১৩ জুন, ২০১৭ ১১:৫৫

মামলার সাবজেক্ট ম্যাটারই আমাকে টানছে

শওগাত আলী সাগর

মামলার সাবজেক্ট ম্যাটারই আমাকে টানছে

অভিযুক্ত তিন পুলিশ সদস্য

এই মামলাটা আমি গভীর মনোযোগ দিয়েই ফলো করছি। বিচারপতি নর্ডেইমার বহুল আলোচিত পদ্মাসেতু দুর্নীতি ষড়যন্ত্র মামলার বিচারক ছিলেন বলে নয়, এই মামলার সাবজেক্ট ম্যাটারই আমাকে ভীষণ ভাবে টানছে। মামলাটি আসলে যৌন হয়রানির। তিনজন পুলিশ অফিসার একজন মেয়ের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেছেন মেয়েটির অনুমতি ছাড়া। অভিযোগের বিষয়বস্তু এটি।
মূলধারার মিডিয়া বেশ ফলাও করেই এই মামলার শুনানীর বিবরণী প্রকাশ করছে। অভিযোগ পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে বলেই হয়তো মিডিয়া একটু বাড়তি মনোযোগ দিচ্ছে। আমার মনোযোগ অন্য কারণে।
‘রকি বাই নাইট’ নামে একটা পার্টিতে গিয়েছিলো মেয়েটি। মেয়েটি পেশায় পার্কিং এনফোর্সমেন্ট অফিসার। ভবিষ্যতে পুলিশ অফিসার হবার আগ্রহ তার। ফলে তরুণ পুলিশ অফিসারদের ‘রকি নাইট বাই’ প্রোগ্রামটাকে সে নিয়েছিলো নেটওয়ার্কিং এর একটা সুযোগ হিসেবে।
তিনজন তরুণ পুলিশ অফিসারের একজন মেয়েটির পরিচিত। সেই তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলো। রাত ৯টায় সে তিন পুলিশের সাথে পার্টিতে যোগ দেয়। পার্টি মানে কি? মেয়েটি যেহেতু গেস্ট- পুলিশ অফিসার তার জন্য ড্রিংকস কিনেছে। রাত ৯টা থেকে ঘুরে ঘুরে ‘তিন পুরুষ’পুলিশ অফিসার আর মেয়েটি বিভিন্ন বারে গিয়েছে, ড্রিংক করেছে। স্ট্রিপ বারেও গিয়েছে তারা। এক পর্যায়ে তিনজনের একজন মাতাল হয়ে বমি করতে করতে কাহিল হয়ে পড়ায় আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখা হারবার ক্যাসেলের ওয়েস্টিন হোটেলে চলে গেছে। বাকি দুই অফিসারের সাথে মেয়েটি এরপরও বারে বারে ঘুরেছে, মদ খেয়েছে। রাত বারোটারও অনেকপর দুই অফিসারের সাথে মেয়েটি হোটেল ওয়েস্টিনে গিয়েছে অসুস্থ হয়ে পড়া অফিসারকে দেখতে। আর সেখানেই তিন অফিসার তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেন।
এই ঘটনাটা ঘটেছে ২০১৫ সালে। গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে এ নিয়ে কোনো কথাবার্তা হয়নি। কিন্তু কিছুদিন আগে মেয়েটি অভিযোগ করেন- তিন পুলিশ অফিসার তার সম্মতি ছাড়া তার সাথে যৌন সম্পর্ক করেছে। মামলাটি চলতে পারে কী না- তা নিয়ে আইনি বিতর্ক তোলার চেষ্টা করেছিলেন আইনজীবীরা। কিন্তু বিচারপতি নর্ডেইমার কিছুটা জেদি মানুষ। তিনি এক কথায় সিদ্ধান্ত দিয়েছেন- তিনি এই মামলাটির বিচার করবেন।
আদালতে শুনানী, জেরা যুক্তিতর্ক সবই চলছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে- তিনজন তরুণ অফিসারের সাথে একা একটি মেয়ে রাতের বেলায় বারে মদ খেতে গেলো কেন, স্ট্রিপ বারে গেলো কেন- এই প্রশ্ন কেউ এখন পর্যন্ত তুলেনি। মধ্যরাতের পর মেয়েটি আবাসিক হোটেলের ওই রুমে গেলো কেন- এই প্রশ্নও কেউ তোলেনি। কারণ এই কোনো কিছুই একটি মেয়েকে ধর্ষণ করার অধিকার দেয় না। স্ট্রিপ বারে নগ্ন মেয়েদের নৃত্য দেখতে দেখতে উত্তেজিত হয়ে পড়লেও পাশে বসে থাকা পরিচিত মেয়েটির গায়ে হাত দেওয়ার সুযোগ নেই, আইনে সেটি বারন। এই মামলায় অভিযোগও এটিই। মেয়েটির সম্মতি ছাড়া যৌন সম্পর্ক স্থাপন।
শেষ পর্যন্ত মামলার রায় কি হবে- বলা কঠিন। ধর্ষণের অভিযোগে তিন পুলিশ কর্মকর্তার ছবি দিয়ে প্রতিদিনই খবর বেরেুচ্ছে পত্রিকায়। পুলিশ কর্মকর্তার আইনজীবী জিজ্ঞাসাবাদের সময় মেয়েটিকে ‘বিব্রতকর’ প্রশ্ন করেছিলেন, তা নিয়ে মিডিয়াই এক হাত নিয়েছে ওই আইনজীবীর। আর আদালত তো শুরুতেই নির্দেশ দিয়ে রেখেছে মেয়েটির নাম পরিচয় কোথাও প্রকাশ করা যাবে না।

(লেখকের ফেসবুক পেইজ থেকে সংগৃহীত)

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর