউ দেখছে না, জানে শুধু একটা হাঁস বলে, যে কিনা স্বর্ণের ডিম পাড়ে। কথায় আছে নাকি, কাউকে কিছু করলে তার বিনিময়ে কিছু আশা করতে হয় না, কিন্তু কতবার? কত দিন? কত বছর?

অভিনয়ের ওই সংসারে অভিনয় করতে করতে আকাশী দিন দিন হাঁপিয়ে উঠছে। একজন দিন মজুর দিন শেষে কাজ করে একটা প্রাপ্তি পায়, যা নিজ চোখে দেখে শান্তি পায়। কিন্তু আকাশী দিন শেষে তার প্রাপ্তির পাল্লা থাকে শূন্য। তার ঝোলাতে না থাকে তার প্রতি কারও আদর/ ভালোবাসা, না থাকে নিজের কষ্টে অর্জিত অর্থ।
একদিন হঠাৎ আকাশী অফিসে এসে জানতে পারে ...(জানবেন পরের লেখায় )
আকাশী – ৩

বিডি-প্রতিদিন/০১ মে, ২০১৭/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর