২ জুন, ২০১৭ ১৭:৩২

বিটিসিএল এর এমওটিএন প্রকল্পের বিওকিউ নিয়ে তদন্ত চাই

রাশেদ মেহেদী

বিটিসিএল এর এমওটিএন প্রকল্পের বিওকিউ নিয়ে তদন্ত চাই

ফাইল ছবি

আমি প্রায় ১৪ বছর চারটি পত্রিকায় টেলিযোগাযোগ খাত নিয়ে রিপোর্ট করছি। পেশাগত দায়িত্বপালন করতে গিয়ে বিচিত্র রকমের অভিজ্ঞতা হয়েছে। পাশাপাশি টেলিযোগাযোগ খাত সম্পর্কে সম্যক একটা জানা বোঝাও হয়েছে। চলতি বছরের একটা অভিজ্ঞতার কথা বলি। গত ৯ জানুয়ারি বর্তমান কর্মস্থল সমকালের প্রথম পৃষ্ঠায় আমার একটি রিপোর্ট ছাপা হয়, যার শিরোনাম ছিল, ‌'গভীর জলের দূর্নীতি ঠেকানো যাচ্ছে না'

এই রিপোর্ট ছাপার পর ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের দায়িত্বশীল একজন আমাকে বললেন, ‌'আপনি মিসগাইডিং রিপোর্ট করেছেন।' আমি শুধু বলেছিলাম, 'আমি সব তথ্য-প্রমাণ যাচাই করেই রিপোর্ট করেছি। আপনি যাচাই করে দেখুন'। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ বিষয়টি যাচাই করার জন্য আমার রিপোর্টের রেফারেন্স দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করল। পাচ সদস্যের কমিটি তিন মাস ধরে তদন্ত করে রিপোর্ট দিল। দেখা গেল তদন্ত রিপোর্ট সমকালের রিপোর্ট সত্য প্রমাণিত হয়েছে, বরং যেখানে সমকালের রিপোর্টে ‌'অনিয়ম' বলা হয়েছিল, সেখানে তদন্ত রিপোর্ট বলে দিল 'গুরুতর অনিময়' হয়েছে......

২০০৫ সাল। তখন বিএনপি-জামায়াত সরকার ক্ষমতায়। সে সময় আমি জনকন্ঠে। তখনকার সরকারের এক প্রভাবশালী মন্ত্রী ২৭ হাজার কোটি টাকার সম্পদের বিটিটিবি (আজকের বিটিসিএল) মাত্র সাত হাজার কোটি টাকায় কেনার আয়োজন প্রায় চূড়ান্ত করে ফেললেন। আমি রিপোর্ট করলাম, জনকন্ঠে লিড হিসেবে ছাপা হল। তখনকার সরকারের একজন মন্ত্রীপুত্র আমাকে বেশ তিরস্কার করলেন। তারপর তদন্ত হল, এ মিটিং-সে মিটিং হল। আমার রিপোর্ট সত্য প্রমাণ হল। জলের দামে বিটিটিবি কেনার আয়োজন ব্যর্থ হল।......

গত ২৩ মে সমকালে প্রকাশিত বিটিসিএল এর এমওটিএন প্রকল্প নিয়ে আমার একটি রিপোর্ট সম্পর্কে কেউ কেউ এখন দেখছি ফেসবুকে সেই মন্ত্রীপুত্রের সুরেই তিরস্কার করছেন। তারা এ রিপোর্ট দেখে সাংবাদিকতার প্রতি ঘৃনায় নীল হয়ে গেছেন! ...অবশ্য তাদের লেখা থেকে এটা স্পষ্ট হয়েছে তারা প্রকল্পের বিল অব কোয়ান্টিটি সম্পর্কে কিছুই জানেন না, এক্সচেঞ্জ, আইভিএস এবং বৈদ্যুতিক ফ্যানের পার্থক্যও নিজেরা খুজে দেখেননি এবং বোঝেন না, বিটিসিএল কর্তৃপক্ষ গা বাচাতে রিপোর্টের বিরুদ্ধে যে হাস্যকর বক্তব্য প্রচার করছে সেই বক্তব্যের বাইরে নিজেরা কিছুই জানার চেষ্টা করেননি, এ কারণে তাদের বক্তব্য নিয়ে অহেতুক বিতর্কে যাব না... 

