৯ মে, ২০১৭ ১৩:৩৫

এমন বৈষম্য মানতে কষ্ট হচ্ছে : প্রিয়তি

মাকসুদা আক্তার প্রিয়তি

এমন বৈষম্য মানতে কষ্ট হচ্ছে : প্রিয়তি

আমি ডান হাতি। যখন এই লেখাটি লিখছি তখন শুধু একটি হাত ব্যবহার করে, তাও আবার বামহাত। ছোট এতো টুকুন বাংলা লিখা লিখতে গিয়ে কতো বার মুছতে হয়েছে আর কতো বার ভুল করেছি তা না হয় নাই বক বক করলাম। কিন্তু প্রতিবারই তিলে তিলে উপলব্ধি করাচ্ছে আমরা আমাদের শরীরের শুধু একটি ছোট্ট অঙ্গহীন কতোটা অসহায়, একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বা দুর্ঘটনা কিভাবে এক মুহূর্তেই আমাদের সাজালো- গুছানো পরিকল্পিত জীবনকে উলটপালট করে দিতে পারে। 

এই ভাবনাগুলো যদি আমার মতো সিকিউর জায়গায় বসা একজন মানুষ বলতে পারে, আমি ভেবে কুল পাই না, নিম্নশ্রেণীর বা অল্প আয়ের গরীব মানুষগুলোর কি অবস্থা হতে পারে।
 
ছবির শুটিং এ ডান হাতে প্রচণ্ড ব্যথা পেয়েছি, বৃদ্ধাঙ্গুলিটা ভেঙ্গেছি। প্রোডাকশন থেকে টিমের প্রতিটা কর্মীর জন্য বীমা করা থাকে তাই কোনো ঝামেলা হয়নি, ফ্রি তে যথাযথ ট্রিটমেন্ট হচ্ছে, চলছে। (যা বিরক্ত লাগে তা হলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাসপাতালে বসে থাকা, নিজ বাচ্চা ও পরিবার থেকে দূরে থাকা। যা আবার এক অর্থে সময় কেটে যাচ্ছে, এই যে বসে বসে লিখছি, জীবনের উলটপালট সময়গুলো কাছ থেকে উপলব্ধি করছি আর দেখছি হাসপাতালে আসা প্রতিটা মানুষ, সবার তো একই কাহিনী, তাই না? কে জানতো কি কারণে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে তাকে আসতে হবে ? )
 
উপরের এতো গুলো কথা লিখতে বসলাম হাসপাতালে বসে বসে ইউটিউবে বাংলাদেশী 'যমুনা টিভি চ্যানেল'র একটা রিপোর্ট দেখে। তাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এমন একটা বিষয় তুলে ধরার জন্য। রিপোর্টটির মাধ্যমে জানতে পারলাম, বাংলাদেশের সিনেমা শুটিং এর সময় ফাইটারদের জন্য নাকি কোন জীবনবীমা করা থাকে না। তাদের ইন্টারভিউ দেখে আমি সত্যি মর্মাহত এবং সাথে হতবাকও যে, তাদের জীবনকে কতোটা অবমুল্যায়ন ও কতটা তাচ্ছিল্য করা হয়। 

একটি ফটোশুট এ পর্যন্ত আমাদের বীমা করা থাকে, আর সেইখানে বড়পর্দার ওই ফাইটাররা জীবনের এতো ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে, যেখানে তাদের একজনের শারীরিকভাবে কিছু হলে পুরো পরিবার অচল, পথে বসার মতো অবস্থা। এমন বেহাল অবস্থা এবং বৈষম্যটা মানতে আসলেই কষ্ট হচ্ছে। যেখানে লাখ লাখ টাকা একটা মুভিতে বিনিয়োগ করা হয় এবং আয় হয়।
 
জানি না, ফেসবুকে দেয়া আমার দুইটা কথা কোনো কিছুর পরিবর্তন আনতে পারবে কি না যেহেতু আমি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র পরিবারের কেউ নই। কিন্তু আমি বাংলাদেশ সরকার হস্তক্ষেপ আসা করছি ও চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করবো, যাদের ছাড়া একটি মুভির অ্যাকশন দৃশ্য হতে পারে না, তাদের জন্য কিছু করতে। যাতে করে ওদের বা ওদের পরিবারের কাউকে পথে বসতে না হয়। আঘাত পেলে যেন তাদের পূর্ণ চিকিৎসা ও পরবর্তী চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকে, এই আহবান করছি।
ধন্যবাদ।

 

(লেখকের ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত)

 

বিডি প্রতিদিন/৯ মে, ২০১৭/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর