ষোড়শ সংশোধনীর রায় দিতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি রাজনীতি, সমাজ এবং শাসন ব্যবস্থা নিয়ে তার মতামত দিয়েছেন। মতামত হিসেবে দেওয়া সেই সব বক্তব্য নিয়ে সরকারের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। ক্ষোভ বিক্ষোভও তৈরি হয়েছে। ভালো কথা। কোনো বক্তব্য কারো বিপক্ষে গেলে তিনি বা তারা ক্ষুব্ধ হন- এটি বাংলাদেশের সংস্কৃতি। রাজনীতিক কিংবা সরকারও তার বাইরে নয়।
মজার ব্যাপার হচ্ছে- প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সরকার সমর্থকরা এগুলোকে এখতিয়ার বহির্ভূত হিসেবে অভিহিত করছেন। কিন্তু প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের কোনো অংশ ভুল কী না সেটা বলছেন না, তথ্যগত কোনো অসঙ্গতি আছে কী না – সেটা তারা বলছেন না। তা হলে?
প্রধান বিচারপতির বক্তব্যে কোনো ভুল থাকলে সেটি নিয়ে সরাসরি কথা বলা উচিত। কিন্তু প্রধান বিচারপতি শাসন ব্যবস্থায় কোনো অসঙ্গতি দেখলে, সমাজ রাজনীতিতে কোনো অন্যায় দেখলে সেটি নিয়ে কথা বলতে পারবেন না কেন? কেবল পক্ষে গেলে বাহবা দেবেন, সমালোচনা করলে তেড়ে আসবেন- এটি কোনো ভালো নীতি নয়।ষোড়শ সংশোধনীর রায় প্রকাশের পর আদালতের রায়ে যে মন্তব্যগুলো করা হয়েছে সেগুলো প্রতিকারের উপায় নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত ছিলো, করণীয় নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত ছিলো। কিন্তু সেদিকে কেউ যাচ্ছেন না।
আদালত যে সব মন্তব্য করেছে- সেগুলো নিয়ে জনমত জরিপ করে দেখেন তো, প্রয়োজনে গণভোট করে দেখেন তো। দেশের সিংহভাগ আমজনতা কিন্তু এই কথাগুলোর পক্ষেই রায় দেবে। যারা দলীয় আনুগত্যে অন্ধ- তাদের কথা আলাদা। দলান্ধদের একটি অংশ মনে করছে- প্রধান বিচারপতি কেন সরকারের সমালোচনা করবে। দলান্ধদের আরেক অংশ আদালতের রায়ে সরকারের পতনের স্বপ্ন দেখছে। দু'টি অংশই বিভ্রমের মধ্যে আছে। প্রধান বিচারপতি বিবেকতাড়িত হয়ে বিবেকের ভূমিকা পালন করেছেন মাত্র। তিনি সরকারকে ফেলে দিতে চাচ্ছেন না। প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার হাত দিয়েই সাকা চৌধুরীর মতো দুর্ধর্ষ যুদ্দাপরাধীর ফাসিঁর রায় হয়েছে- এটা যেন আমরা ভুলে না যাই।
বিচারলয়কে হুমকি ধমকি দিয়ে, কর্তৃত্ব দেখানোর যে প্রক্রিয়া সেটি সুস্থ কোনো আচরণ নয়। রাষ্ট্রকে, সমাজকে, রাজনীতিকে সুস্থধারায় ফিরিয়ে আনতে আদালতের রায়ে প্রকাশিত মন্তব্যগুলো বরং সহায়ক ভূমিকাই রাখতে পারে। রাষ্ট্রকে সহনশীল হতে হয়, সভ্যতার শিক্ষা কিন্তু এটাই।
(লেখকের ফেসবুক পেইজ থেকে সংগৃহীত)
বিডি-প্রতিদিন/০৮ আগস্ট, ২০১৭/মাহবুব