বরং অনুরোধ করব অন্তত, আমার রিপোর্টটা ভাল করে আরও একবার পড়ুন এবং নিজের অবস্থানে থেকে আরও ভাল করে খোঁজ নিন। দেখা যাবে, ২০১৬ সালের ১২ মে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেই চিঠি দিয়ে এ প্রকল্পের অতিরিক্ত ব্যয়ের প্রস্তাব সম্পর্কে পর্যালোচনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এই প্রকল্পটি এর আগে একনেক থেকেও প্রত্যাহার করা হয়েছে। সরকারের আরও একাধিক নীতি নির্ধারনী পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীরাও এ প্রকল্পের অতিরিক্ত ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, যার প্রমাণও আমার কাছে আছে। এর অর্থ এটাই, সরকারের নীতি নির্ধারনী পর্যায় কোনভাবেই এ প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারন সম্পর্কিত অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নন, বরং তারা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে এটার প্রতিকারের চেষ্টা করছেন। আমার রিপোর্টটা সেই চেষ্টাকেই সমর্থন করা মাত্র, কারও দিকে অভিযোগের আঙুল তোলা নয়......

আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে এই প্রকল্পের বিওকিউ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে নিবিড় তদন্ত হোক। সঠিক তদন্তের মাধ্যমেই এ প্রকল্পের অস্বাভাবিক ব্যয় নির্ধারন সম্পর্কে প্রকৃত সত্য বের হয়ে আসবে বলে আমার বিশ্বাস। সেই সত্য আমার রিপোর্টের বিরুদ্ধে গেলে তা অবশ্যই মাথা পেতে মেনে নেব.....কিন্তু যারা এখন বিটিসিএল কর্তৃপক্ষের গা বাচানো বক্তব্য শিরোধার্য মেনে নিয়ে ঘৃনায় নীল হচ্ছেন তাদের অনুরোধ করব, প্লিজ আর একটু ভাল করে খোঁজ নিন, প্রকল্পের বিওকিউটা অন্তত ভাল করে পড়ুন....

আরও অনুরোধ করব এখন টেলিযোগাযোগ খাতের রাষ্ট্রায়াত্ত কোম্পানিরগুলোর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে যারা আছেন তাদের সম্পর্কে খোঁজ নিন, হাতের কাছেই অনেক তথ্য আছে, আপনাদের অবস্থান থেকে সে তথ্য পাওয়া কঠিন কিছু নয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধা করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্নের সঙ্গে আপনাদের মতই আমিও একাত্ম ছিলাম, আছি, থাকব......

কিন্তু বিএনপি জামায়াত আমলে বিশেষ সুবিধাভোগী যে ব্যক্তিরা এখনও টেলিযোগাযোগ খাতের রাষ্ট্রায়াত্ত কোম্পানিগুলোর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন, তারা স্বাভাবিকভাবেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ কিংবা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্নের সঙ্গে একাত্ম হতে পারেন না, তারাই চেষ্টা করছেন নানা অপকৌশলে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে, একটা প্রকল্পে অস্বাভাবিক অতিরিক্ত ব্যয় নির্ধারণও তাদের সেই চেষ্টারই অংশ.....

আমার বিশ্বাস, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনেক বিশেষজ্ঞ আছেন। যদি রাষ্ট্রায়াত্ত কোম্পানিগুলো বিএনপি-জামায়াত আমলের সুবিধাভোগী মুক্ত করা যায় এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ব্যক্তিদের রাষ্ট্রায়াত্ত কোম্পানিগুলোর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়ে আসা যায়, তাহলেই এ ধরনের বিতর্কিত অবস্থারও সৃষ্টি হবে না....

(লেখকের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি প্রতিদিন/২ জুন ২০১৭/হিমেল

সর্বশেষ খবর