২১ জুন, ২০১৭ ২০:১০

অা‌রে‌ফিন স্যার অাপনা‌কে স্যালুট

শরীফুল হাসান

অা‌রে‌ফিন স্যার অাপনা‌কে স্যালুট

অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক

খবরটা দেখে মুগ্ধ হলাম। এই যু‌গের উপাচার্যরা যখন নি‌জের সব প্রাপ্য টাকা নি‌য়ে উল্টো বিশ্ব‌বিদ্যাল‌য়ের অাপ্যায়ন ভাতা, বৈশাখ ভাতা এই ভাতা সেই ভাতা সব অাত্মসাত ক‌রেন, তখন অামাদের অা‌রে‌ফিন স্যার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, গত সাত বছ‌রে বিশ্ববিদ্যাল‌য়ের বি‌ভিন্ন বৈঠ‌কে যোগ দি‌লেও প্রাপ্য এক কো‌টি ২৫ লাখ টাকা নে‌ননি। অাবার কাউকে এই খবরটা ঘূণাক্ষরে জানা‌তেও দেন‌নি।

ত‌বে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট অধিবেশনে বিষয়টি সবার সামনে তুলে ধরেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীন। লিখিত বাজেটবক্তৃতায় ঢাবি কোষাধ্যক্ষ বলেন, ‘'একটি বিষয় উল্লেখ না করে পারছি না এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত প্রো-উপাচার্য, অা‌মি কোষাধ্যক্ষসহ সবাই বিভিন্ন পর্যায়ের সভাসমূহে যোগ দি‌য়ে ‘সিটিং অ্যালাউন্স’ অত্যন্ত আনন্দের সাথে গ্রহণ করেন। শুধুমাত্র আমাদের উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘাটতি কমানোর জন্য কোন সিটিং অ্যালাউন্স গ্রহণ করেননি। ফ‌লে গত সাত বছরে তার প্রাপ্য ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা বিশ্ব‌বিদ্যাল‌য় পে‌য়ে‌ছে। উচ্চ নৈতিকতার জন্য এটা একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত নয় কি?’'

অা‌মি জানি না অতী‌তে কোন‌দিন কোন উপাচার্য এমনটা ক‌রে‌ছেন কী না! বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি ক‌তোটা ভা‌লোবাসা থাক‌লে একজন উপাচার্য এটা ক‌রেন ভা‌বি অা‌মি। শুধু তাই নয়, ভর্তি পরীক্ষায় প্রধান পরীক্ষক হিসে‌বেও উপাচার্য কোনো ভাতা গ্রহণ করেননি। তিনি প্রথম থেকে এই বিষয়টির চর্চা করে আসছেন।

অা‌মি অা‌রে‌ফিন স্যার‌কে ঘ‌নিষ্ঠভা‌বে চি‌নি-জা‌নি গত ১৫ বছর যাবত। অা‌মি যখন ব‌লি বাংলা‌দে‌শে স্যা‌রের ম‌তো উপাচার্য হয় না, তখন কেউ কেউ পাল্টা বিতর্ক তো‌লেন, স্যার না‌কি দলীয় উপাচার্য। অাচ্ছা, দলীয় ছাড়া ক‌বে কোন উপাচার্য এখন এই বাংলা‌দে‌শে নি‌য়োগ পান? কিন্তু দলীয় হ‌য়ে সবাই যেখা‌নে অ‌নিয়মে গা ভা‌সি‌য়ে দেন, দুর্নীত‌ি ক‌রেন, স্যার কিন্তু কোনোটাই ক‌রেন‌নি। বরং সৎ মানুষ হয়েই থেকে গেছেন।

স্যার যখন শুধু শিক্ষকতায়, তখন থে‌কে স্যা‌রের গ্রীণ রোডের বাসায় যাই। বিরোধী দ‌লের পুরো সময়টা স্যার‌কে দে‌খে‌ছি। স্যার উপাচার্য হওয়ার পরও মা‌ঝে ম‌ধ্যে যাই গল্প কর‌তে। শুধুই গল্প। তখন দে‌খে‌ছি নানাজন নানা স্বার্থ নি‌য়ে স্যা‌রের কা‌ছে যান। অামিও খুব বড় গলায় বল‌তে পা‌রি, গত ১৫ বছ‌রে অা‌মি কোনোদিন নি‌জের কোনো স্বার্থ নি‌য়ে কিংবা শিক্ষক, কর্মকর্তা হ‌বো ব‌লে স্যা‌রের কা‌ছে যাই‌নি। বা‌কি জীবনেও যেন যেন যেতে না হয়।

কথাগু‌লো বলার কারণ ‌যে‌হেতু কোনো স্বার্থ অামার নেই অামি নির্ম‌োহভা‌বে বল‌ছি, অামার দেখা একজন অসাধারণ মানুষ অা‌রে‌ফিন স্যার। কিন্তু অসাধারণ হ‌য়েও খুব সাধারণ জীবন যাপন ক‌রেন। এই বিশ্ববিদ্যাল‌য়ের অ‌নেক পরিচালক থে‌কে শুরু ক‌রে সদ্য যোগ দেয়া কর্মকর্তা বা শিক্ষকের কা‌ছে যখন ছাত্র‌দের যে‌তে কষ্ট হয় তখন স্যা‌রের দরজা সবসময় খোলা। মস‌জিদে জুমার নামাজে সবাই যখন অা‌গে দাঁড়ান, স্যার বাই‌রে মা‌টি‌তে ব‌সে নামায প‌ড়েন।

অাজ যখন জানলাম এই বাংলা‌দে‌শের স‌চিব, অামলা কামলা শিক্ষক - প্রায় সবাই যখন মি‌টিং ক‌রেই টাকা নেন, বা টাকার জন্য মি‌টিং ক‌রেন তখন অাম‌া‌দের অা‌রে‌ফিন স্যার উল্টো নিজের টাকা বিশ্ব‌বিদ্যালয়কে দেন।

অামার দেখা সেরা মানুষ‌দের একজন অা‌রে‌ফিন স্যার। অাপনা‌কে স্যালুট, স্যার!

লেখক : সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফিল্ম সোসাইটি।

(শরীফুল হাসানের ফেসবুক পেইজ থেকে সংগৃহীত)

বিডি প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন

সর্বশেষ খবর