লক্ষ করেছি, খেলায় সাধারণত আমি অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলকে, অপেক্ষাকৃত গরিব দেশের খেলোয়াড়দের সমর্থন করি। অস্ট্রেলিয়া আর ভারত খেললে ভারতকে, ইংল্যান্ড আর শ্রীলঙ্কা খেললে শ্রীলঙ্কাকে, জার্মানি আর কেনিয়া খেললে কেনিয়াকে। কোনও দল আবার খুব বেশি ভালো খেললে অটোমেটিক্যালি তার প্রতি সমর্থন চলে আসে। সে যে খেলার ক্ষেত্রেই হোক। ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, রাগবি, বেসবল, হোয়াটেভার। কে আমার দেশের শত্রু, কে বন্ধু--সেই হিসেব করি না। সেটা রাজনীতির সম্পর্ক। কোনও দেশের শাসকশ্রেণী বা রাষ্ট্রব্যবস্থা আমি পছন্দ না করলে সেই দেশের খেলাকে বা সেই দেশের খেলোয়াড়দের আমার অপছন্দ করতে হবে, তাদের হার চাইতে হবে -- এর কোনও মানে নেই। 

আইসিসি চ্যাম্পিয়নশিপ সেমিফাইনালে ভারত আর বাংলাদেশের ম্যাচে আমি বাংলাদেশকে সমর্থন করেছিলাম, বাংলাদেশে আমি জন্মেছি বলে নয়, বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে গরিব দেশ বলে, এবং বাংলাদেশ দল ভারতের দলের চেয়ে দুর্বল বলে। ফাইনালে পাকিস্তান যখন ভালো খেলছিল, চাইছিলাম পাকিস্তান জিতুক। পাকিস্তানের বর্বর সৈন্যরা আমাদের ৩০ লক্ষ বাঙালিকে হত্যা করেছে, ২ লক্ষ মেয়েকে ধর্ষণ করেছে, পাকিস্তানের শাসকদের এই অন্যায় আমি কোনওদিন ক্ষমা করবো না, তারপরও কিন্তু পাকিস্তানের ক্রিকেট দল ভালো খেললে তাকে সমর্থন না করার পক্ষে আমি কোনও যুক্তি দেখি না।

বাংলাদেশের কিছু দেশপ্রেমিককে দেখলাম পাকিস্তানকে ঘৃণা করি, পাকিস্তানের ক্রিকেট দলকে ঘৃণা করি -- এসব খুব চিৎকার করে বলছে। পাকিস্তান কিন্তু শুধু পাকিস্তানের শাসক এবং সামরিক বাহিনী নয়। পাকিস্তান মানে লক্ষ কোটি সাধারণ মানুষ। যাদের আমাদের মতোই সুখ দুঃখ। পাকিস্তানী সরকারের বিরোধিতা করেও পাকিস্তানী খেলার দলকে সমর্থন করতে পারি। সুস্থ সচেতন মানুষের কোনও দেশ থাকে না, গোটা পৃথিবীটাই তাদের দেশ।

(লেখিকার ফেসবুক পেইজ থেকে সংগৃহীত)

বিডি-প্রতিদিন/২০ জুন, ২০১৭/মাহবুব